রাউজানে হৃদয় হত্যা মামলা, আসামির জামিন না-মঞ্জুর
চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায় কলেজছাত্র সিবলি সাদিক হৃদয় (১৯) হত্যা মামলার আসামি উক্যথোয়াই মারমার (১৯) জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আজিজ আহমেদ ভূঞা এ আদেশ দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী।
আসামি উক্যথোয়াই মারমা রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালী থানার ৬ নম্বর ওয়ার্ড বেতবুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাপমারা গ্রামের উহ্লাপ্রমং মারমার ছেলে। নিহত হৃদয় রাউজান উপজেলার কদলপুর ইউনিয়নের পঞ্চপাড়া গ্রামের মুহাম্মদ শফির ছেলে।
পিপি অ্যাডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী জানান, রাউজানের কলেজছাত্র হৃদয়কে বর্বরভাবে জবাই করে হত্যা মামলার অন্যতম আসামি উক্যথোয়াই মারমার জামিন আবেদন করলে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করেন। হৃদয় হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত পাঁচ আসামি বর্তমানে জেলহাজতে আছেন।
উল্লেখ্য, কিশোর হৃদয়, উমংচিং মারমা ও অংথুইমং মারমা একটি মুরগীর খামার ব্যবস্থাপনার কাজ করত। তাদের মধ্যে কিছু বিষয়ে মনোমালিন্য হলে খামারের মালিক তা মীমাংসা করে দেয়। উমংচিং মারমা ও অংথুইমং মারমা হৃদয়কে শায়েস্তা করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনায় অংশ নেয় আরও সদস্য। গত ২৮ আগস্ট উমংচিং রাত ১০টায় একটি সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে কদলপুর এলাকায় মাজার গেটে এসে উমংচিং মারমা ফোন করে হৃদয়কে রাস্তায় আসতে বলে। তার কথায় হৃদয় রাস্তায় এলে উমংচিং মারমাসহ অন্যরা তাকে জোর করে গাড়িতে তুলে গামছা দিয়ে মুখ বেঁধে হৃদয়কে আগে থেকে ঠিক করে রাখা পূর্বনির্ধারিত রাউজানের একটি উঁচু পাহাড়ের সেগুন বাগান এলাকায় নিয়ে যায়।
৩০ আগস্ট হৃদয়ের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হয় মুক্তিপণ চেয়ে। কিন্তু ২৯ আগস্ট রাতেই হৃদয়কে জবাই করে হত্যার পর ফিরে এসে উমংচিং মারমা তার বন্ধু উচিংথোয়াই মারমার মোবাইলে সিমকার্ড ঢুকিয়ে মুক্তিপণের টাকা চেয়ে হৃদয়ের বাবাকে ফোন দেয়। এরপর ১ সেপ্টেম্বর অপহরণকারী কথা অনুসারে বান্দরবানে গিয়ে উচিংথোয়াই মারমাকে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দেন। আসামি উচিংথোয়াই মারমা দেড় লাখ একাই নেয় ও বাকি ৫০ হাজার টাকা অন্যদের ভাগ করে দেয়।
অপহরণের পর হৃদয়কে ওই পাহাড়ের সেগুন বাগানে নিয়ে যায়ার পর উচিংথোয়াই মারমা ও ক্যাসাই অং চৌধুরী আগে থেকেই উপস্থিত থাকে। আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী উমংচিং মারমা হৃদয়কে হত্যার দায়িত্ব দেয়। উচিংথোয়াই মারমা নিজ হাতে ধারালো ছুরি দিয়ে জবাই করে হৃদয়ের শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলে এবং ক্যাসাই অং চৌধুরীসহ অন্য আসামিরা হৃদয়ের হাত-পা ও মুখ চেপে ধরে জবাই করতে সহযোগিতা করে। জবাইয়ের পর হৃদয়ের লাশ প্রথমে পাহাড়ের চূড়ায় কলাপাতা দিয়ে ঢেকে রেখে দেয়। পরবর্তীতে আসামি উচিংথোয়াই মারমাসহ অন্য খুনিরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে বাঁচতে হত্যাকাণ্ডের আলামত ধ্বংস করার জন্য হৃদয়ের লাশের শরীর থেকে মাংস কেটে আলাদা করে ফেলে দেয় এবং হাড়গোড় গহীন পাহাড়ের জঙ্গলে ছিটিয়ে রেখে চলে আসে।
এ ঘটনায় পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গণপিটুনি দিয়ে এলাকাবাসী উমংচিং মারমা একজনকে মেরে ফেলে। একইসাথে পুলিশ বেতবুনিয়ায় অভিযান চালিয়ে আছুমং মারমা (২৬) ও উক্যথোয়াই মারমা (১৯) কে আটক করে। ৩০ সেপ্টেম্বর র্যাব-৭ অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া যুবক উচিংথোয়াই মারমা ও তার অন্যতম সহযোগী ক্যাসাই অং চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে।