চট্টগ্রাম

বুটিক ব্যবসা-টিউশনিতেই কোটিপতি এএসপিপত্মী!

শিক্ষকতা করেছেন তিন বছর। একইসঙ্গে করতেন টিউশনিও। পাশাপাশি পরিচালনা করেছেন বুটিক হাউস। এ তিন পেশায় যুক্ত থেকে গড়েছেন প্রায় কোটি টাকার সম্পদ। এছাড়াও স্বামীর সঙ্গে যৌথ মালিকানায় নগরীর খুলশীতে রয়েছে চার তলা বাড়িও। অথচ ব্যবসার কোন অস্তিত্বই নেই। মূলত স্বামীর অবৈধ আয় বৈধ করতে ব্যবসায়ী ও শিক্ষকতার ফন্দি আঁটেন ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল পুলিশের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত এএসপি আবুল হাশেমের স্ত্রী তাহেরিনা বেগম।

যদিও শেষ পর্যন্ত রক্ষা হয়নি পুলিশের সাবেক এ কর্মকর্তা ও তার স্ত্রীর। অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আলোচ্য পুলিশ দম্পত্তির বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরমধ্যে এএসপি আবুল হাশেমকে দুটি মামলায় আসামি করা হয়। একটিতে আসামি করা হয় স্ত্রী তাহেরিনা বেগমকে।

গতকাল (বৃহস্পতিবার) দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-১ এ পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়। দুদকের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-২ এর সহকারী পরিচালক মুসাব্বির আহমেদ বাদী হয়ে মামলা দুটি দায়ের করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন দুদক চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-২ এর উপ-পরিচালক মো. আতিকুল আলম। তিনি বলেন, ৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপন এবং ১৮ লাখ ৬০ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আবুল হাশেমের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে। আরেক মামলায় আবুল হাশেম ও তাঁর স্ত্রী তাহেরিনা বেগমকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় ৬ লাখ ৮৪ হাজার টাকার তথ্য গোপন এবং ৪৩ লাখ ৩২ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করা হয়েছে এজাহারে।

১৯৮৮ সালে উপ-পরিদর্শক (এসআই) হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন রাউজানের আবুল হাশেম। ২০২২ সালে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এসপি) পদে থাকাকালে তিনি চাকরি থেকে অবসরে যান। আবুল হাশেম ও তার স্ত্রী খুলশী থানার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট সড়কে রূপসী হাউজিং আবাসিক এলাকার পাঁচ কাঠা জায়গার ওপরে চারতলা ভবন তৈরি করেন। বর্তমানে তারা সেখানে থাকেন।
দুদক কর্মকর্তারা জানান, ২০১৫ সালে খুলশীর রূপসী হাউজিং সোসাইটি এলাকার চারতলা বাড়ি নির্মাণ করলেও ওই সময় তাঁর স্ত্রীর কোনো আয় ছিল না। স্ত্রীর আয় দিয়ে বাড়িটি নির্মাণ করেছেন এমনটি বোঝানোর জন্য স্ত্রীকে সাজিয়েছেন বুটিক ব্যবসায়ী। এছাড়াও স্ত্রী টিউশনি করেছেন এমন দাবিও করেন। কিন্তু দুদকের অনুসন্ধানে স্ত্রীর বুটিক ব্যবসার কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। মূলত অসদুপায়ে অর্জিত অর্থ দিয়ে আবুল হাশেম বাড়িটি নির্মাণ করেন।

দুদক জানায়, ২০১৭ সালে পুলিশের এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ বিভিন্ন অভিযোগ পায় দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। প্রাথমিক অনুসন্ধানে অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়ায় ২০১৮ সালে আবুল হাশেম ও তাঁর স্ত্রীর সম্পদবিবরণী দাখিলের নির্দেশ দেয় দুদক। পরে তারা সম্পদবিবরণী জমা দেন।
সম্পদ বিবরণীতে আবুল হাশেম মোট ১ কোটি ১৫ লাখ ৮০ হাজার ৮৬৮ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের ঘোষণা দেন। কিন্তু দুদক অনুসন্ধান করে তার নামে ১ কোটি ২০ লাখ ২৬ হাজার ৮৩০ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য পায়। অর্থাৎ তিনি মোট ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৯৬২ টাকা সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেছেন। দুদক তার গ্রহণযোগ্য আয় পেয়েছে ৮৭ লাখ ৭৭ হাজার ৩৫৬ টাকা। এ হিসেবে তার দেওয়া সম্পদের বিবরণ অনুযায়ী তিনি ১৮ লাখ ৬০ হাজার ২৯৪ টাকার জ্ঞাত আয়বর্হিভূত সম্পদ অর্জন করেন।
অন্যদিকে, স্ত্রী তাহেরিনা বেগম স্থাবর-অস্থাবরসহ মোট ১ কোটি ১৯ লাখ ৮৮ হাজার ৮৪৬ টাকা সম্পদ অর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। দুদক অনুসন্ধান করে তার মোট ১ কোটি ২৬ লাখ ৭৩ হাজার ২১২ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য পায়। এর মাধ্যমে তাহেরিনা বেগম তার সম্পদ বিবরণীতে স্থাবর-অস্থাবর মোট ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৩৬৬ টাকা গোপন করেন। এ ছাড়া, দুদকের অনুসন্ধানে তার গ্রহণযোগ্য আয় মিলেছে ৬০ লাখ ৫৮ হাজার ৬৮৮ টাকা। তাহলে তিনি ৪৩ লাখ ৩২ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *