বনের জমি-গাছ গিলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান
দুপাশে হাজার হাজার একর সবুজ বাগান। মাঝখানে সবুজের বুক চিরে হয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান! কেরানীহাট-বান্দরবান সড়কের সাতকানিয়া উপজেলার বাজালিয়া হলুদিয়ার মইন্যার টেক এলাকায় কাঁচা পাকা স্থাপনা করে গড়ে তুলছেন গাড়ি ওয়াশের বিরাট দোকান। অথচ তাঁর অদূরেই বনবিভাগের বিট কার্যালয় আর চেকপোস্ট। বনের জমি-গাছ গিলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পাহাড়ের সামান্য ঢালুতে কয়েক একর জায়গায় প্রায় আরসিসি ঢালাইয করে ২ হাজার বর্গফুটের পার্কিংয়ের স্থান গড়ে তোলা হয়েছে।এর দক্ষিণের শেষ অংশে টিন সেডের উত্তর মুখী লম্বা করে ৫-৬শ বর্গ ফুটের আরো একটি স্থাপনা। পশ্চিম উত্তর কোণে একটি পানির ট্যাংক বসানোর জন্য কলাম করে স্লাব নির্মাণ হয়েছে। স্লাবের উপরে বসানো হয়েছে পানির ট্যাংক। বিদ্যুতের সংযোগও নেয়া হয়েছে। বনের জায়গা গিলে করা গাড়ি ওয়াশ সেন্টার পুরোপুরি প্রস্তুত।
এছাড়া বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের প্রবেশমুখে পশ্চিম থেকে মইন্যার টেক হয়ে হলুদিয়া পর্যন্ত বনের বেশিরভাগই পাহাড় দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় লোকজন দখল করে রেখেছেন। তারা এসব সরকারি জায়গা দখলস্বত্ব বিক্রি করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। হলুদিয়া থেকে মইন্যার টেক পর্যন্ত সড়কের দক্ষিণে বাগানের ভেতর অবৈধভাবে অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি গড়ে উঠেছে।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ বনবিভাগের কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময়ে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে বনের জায়গায় ঘর নির্মাণে সুযোগ করে দেন। তাদের টাকা না দিয়ে সেখানে কেউ ঘর তুলতে চাইলে সেটি ভেঙে দেয়ার হুমকি দিয়ে টাকা আদায় করেন।
গত এক দশকে বড়দুয়ারা বনবিটে চিতামুরা, মাহালিয়া ও হলুদিয়া এলাকায় শত শত একর পাহাড় ও বাগান জবর দখলের ঘটনা ঘটেছে— ভাষ্য স্থানীয়দের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোহাম্মদ জাহেদ নামে এক ব্যক্তি এই স্থাপনা গড়ে তুলছেন। তাঁর বাড়ি বাজালিয়া বড়দুয়ারা সিকদার পাড়ায়, তিনি ওই এলাকার মুহাম্মদ ইউনূসের ছেলে। তাঁর বিরুদ্ধে বন বিভাগের একাধিক জায়গা দখল ও সরকারি গাছ কেটে নেয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি।
এ ব্যাপারে গাড়ি ওয়াশ সার্ভিসের মালিক মোহাম্মদ জাহেদ বলেন, মইন্যার টেকে বনবিভাগের কোনো জায়গা আমি দখল করিনি। এটা ভিলেজার জায়গা। আমাদের খতিয়ানভুক্ত পারিবারিক জায়গা। গত ১৫ বছর ধরে সেখানে আম বাগান আছে আমাদের। সরকারি গাছ ও পাহাড় কাটার সাথে আমি জড়িত নই। স্থানীয় চেয়ারম্যানের সাথে আমার দূরত্ব থাকায় তিনি আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করছেন বলে ধারণা।
বাজালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান তাপস কান্তি দত্ত বলেন, মইন্যার টেকে বনবিভাগের জায়গা দখল করে জাহেদ নামের এক লোক স্থাপনা করেছেন। বনের জায়গাতে স্থাপনা করা যায়না। বনবিভাগের লোকজন এটা কিভাবে করতে দিল? আমি প্রশাসনকে অনুরোধ করবো এসব বনের জায়গা জবর দখলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমি চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগে যোগদানের পর বিষয়টি খরব নিয়ে জেনেছি, স্থাপনাটি প্রায় আড়াই বছর আগে হয়েছে। তদন্ত করে যদি বনের জায়গায় হয় তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে বক্তব্য নেয়ার জন্য বাজালিয়া বড়দুয়ারা ফরেস্ট বিট কাম চেক স্টেশনের কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।