খেলা

ম্যারাডোনার মৃত্যুর কারণ নিয়ে ফের ধোঁয়াশা

আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সে ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বরে ৬০ বছর বয়সে মারা যান আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি ফুটবলার দিয়েগো ম্যারাডোনা। তার মৃত্যুতে শোকাহত হয়ে পড়ে গোটা ফুটবল বিশ্ব। তখন পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে মারা যান এই বিশ্বকাপ জয়ী ফুটবলার। যদিও এই কিংবদন্তি ফুটবলারের মৃত্যুর চার বছর পেরিয়ে গেছে, কিন্তু তার মৃত্যু নিয়ে কমেনি ধোঁয়াশা।

এর আগে ২০২১ সালে মারাদোনার পরিবার থেকে দাবি করা হয়, চিকিৎসকদের অবহেলার কারণে মারা যান বিশ্ব কাঁপানো এই ফুটবলার। এরপর এ নিয়ে আদালতে মামলাও করেন তারা। যার জের ধরে মারাদোনার দেখভালের দায়িত্বে থাকা আট জন চিকিত্সক এবং নার্সের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে আদালত। এই তালিকায় ছিলেন দুই মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক অগাস্তিনা কোসাশভ ও ডক্টর লিওপোলে্দা লুক। পরে তাদের আইনজীবীদের অনুরোধে আবারও এই কিংবদন্তি ফুটলারের মৃত্যুর কারণ নিয়ে তদন্ত শুরু করে আদালত। সেই তদন্ত রিপোর্টে উঠে আসে নতুন এক তথ্য।

নতুন তদন্ত রিপোর্টে দেখা যায়, মারাদোনার মৃত্যুর কারণ হূদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ নয়, বরং তার মৃত্যুর অন্যতম কারণ নেশাজাত মাদক ‘কোকেন’-এর মতো কোনো পদার্থ। এই রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আগুস্টিনা কোসাচভের আইনজীবী ভাদিম মিসচানচুক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এই রিপোর্টের মধ্য দিয়ে এই মামলাটি নতুন এক মোড় নিয়েছে। মানবদেহে এই মাদকের স্থায়িত্ব সর্বোচ্চ কয়েক দিন থাকে।’ চিকিত্সকদের আইনজীবীর কথা অনুযায়ী মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগে কোকেন নেন মারাদোনা।

যদিও নতুন করে সামনে আসা এই তদন্ত রিপোর্টকে মিথ্যা বলে আখ্যা দিয়েছেন দিয়াগো ম্যারাডোনার মেয়ে জিয়ান্নিনা ম্যারাডোনা। নতুন এই প্রতিবেদনের প্রতিবাদ জানিয়ে অটোপসি রিপোর্টের ফল সামনে এনে দেখিয়েছেন—কিংবদন্তি এই ফুটবলারের মৃত্যুর কারণ ছিল পালমোনারি এডেমা। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘২০০৪ সালের ৯ মে থেকে আমার বাবা কোকেন নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন। সেটা অটোপসি রিপোর্টেও প্রমাণ হয়েছে। যেদিন বাবা মারা গেলেন, ঐদিন তার হূদ্যন্ত্র কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল।’ সেই সঙ্গে ম্যারাডোনার মৃত্যুর দিন নিয়ে তার মেয়ে বলেন, ‘ঐ দিন তার কণ্ঠ রোবটের মতো শোনাচ্ছিল। কারণ তার ফুসফুসে কিছু একটা হচ্ছিল। পৃথিবীর সবাই জানে তিনি হার্টের রোগী। তারপরও হার্টের রোগের জন্য কোনো মেডিকেশন দেয়া হয়নি এবং চিকিত্সররা তার ফুসফুসের দিকেও নজর দেয়নি। সবাই ব্যস্ত ছিল রুম পরিষ্কার নিয়ে, অ্যাকাউন্ট খালি করার মতো কাজের দিকে সবার নজর ছিল।’ এছাড়াও এই কিংবদন্তি ফুটবলারের হত্যার অভিযুক্তদের নিয়ে তার মেয়ে আরো বলেন, ‘নিজেদের কাজ ঠিকমতো না করার কারণেই আজ তারা এখানে। এখন তারা নিজেদের জেলে যাওয়া থেকে বাঁচতে নতুন করে এসব করছে। আমি কিছুতেই ভয় পাই না। প্রয়োজনে আমাকে ওদের মেরে ফেলতে হবে। তার আগে আমাকে চুপ করানো যাবে না।’

এদিকে মৃত্যুর পর এক কিংবদিন্ত ফুটবলারকে আর্জেন্টিনার রাজধানী থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল সান মিহুয়েল শহরে পারিবারিক কবরস্থানে তার মা-বাবার পাশে তাকে সমাহিত করা হয়েছে। তবে গেল বৃহস্পতিবার স্থানীয় গণমাধ্যমের সূত্র অনুযায়ী জানা যায়, ম্যারাডোনার কিছু ভক্ত একটি আদালতে আবেদন জানায় যে, বিশ্বকাপ জয়ী ফুটবলারকে তার পূর্বের সমাদিস্থান থেকে আর্জেন্টিনার রাজধানীতে এই কিংবদন্তি ফুটবলারকে নতুন করে সমাহিত করার জন্য। আদালতে জমা দেয়া সেই চিঠিতে বলা হয়, ‘ম্যারাডোনার সমাধি বর্তমানের যেখানে আছে। সেখান থেকে নিরাপদ জায়গা রাজধানী একটি কবরস্থান। যাতে বিশ্বের সমস্ত মানুষ এবং আর্জেন্টিনার নাগরিকরা এই সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবলারকে শ্রদ্ধা জানাতে পারেন। তিনি আর্জেন্টিনার জন্য অনুপ্রেরণা।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *