চট্টগ্রাম

পুকুরে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ

নগরীর উত্তর কাট্টলী এলাকার বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন একটি মৎস্য হ্যাচারির পুকুরে ধরা পড়েছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। তাতে হতবাক হ্যাচারি মালিক, স্থানীয় লোকজন ও মৎস্য কর্মকর্তারা। অবিশ্বাস করার মতো পুকুরের ইলিশ দেখতে ভীড় জমাচ্ছেন নানা শ্রেণির মানুষ।

নগরীর উত্তর কাট্টলী এলাকার বেড়িবাঁধ সংলগ্ন সাগর পাড়ে মেসার্স আরবান ফার্মস’র অবস্থান। জনৈক ফয়সাল আসিফ রহমানসহ বেশ কয়েকজনের যৌথ মালিকানায় পুকুর রয়েছে ১৩টি। এর মধ্যে আনুমানিক ১২০ শতক আয়তনের একটি পুকুরে প্রায় চার মাস আগে মৎস্য চাষের জন্য সাগর থেকে লবণ পানি প্রবেশ করানো হয়। পানি প্রবেশের পর পুকুরের টেকনিশিয়ান আবু তৈয়ব পুকুরের পানিতে কিছু কিছু ডিম দেখতে পান। তার ১০ থেকে ১৫ দিন পর দেখা যায় পুকুরে অজস্র রেণু। তারও মাসখানেক পর রেণুগুলো বড় হয়ে ওঠে, দেখতে অনেকটা ‘চামিলা’ মাছের মতো।

এরপর নানা সন্দেহবশতঃ টেকনিশিয়ান আবু তৈয়ব চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য অফিসে যোগাযোগ করেন। তাতে সাড়া দিয়ে কয়েকদিন আগে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ সরেজমিনে পুকুরটি দেখতে যান। ওইসময় পুকুরে জাল ফেললে ধরা পড়ে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। প্রতি জালে আসতে থাকে কয়েক হাজার জাটকা ইলিশ। এসব জাটকা ইলিশের ওজন সর্বনিম্ন ৩০ গ্রাম থেকে সর্বোচ্চ ১০০ গ্রাম। পরে এগুলো পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়।

জানতে চাইলে পুকুরের টেকনিশিয়ান আবু তৈয়ব বলেন, ‘মেসার্স আরবান ফার্মস এর ১৩টি ছোট-বড় পুকুর রয়েছে। সবগুলো পুকুরের অবস্থান আশপাশের এলাকায়। এসব পুকুরে সামুদ্রিক কোরাল, চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের চাষাবাদ করা হয়। এছাড়া কিছু কিছু পুকুরে মিঠা পানির রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউশসহ বিভিন্ন জাতের মাছেরও চাষাবাদ করা হয়।

গত চার মাস আগে সাগর পাড়ের একটি পুকুরে জোয়ারের পানি প্রবেশ করানো হলে তাতে কিছু কিছু ডিম ভাসতে দেখি। ১০ থেকে ১৫ দিন পর দেখি পুকুরে অজস্র রেণু। তারও মাসখানেক পর রেণুগুলো বড় হয়ে ওঠে, দেখতে অনেকটা ‘চামিলা’ মাছের মতো। চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য অফিসে যোগাযোগ করলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ কয়েকদিন আগে সরেজমিনে পুকুরটি দেখতে আসেন। তার সামনে পুকুরে জাল ফেললে ধরা পড়ে হাজার হাজার জাটকা ইলিশ। এগুলোর সাইজ তিন থেকে চার ইঞ্চি, পরে এসব ইলিশ পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। বর্তমানে এগুলো আরো বড় করতে পরিচর্যা করা হচ্ছে।’

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ বলেন, ‘পুকুরে জোয়ারের পানি প্রবেশের সময় ইলিশের নিষিক্ত ডিম বা লার্ভা ঢুকে পড়ে। পরে এগুলো বড় হয়ে জাটকা সাইজ হয়ে উঠেছে। আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি পুকুরের পানি লবণাক্ততার পরিমাণ প্রতিলিটার পানিকে তিন পিপিটি। তবে সমুদ্রের পানিতে লবণের পিপিটি থাকে আরো বেশি। এ কারণে আমরা টেকনিশিয়ান আবু তৈয়বকে পরামর্শ দিয়েছি, পুকুরে লবণ পানির গভীরতা বাড়াতে। তাছাড়া পুকুরে অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে এরেটর মেশিন লাগাতে বলেছি। যাতে জাটকা ইলিশ ধীরে ধীরে বড় হতে পারে।’

শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ বলেন, ‘জাটকা ইলিশ ভর্তি পুকুরটি এখন মৎস্য বিভাগের গবেষণার ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। এ পুকুরে জাটকা ইলিশগুলো বড় করতে পারলে একটা নতুন অভিজ্ঞতা পাওয়া যাবে। তাতে উপকৃত হবে মৎস্য বিভাগ।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *