জাতীয়পার্বত্য চট্টগ্রাম

বান্দরবান-২৭ আ.লীগে নির্বাচনী প্রস্তুতি, বিরোধে বিএনপি

বান্দরবান জেলার একমাত্র সংসদীয় আসনটি তিন দশক ধরে রয়েছে আওয়ামী লীগের হাতে।পরপর ছয়বার সংসদ সদস্য হয়েছেন বীর বাহাদুর উশৈসিং, যিনি দলের জেলা কমিটির নির্বাহী সদস্য এবং পার্বত্যবিষয়ক মন্ত্রী।জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন তাঁরই সম্বন্ধী এবং জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমা।বীর বাহাদুরকে দলের একক প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে আওয়ামী লীগ।

১৯৯১ সাল থেকে কোন্দল চলে আসছে বিএনপির দুটি পক্ষের মধ্যে। এক পক্ষে আছেন জেলা কমিটির সভাপতি মাম্যাচিং মারমা, অন্য পক্ষে আছেন সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সদস্য সাচিংপ্রু জেরী। তাঁরা সম্পর্কে মামি-ভাগনে।

বান্দরবানে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল জনসংহতি সমিতিরও (জেএসএস) বেশ প্রভাব রয়েছে। তবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বান্দরবানে কোনো প্রার্থী দেওয়ার কথা ভাবছে না সংগঠনটি।

নির্বাচনের প্রস্তুতি আওয়ামী লীগে- জেলায় আওয়ামী লীগে প্রকাশ্যে কোনো কোন্দল না থাকলেও উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটি নিয়ে একটি অংশের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, উপজেলা-ইউনিয়নে গঠনতন্ত্র মেনে কমিটি করা হচ্ছে না। নির্বাচিত কমিটি না হওয়ায় পদ-পদবি পাওয়া ব্যক্তিরা, তাঁদের যে বা যাঁরা পদে বসিয়েছেন, তাঁদের স্তুতি করতে ব্যস্ত।

যদিও তৃণমূলের এই ক্ষোভ নিয়ে মাথাব্যথা নেই জেলার নেতাদের। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ক্যশৈহ্লা মারমা বলেন, সবখানেই গঠনতন্ত্র মেনে কমিটি করা হয়েছে। দলে কোনো বিশৃঙ্খলা নেই।জেলার বর্ধিত সভায় বীর বাহাদুর উশৈসিংকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য দলের একমাত্র প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়েছে। তাঁর পক্ষে নির্বাচনের প্রস্তুতিও চলছে।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লক্ষ্মীপদ দাশ বলেন, সুশৃঙ্খল নির্বাচন পরিচালনা ও ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি করারও চিন্তাভাবনা চলছে।

বিএনপিতে মামি-ভাগনের বিরোধ- বোমাং রাজপরিবারের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের প্রভাব পড়েছে জেলা বিএনপির রাজনীতিতে। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বান্দরবান থেকে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন রাজপরিবারের সদস্য কে এস প্রু চৌধুরী। এ সময় রাজপরিবারের আরেক সদস্য, তৎকালীন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাচিংপ্রু জেরী তাঁর বিরোধিতা করেন। নির্বাচনে পরাজিত হয়ে কে এস প্রু আওয়ামী লীগে যোগ দিলে জেলা বিএনপির সভাপতি হন সাচিংপ্রু জেরী। তখন সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন রাজপরিবারের অপর পক্ষের মাম্যাচিং মারমা। বিরোধ পরবর্তী কয়েক দশক ধরে নির্বাচন এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রতিফলিত হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনে এই বিরোধের জেরে দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করা কিংবা পাল্টা প্রার্থী দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে প্রায় প্রতিবার।

বিরোধ নিরসনের অংশ হিসেবে সাচিংপ্রু জেরীর নেতৃত্বের জেলা কমিটিকে ভেঙে দিয়ে ২০১৭ সালের ২ মার্চ ২১ সদস্যের আংশিক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে মাম্যাচিং মারমাকে সভাপতি ও জাবেদ রেজাকে সাধারণ সম্পাদক করে এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার নির্দেশনা দেয় কেন্দ্র। তবে এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। আংশিক ওই কমিটি থেকে সাচিংপ্রু জেরীর অনুসারী ১৫ জন সদস্য পরে সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নেন। বর্তমানে পৃথকভাবে দলীয় কর্মসূচি পরিচালনা করছে দুই পক্ষ।

মাম্যাচিং মারমা বলেন, সাচিংপ্রু জেরীর ক্ষমতার লোভ ও ক্ষমতাসীন দলের কলাকৌশলের কারণে বিএনপি ঐক্যবদ্ধ হতে পারছে না। তবে নির্বাচনে সবাই দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন, ভবিষ্যতেও করবেন।

সাচিংপ্রু জেরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জেলা বিএনপির কার্যক্রম সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করবেন না বলে জানান।

সাচিংপ্রু পক্ষের নেতা ও জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ওসমান গনি বলেন, মূল সমস্যা হচ্ছে জাবেদ রেজার ‘গায়ে মানে না আপনি মোড়ল’ ধরনের আচরণ ও ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে তাঁর গোপন সখ্য। দলের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম জ্যেষ্ঠ-কনিষ্ঠ নেতা-কর্মীরা কেউ তাঁর সঙ্গে নেই। জেলার মূলধারার বিএনপি সাচিংপ্রু জেরীর সঙ্গে রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *