বাবাকে সম্মানিত করতে পেরে আবেগাপ্লুত রুনা খান
গতকাল অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো ‘গর্বিত বাবা অ্যাওয়ার্ড ২০২৪’। বিশ্ব বাবা দিবস আগামী ১৬ জুন হলেও ঈদুল আযহার মৌসুমের কারণে দুদিন আগেই একটি পাঁচ তারকা হোটেলে তুলে দেয়া হয় ২৫ জন গর্বিত বাবার হাতে সম্মাননা স্মারক। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল সন্তানদের বাবারা পেলেন এই সম্মাননা। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী রুনা খানের বাবাও পেয়েছেন এই পুরস্কার।
বাবাকে সম্মানীত করতে পেরে আবেগাপ্লুত রুনা খান। আজ তিনি সেই পুরস্কার অনুষ্ঠানের ছবি প্রকাশ করে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘৯০-এর দশকের তুমুল জনপ্রিয় অভিনেতা তৌকির আহমেদ। বুয়েট পাশ করা প্রকৌশলী, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন পরিচালক, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার, কাহিনীকার, সংলাপ রচয়িতা হিসেবে একাধিক বার। আন্তর্জাতিক বহু পুরস্কারও আছে তার অর্জনে। শিক্ষা, জনপ্রিয়তা, পরিবার, দেশী-বিদেশী স্বীকৃতি, এত এত অর্জন। এক সাক্ষাৎকারে তৌকির ভাইকে নরম-ভেজা গলায় বলতে শুনেছিলাম, ‘আমার বাবা এসব কিছুই দেখে যেতে পারেন নি!’’
রুনা এরপর লেখেন, ‘টাংগাইল জেলার মির্জাপুরের মসদই গ্রামের যে পাড়ায় (কাজী-পাড়া) আমার আব্বু আর আমার জন্ম, সেই পাড়ায় আব্বু প্রথম ব্যাক্তি যিনি এসএসসি পাশ করেন। আমি প্রথম মেয়ে যে ঐ পাড়া শুধু নয়, বাবা-মায়ের দুই দিকের পরিবারে প্রথম মেয়ে যে মাস্টার্স পাশ করি! কাছের আত্মীয়দের অনেকেই বহুবার আব্বুকে বলেছে মেয়ে লেখাপড়া করিয়ে কি হবে বিয়ে দিয়ে দাও। আমার সহপাঠী-প্রতিবেশী বহু মেয়ের পুরো জীবন কাটছে গোয়াল ঘরের গোবর পরিস্কার করে আর ৫০-১০০ মণ ধান সেদ্ধ করা গেরস্থালী বাড়ীর বৌ ৪-৫ সন্তানের মা। কেউ-কেউ নানীও হয়ে গেছে ৪০-৪২ বছর বয়সে! সেখানে জন্মে আমি ১০-১১ বছর বয়সে স্বপ্ন দেখতাম, একদিন আমি অভিনয় করবো! আমার বাবা-মা আমাকে বিশ্বাস করেছিলেন শুধু!’
আমার জানা মতে, মির্জাপুর থানার আমিই প্রথম এবং একমাত্র মানুষ (নারী-পুরুষ উভয়ের মধ্যে) এবং টাংগাইল জেলার প্রথম এবং একমাত্র মানুষ (নারীদের মধ্যে) যে অভিনয় ক্ষেত্রে জন্য সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছে! মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন আমার গলায় স্বর্ণপদক পরিয়ে দেন, দর্শকসারিতে আমার ৯ বছরের কন্যা, কন্যার বাবা, আমার মা-বাবা বসে বসে দেখছেন!
তৌকির ভাই, আমার বাবা সচক্ষে-স্বশরীরে আমার ব্যাক্তি-কর্ম জীবনের সব অর্জন-সুখ দেখেছেন। এখানে প্রকৃতি আপনার চাইতে আমার প্রতি একটু বেশী সদয় হয়েছে এটাই মনে হয়েছিলো সেদিন আপনার সাক্ষাৎকার দেখে!
পুরস্কার-স্বীকৃতি নিয়ে বিতর্ক থাকে। তবে এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে শর্মীমালা, সানজিদা প্রীতি, ফারজানা ছবি, নাজনীন চুমকি, বাঁধন, রুনা খানের মত অভিনয়কর্মীরা যখন পুরস্কৃত হয়, তখন পুরস্কার বির্তকের উর্দ্ধে উঠতে চায়!
বাবা-মা আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন, অন্যায় করো না, শঠতা করো না, কোন প্রাণের শরীরে-মনে কষ্ট দিও না। বোধ হবার পর থেকে করিনি-করবোওনা কখনো! ‘গর্বিত বাবা’ পদকে আমার আব্বুকে সম্মানিত করবার জন্য আয়োজনটির সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ।
আব্বু চোখে এখন খুব কম দেখেন, ডিমেনশিয়া, কিছুই মনে রাখতে পারেন না। পারলে আমার আব্বুর জন্য শুভকামনা রাখবেন। ধন্যবাদ…