অন্যান্য

যে কারণে আটকে স্মার্ট লাইসেন্স কার্ড, বিপাকে আবেদনকারীরা

গত দুই মাসের অধিক সময় ধরে স্মার্ট লাইসেন্স কার্ড পাচ্ছেন না আবেদনকারীরা। ফলে পেশাদার কিংবা ব্যক্তিগত বাহনের চালকেরা বিপাকে পড়েছেন।

এমনকি সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে চালক পদে আবেদনকারীও নির্ধারিত সময়ে লাইসেন্স না পাওয়ার অভিযোগ নিয়ে প্রতিদিন বিআরটিএ’র কার্যালয়ে ভিড় করলেও সমাধান পাচ্ছেন না।

রাজিব হোসেন নামে এক লাইসেন্সপ্রত্যাশী বলেন, গত বছরের জুনে আবেদন করেও নানা কারণে এখনও কার্ড হাতে পাইনি।

বিআরটিএ কর্মকর্তারাও তাকে কার্ড পাওয়ার সর্বশেষ অবস্থা জানাতে পারেননি বলে দাবি এ আবেদনকারীর।

এদিকে বিআরটিএ সূত্র বলছে, ২০২০ সালের ২৯ জুলাই লাইসেন্স কার্ড মুদ্রণে বিআরটিএ’র সঙ্গে চুক্তি হয় মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স (এমএসপি) প্রাইভেট লিমিটেডে। এই কোম্পানির কাছে এখন কার্ড নেই। ২৫ হাজার স্মার্টকার্ড বিমানবন্দরে দুই সপ্তাহ আগে এলেও সেটি খালাস করতে পারেনি কোম্পানিটি। যদিও এই ২৫ হাজার কার্ডে চাহিদা মেটানো সম্ভব না।

বিআরটিএ সূত্রে আরও জানা যায়, কোম্পানিটি ডলার সংকটের অজুহাত দেখিয়েছে। যখন চুক্তি হয় তখন ডলারের দাম ছিল ৮৫ টাকা। যা বর্তমানে ১২৫ টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছে। এই কারণে তারা কার্ড আনতে পারছেন না ভারত থেকে।

চুক্তির তিন বছরে ২৪ লাখ কার্ড সরবরাহের কথা থাকলেও এ পর্যন্ত ১৬ লাখের মত সরবরাহ করা হয়েছে। এখনও প্রায় ৮ লাখ কার্ডের ঘাটতি রয়েছে।

বিআরটিএর দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, প্রিন্টিং কোম্পানি এখন তাদের বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এর আগে গত বছর মাঝামাঝিতে লাইসেন্স কার্ডের সংকট চরমে পড়ে বিআরটিএ। তখন ঘাটতি ছিল প্রায় ৫ লাখের মতো। তবে তখন ৬ লাখ কার্ড দেশে এসেছিল আইপির (আমদানি অনুমতি) মাধ্যমে। সেটিও শেষ হয়েছে পুরোনো আবেদনকারীদের দেওয়ার জন্য। নতুন করে আর কাউকে কার্ড দিতে পারছে না বিআরটিএ।

কার্ড সংকট নিয়ে মাদ্রাজ প্রিন্টার্সের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপক আশরাফ বিন মুস্তফা বলেন, আগে এলসি নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল, এখন এলসি নিয়ে সেই সমস্যা নেই। তবে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে ব্যাংক তাদের বড় সংখ্যার এলসি দিতে চাইছে না।

তিনি বলেন, এলসির কারণে ছোট সংখ্যায় কার্ড আনা হচ্ছে। তবে সেটাতে বিআরটিএ খুশি নয়। এখন ৫০ হাজার করে কার্ড আনা যাচ্ছে। শুধু শেষবার ২৫ হাজার কার্ড এসেছে। কিন্তু তারা সম্প্রতি সাফটা (দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক মুক্তবাণিজ্য চুক্তি) চুক্তি করেছে। তবে সেই চুক্তিতে নাম ভুল থাকায় বিমানবন্দর শুল্ক কর্তৃপক্ষ কার্ড ছাড় দিচ্ছে না। ভারতীয় কোম্পানিতে তাদের পাঁচ লাখ কার্ড পড়ে থাকা স্বত্বেও কার্ড বাংলাদেশে আনা যাচ্ছে না।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, চুক্তির একটা প্রক্রিয়া থাকে। এত লাইসেন্স তো বছরে দরকার হয়নি। সব মিলিয়ে ১০-১২ লাখ লাইসেন্স এই তিন বছরে প্রয়োজন হয়েছে। তাই সমস্যা হয়নি।

প্রসঙ্গত, মোটরযানের লাইসেন্স হিসেবে ডুয়েল ইন্টারফেস পলিকার্বনেট স্মার্টকার্ড তৈরির জন্য ভারতীয় প্রতিষ্ঠান এমএসপি প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি হয় ২০২০ সালের ২৯ জুলাই। ব্যয় ধরা হয় ১২০ কোটি ৬ লাখ ২০ হাজার টাকা। চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৫ সালের ২৮ জুলাই। এই সময়ের মধ্যে প্রয়োজন অনুযায়ী ৪০ লাখ লাইসেন্স কার্ড সরবরাহ করার কথা প্রতিষ্ঠানটির। প্রতিটি কার্ডে খরচ ধরা হয় ৩০০ টাকা ১৫ পয়সা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *