ধর্ম

শীতকালের গুরুত্বপূর্ণ আমল

কুয়াশার মিহি চাদরে ঢাকা শীত অনেকের প্রিয় ঋতু। এ ঋতু আল্লাহর প্রিয় বান্দাদেরও অনেক প্রিয় মৌসুম।

অন্যান্য ঋতুর চেয়ে এ ঋতুতে ইবাদত-বন্দেগি তুলনামূলকভাবে বেশি করা যায়। আল্লাহর নৈকট্য পেতে অধিক হারে আমলে মগ্ন থাকা যায়।
আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘শীতকাল মোমিনের বসন্তকাল। ’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং: ১১৬৫৬)

অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘শীতের রাত দীর্ঘ হওয়ায় মোমিন রাত্রিকালীন নফল নামাজ আদায় করতে পারে এবং দিন ছোট হওয়ায় রোজা রাখতে পারে। ’ (বায়হাকি, হাদিস নং: ৩৯৪০)

শীতকালে সহজে আদায় করা যায় এমন কিছু আমল:

তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়

শীতকালে রাত অনেক দীর্ঘ হয়। কেউ চাইলে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমিয়ে শেষরাতে তাহাজ্জুদ পড়তে পারে। এতে ঘুমের কোনো কমতিও হবে না আবার গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদতে অভ্যস্ত হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তাদের পার্শ্ব শয্যা থেকে আলাদা থাকে। তারা তাদের পালনকর্তাকে ডাকে ভয়ে ও আশায় এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে। ’ (সুরা সেজদাহ: ১৬)

অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘তারা রাতের সামান্য অংশেই নিদ্রা যেত। ’ (সুরা আজ-জারিয়াত: ১৭)

ওজু করা ও নামাজের অপেক্ষা

শীতকালে ওজু করা অনেকে কষ্টকর মনে করে। অথচ এ সময়ে ওজু করা অনেক বড় সওয়াবের কাজ। শীতকালে গরম পানি দিয়ে ওজু করলেও সেই সওয়াব লাভ হবে। অন্যদিকে দিন ছোট হওয়ায় ফরজ নামাজগুলো খুব কাছাকাছি সময়ে আদায় করা হয়। ফলে মসজিদে এক নামাজ আদায়ের পর অন্য নামাজের অপেক্ষা করা খুব কঠিন কাজ নয়। উপরন্তু এর বিপুল সওয়াব রয়েছে।

রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি কি তোমাদের এমন কিছু শিখিয়ে দিব না; যার কারণে আল্লাহ তাআলা পাপ মোচন করবেন এবং জান্নাতে তোমাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন? সাহাবিগণ বললেন, হ্যাঁ আল্লাহর রাসূল! নবীজি বললেন, মন না চাইলেও ভালোভাবে ওজু করা, অধিক পদক্ষেপে মসজিদে যাওয়া এবং এক নামাজের পর আরেক নামাজের জন্য অপেক্ষা করা। ’ (মুসলিম, হাদিস নং: ২৫১)

শীতবস্ত্র বিতরণ করা

বিভিন্ন জায়গায় অসংখ্য মানুষ আর্থিক দৈন্যতার কারণে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। হাড় কাঁপানো শীতে টিকে থাকাই তাদের জন্য দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে তাদের পর্যাপ্ত কাপড় নেই।

আরামদায়ক উষ্ণ পোশাকে আমরা যখন শীত উপভোগ করি, তখন শৈত্যপ্রবাহে লাখ লাখ মানুষ থরথর করে কাঁপে। ইসলামী ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের একান্ত জরুরি। শুধু ধনাঢ্যরা নয়, বরং প্রত্যেকেই সাধ্যমতো এগিয়ে আসতে পারেন।

মুসলমানকে কাপড় দান করার কী ফজিলত সে সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে মোমিন অপর বিবস্ত্র মোমিনকে কাপড় পরিয়ে দিল আল্লাহ তায়ালা ওই ব্যক্তিকে জান্নাতের সবুজ কাপড় পরিয়ে দেবেন। ’ (তিরমিজি, হাদিস নং: ২৪৪৯, মুসনাদ আহমাদ, হাদিস নং: ১১১১৬)

অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘আল্লাহ তাকে জান্নাতি পোশাক পরিয়ে দেবেন। ’ (আত-তারগিব ওয়াত তারহিব, ২/৯২)

শীতে অসহায়কে সহযোগিতার পাশাপাশি আল্লাহ আমাদের অন্যান্য আমলগুলোও করার তাওফিক দান করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *