বিএনপি নেতাদের উপস্থিতিতে দামি গাড়ি সরানো নিয়ে রহস্য!
চট্টগ্রামের একটি ওয়্যারহাউস থেকে বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল গাড়ি গোপনে সরিয়ে নেয়ার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করেছেন, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে নগরীর কালুরঘাট শিল্প এলাকার একটি ওয়্যারহাউস থেকে এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন গাড়িগুলো সরিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম উপস্থিত থেকে গাড়ি সরানোর বিষয়টি তদারকি করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, গাড়িগুলোর মধ্যে বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ এবং অডি ব্র্যান্ডের গাড়িও রয়েছে। গাড়িগুলোর ভেতরে বড় অংকের টাকা ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তবে এগুলোর চূড়ান্ত গন্তব্য কোথায় ছিল তা জানা যায়নি।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিও প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও খবরে বলা হচ্ছে এস আলমের ওয়্যারহাউস থেকে বের করা হচ্ছে দামি গাড়ি। কিন্তু বাস্তবে আমি গিয়েছিলাম নগরীর কালুরঘাট শিল্প এলাকায় মীর গ্রুপের ওয়্যারহাউসে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মীর গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম এবং আমি মামাতো-ফুপাতো ভাই। সালাম ভাই আমাকে ফোন করে জানিয়েছেন বিএনপির কিছু ছেলে তার কাছে চাঁদা দাবি করেছে। তাই আমি বিএনপি নেতা সুফিয়ান ভাইকে সঙ্গে নিয়ে কালুরঘাট শিল্প এলাকায় (বিসিক) মীর গ্রুপের মালিকানাধীন একটি ওয়্যারহাউসে যাই। সেখানে গাড়িগুলো কাদের ছিল তা আমি জানি না। আত্মীয়তার কারণে সালাম ভাইকে সহযোগিতা করতে সেখানে গিয়েছিলাম।’
এনামুল হক আরও বলেন, ‘মীর গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুস সালামের মেয়ের সঙ্গে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের মেজ ছেলের বিয়ে হয়েছে। সেই সূত্রে তারা আত্মীয়। নিরাপত্তার জন্য তাদের ওয়্যারহাউসে এস আলমের গাড়ি রাখতেই পারে। এতে কোনো দোষ দেখছি না।’
এ ব্যাপারে দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এমন কোনো ঘটনা আমার জানা নেই। আমি কোনো ওয়্যারহাউসেও যাইনি। তবে ওইদিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে এনামুল হক এনামের অনুরোধে আমি তার মামাতো ভাই মীর গ্রুপের আবদুস সালামের মীর পাল্পের কারখানায় যাই। সেখানে বিএনপির পরিচয়ে কয়েকজন চাঁদা চাইতে গিয়েছিল। আমরা গিয়ে সেটা মিটমাট করে দিয়ে আসি।’
এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, বিতর্কিত এস আলম গ্রুপ বিভিন্ন ব্যাংকের গ্রাহকদের টাকা লুট করে যে সহায় সম্পত্তি গড়েছে তা এখন গোপনে বিক্রি করতে চাচ্ছে। সেই সম্পত্তি কোনও সচেতন মানুষের কেনা উচিত হবে না। এস আলমের কোনও সম্পত্তি কিনে বিপদে পড়লে তার দায় সরকার নেবে না।
তিনি আরও বলেন, এস আলমের সম্পত্তি বিক্রি করে আমরা গ্রাহকদের তথা আমানতকারীদের বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবো। বুধবার (২৮ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স রুমে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
গভর্নর বলেন, শোনা যাচ্ছে বাজেয়াপ্ত হওয়ার ভয়ে গোপনে সম্পদ বিক্রি করে দিচ্ছে এস আলম গ্রুপ। আইনি জটিলতার কারণে এখনি হস্তক্ষেপ করতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে শিগগিরই আইনি উপায় খুঁজে বের করা হবে। তাই সর্বসাধারণকে সাবধান করা হচ্ছে, এস আলম গ্রুপের সম্পদ কেউ কিনবেন না। সাংবাদিকদের মাধ্যমে আমি হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি। এসব সম্পদ জনগণের। এখানে কেউ হাত দেবেন না।
উল্লেখ্য, এস আলম গ্রুপ ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সব ব্যাংকের লেনদেন ঋণ স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।