চট্টগ্রামবাঁশখালী

বাঁশখালী পৌরসভায় রাতের আঁধারে দুই’শ বছরের পুরোনো পুকুর ভরাট

চট্টগ্রামের বাঁশখালী পৌরসভার তিনশ’ মিটার দূরবর্তী মিয়ার বাজার সংলগ্ন এলাকায় দুই’শ বছরের পুরাতন দারোগা পুকুরটি রাতের আঁধারে ভরাট করে ফেলা হচ্ছে। প্রতি রাতে পাহাড়ি মাটি ও জমির টপ সয়েল কেটে ট্রাকে করে ফেলা হচ্ছে পুকুরে। ৫ একর আয়তনের এই পুকুরটি ব্যবহার করতেন স্থানীয় হাজারো বাসিন্দা। বনবিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের নীরবতায় ক্ষুব্ধ তারা। ভূমি দস্যুরা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ প্রতিবাদের সাহস পাচ্ছেন না।

গত শুক্রবার সরজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে, পুকুরের দুই তৃতীয়াংশ ভরাট করে ফেলা হয়েছে। একইসাথে এক’শ গজ দূরে ব্রিটিশ আমলে আট একরের জায়গায় খননকৃত কাজী পুকুরটিও ভরাটের প্রস্তুতি চলছে।

এলাকাবাসী জানিয়েছেন, পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ত্রিপুরা চরন দের মালিকানাধীন পুকুরটি হাজার হাজার নারী পুরুষ নিত্যকাজে ব্যবহার করে আসছিলেন। ত্রিপুরা চরনের ছেলেরা পুকুরটির মালিকানা বিক্রি করে দিলে নতুন মালিক আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিলে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান নির্মাণের জন্য মাটি ভরাট শুরু করে। এর আগে জলদি মিয়ার বাজারে মুন্সি পুকুরটি ভরাট করে মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছিল। বাজারের তিন শতাধিক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠা বিগত দিনে অগ্নি দুর্ঘটনায় দারোগা পুকুরের পানি ব্যবহার করেছে। বর্তমানে আধা কিলোমিটার এলাকার মধ্যে দারোগা পুকুর ও কাজী পুকুর ছাড়া আর কোন জলাশয় নেই ।

স্থানীয় জলদি মিয়ার বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, নির্বাচনের সময় সাধারণ মানুষের ব্যস্ততার সুযোগ নিয়ে ভূমি দস্যুরা রাতের অন্ধকারে পাহাড় কেটে লাল মাটি ও ধানি জমির উপরি অংশ কেটে নিয়ে পুকুর ভরাটের কাজ শুরু করে। শত বছরের পুকুরটি ভরাট হলে এলাকার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়বে। স্থানীয় মাটি ব্যবসায়ী টিপু ও শহীদুল্লাহ বর্তমান মালিক মো. হুমায়ুনের সাথে চুক্তি করে পুকুর ভরাটের কাজ চালিয়ে আসছে। এ বিষয়ে স্থানীয় লোকজন সোস্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ ও পুরাতন পুকুরটির ভরাট বন্ধের দাবি জানিয়ে আসলেও ভূমি দস্যুদের ভয়ে সরাসরি মুখ খুলতে পারছেন না। এই কাজে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. ইসহাকও জড়িত আছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে বিষয়টি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন কাউন্সিলর ইসহাক।

মাটি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ টিপু বলেন, ‘আমি কয়েক গাড়ি মাটি ফেলেছি। বাকি মাটি কে ফেলেছে জানি না।’ কালীপুর রেঞ্জের চেচুরিয়া বিট কর্মকর্তা পাহাড় কাটার বিষয়ে মামলা হয়েছে বলে জানান।

বাঁশখালী ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার আযাদুল ইসলাম বলেন, ‘পুকুর ভরাট সম্পূর্ণ নিষেধ। আগুন নিয়ন্ত্রণে একমাত্র ভরসা পুকুরের পানি।’

বাঁশখালী পৌর মেয়র এডভোকেট তোফাইল বিন হোছাইন বলেন, ‘বিষয়টি আমি গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার বলেন, পুকুর ভরাটের বিষয়টি জানার পর লোকজন পাঠিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পুলিশ প্রশাসনকেও এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *