চট্টগ্রামরাজনীতি

শেয়ারবাজার-সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ বেশি

শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি ও ধসের কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কমলেও এখাতে বিনিয়োগ বেড়েছে মন্ত্রী, এমপি ও রাজনীতিবিদদের। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বেশিরভাগই ব্যবসায়ী। তাদের বেশি আগ্রহ শেয়ার বাজার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানতে। এই খাতে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করেছেন নেতারা। নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে এই চিত্র পাওয়া গেছে।

চট্টগ্রামের ১৬ আসনে ১৪৮ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। যাচাই-বাছাই শেষে ১১৬ জনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়। বৈধ প্রার্থীদের মধ্যে প্রধানতম প্রতিদ্বন্দ্বী ২৯ জনের হলফনামা বিশ্লেষণ করা করা হয়। তাতে দেখা যায়, বেশির প্রার্থীই পেশায় ব্যবসায়ী। হাতেগোনা তিন-চার জন শিক্ষক (অধ্যাপক), আইনজীবী রয়েছেন। তবে প্রার্থীদের বেশির ভাগই ব্যবসা ছাড়াও বড় বিনিয়োগ রয়েছে শেয়ারবাজার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানতে। এই খাত থেকে বিপুল পরিমাণ আয় রয়েছে তাদের। দেশের মন্ত্রী-এমপি ও বড় রাজনীতিবিদেরা শেয়ারবাজারে জড়িত থাকায় বিভিন্ন সময়ে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি কোনো সরকার।

বড় বিনিয়োগ যেসব প্রার্থীর :

চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা) আসনের সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নগদ টাকা ও ব্যাংকে জমা আছে ১ কোটি ৮৬ লাখ ৭২ হাজার ২৩৫ টাকা। স্ত্রীর নামে রয়েছে ১৬ লাখ ৬৫ হাজার ১৮১ টাকা। কোম্পানিতে শেয়ার (বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয়) রয়েছে ৯ কোটি ৬৩ লাখ ৪৪ হাজার ২৫০ টাকা। এ খাতে স্ত্রীর নামে রয়েছে ৮ কোটি ২৭ লাখ ৫২ হাজার ১০০ টাকা।

চট্টগ্রাম-৫ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদের বড় আয় শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত থেকে। এখাত থেকে তার বার্ষিক আয় তিন কোটি ৪৭ লাখ ৭৮ হাজার ৫৮৭ টাকা। তার স্ত্রীর আয় এক কোটি আট লাখ ৭৭ হাজার ৭১৪ টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত থেকে স্বামী-স্ত্রী দুই জনের আয় বছরে ৩ কোটি ৪৭ লাখ ৭৮ হাজার ৫৮৭ টাকা।

অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজের নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ২ কোটি ৬৫ লাখ ৮১ হাজার ২৯৫ টাকা। স্ত্রীর নামে ব্যাংকে জমা আছে ৪ কোটি ২ লাখ ১৯ হাজার ৬০১ টাকা। নিজের নামে কোম্পানির (বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জ তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয়) শেয়ার রয়েছে নিজ নামে ১৯ কোটি ৮১ লাখ ১৩ হাজার ১৮৬ টাকা। স্ত্রীর নামে আছে ৫ কোটি ৫৭ লাখ ৩৬ হাজার ১৬২ টাকা। স্ত্রীর নামে সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ রযেছে ৫০ লাখ টাকা।

চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনের প্রার্থী মাহবুব উর রহমান রুহেল শেয়ার, সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংক আমানত থেকে বছরে আয় ১৪ লাখ ৫ হাজার ২০৫ টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ৫১ লাখ সাত হাজার ৭৩৯ টাকা। বন্ড, ঋনপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জ তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার আছে পাঁচ কোটি ৯১ লাখ ৩৬ হাজার ৩৫৫ টাকা। স্ত্রীর নামে তিন কোটি ছয় লাখ আট হাজার ৪০০ টাকা। নির্ভরশীলদের নামে ৫০ লাখ ৬০ হাজার ১৬০ টাকা। নিজের নামে পোস্টাল সেভিংস না থাকলেও স্ত্রীর নামে আছে ৪৭ লাখ ৪৫ হাজার ৮৪০ টাকা।

চট্টগ্রাম-৯ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের নামে বন্ড, ঋণপত্র, স্টক একচেঞ্জ তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার আছে ১০ লাখ টাকা। স্ত্রীর নামে আছে ১০ লাখ ৮৫ হাজার ৯১০ টাকার। পোস্টাল সেভিংস বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ রয়েছে নিজের নামে ছয় কোটি দুই লক্ষ ১৭ হাজার ৪১২ টাকা। স্ত্রীর নামে বৈদেশিক মুদ্রা আছে আট হাজার ডলার।

চট্টগ্রাম-৪ আসনের প্রার্থী এসএম আল মামুনের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে এক কোটি ১৮ লাখ ৭০ হাজার ৩৫ টাকা। স্ত্রীর নামে আছে ১৭ লাখ ৭১ হাজার ২৯৭ টাকা। নিজের নামে বন্ড, ঋণপত্র, স্টক একচেঞ্জ তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার আছে এক কোটি ১৪ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। স্ত্রীর নামে আছে ২ লাখ ৯৫ হাজার টাকার।

চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভা-ারীর শেয়ার, সঞ্চয়পত্র/ ব্যাংক আমানত থেকে বছরে আয় করেন ৪ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। এ খাতে ছোট ছেলের আয় ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৮৮৯ টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজের নামে শেয়ার রয়েছে ৬ লাখ টাকার। স্ত্রীর নামে রয়েছে ৪ লাখ টাকার। দুই ছেলের নামে ১২ লাখ ৭০ হাজার টাকার। নিজের নামে এফডিআর রয়েছে প্রায় ৫৬ লাখ টাকার। ছোট ছেলের নামে রয়েছে ৫৮ লাখ ৬১৩ টাকার।

চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য খাদিজাতুল আনোয়ার সনি শেয়ার-সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংক আমানত থেকে বছরে আয় করেন এক লাখ ৬৮ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে এক কোটি ৩৮ লাখ ৩৮ হাজার ১১৫ টাকা। বন্ড, ঋণপত্র স্টক একচেঞ্জ শেয়ার ২৪ কোটি ৯১ লাখ ৪ হাজার ৫১০ টাকার। সঞ্চয়পত্র ১৫ লাখ টাকার।

চট্টগ্রাম-১১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন শেয়ার, সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংক আমানত থেকে বছরে আয় করেন ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৩১০ টাকা। ডিপিএস থেকে স্ত্রীর আয় ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। নিজের নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ১৫ কোটি ৪৮ লাখ ৩৫ হাজার ৭৪৯ টাকা। স্ত্রীর নামে জমা আছে ৯৮ লাখ ৪১ হাজার একশ টাকা। নিজের নামে বন্ড, ঋণপত্র, স্টক একচেঞ্জ তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার ১০০ টাকা মূল্যের এভেন্স পাঁচ হাজারটি। স্ত্রীর নামে বন্ড, ঋণপত্র, স্টক একচেঞ্জ তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার তিন লক্ষ ৬০ হাজার টাকার।

একই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য এম এ লতিফের নিজ নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে ৪২ লাখ ৪২ হাজার ৬২৩ টাকা। স্ত্রীর নামে আমানত রয়েছে ৭৮ লাখ ৪৪ হাজার ৪৫৭ টাকা। বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির শেয়ার রয়েছে নিজের নামে আট লাখ ৪৬ হাজার ৬৫০ টাকা। স্ত্রীর নামে ৪৪ লাখ ৭৩ হাজার ৩২৫ টাকার।

চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা শেয়ার, সঞ্চয়পত্র থেকে বছরে আয় করেন ৩৩ হাজার ৩৬৮ টাকা। ব্যাংকে জমা আছে ৩২ লাখ ২৭ হাজার ৬৫১ টাকা। বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জের শেয়ার আছে ৪ কোটি ৯৯ লাখ ৭২ হাজার ২০৭ টাকার। স্ত্রীর রয়েছে ১ কোটি ৯৯ লাখ ২১ হাজার টাকা।

চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী শেয়ার-সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংক আমানত থেকে বছরে আয় পান ১৫ লাখ ২৮ হাজার ৩৫০ টাকা। নির্ভরশীলদের আয় ৯৪ হাজার ৯৭৭ টাকা। নিজের নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ১ কোটি ৬৪ লাখ ৯৬ হাজার ৩৪৪ টাকা। স্ত্রীর নামে ব্যাংকে জমা আছে ১৩ লাখ ৪১ হাজার ৯৫ টাকা। নিজ নামে ডিপিএস আছে দুই লাখ ৭২ হাজার ৯৯৪ টাকার। এফডিআর আছে ২ কোটি ২৮ লাখ ৮৭ হাজার ২২০ টাকার। স্ত্রীর নামে এফডিআর রয়েছে ১৮ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭৬ টাকার। ডিপিএস রয়েছে ৭ লাখ ৯৮ হাজার ৭৮ টাকা।

চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ, সাতকানিয়া আংশিক) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরীর শেয়ার, সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংক আমানত থেকে বছরে আয় করেন ১১ লাখ ৬৩ হাজার ১৮০ টাকা। কোম্পানিতে (বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জ তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয়) শেয়ার রয়েছে নিজ নামে ৩২ লাখ ১৫ হাজার ৭৬০ টাকার। স্ত্রীর নামে রয়েছে ৭৫ হাজার টাকা।

চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-পাহাড়তলী) আসনের প্রার্থী ও সাবেক সিটি মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম পেশায় ব্যবসায়ী। ২০টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংক আমানত থেকে তার বছরে আয় ৭৫ লাখ ৯৩ হাজার ৫০২ টাকা। নির্ভরশীলদের আয় ৯ লাখ ২০ হাজার ৮২৭ টাকা। বন্ড, ঋণপত্র, স্টক একচেঞ্জ তালিকাভুক্ত কোম্পানির নিজের নামে শেয়ার আছে ৩৮ কোটি ৩৫ লাখ ২০ হাজার ২০৬ টাকা। স্ত্রীর নামে শেয়ার তিন কোটি ৩৭ লাখ ৭৬ হাজার ৫৬৫ টাকা।

চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী শেয়ার, সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংক আমানত থেকে বছরে আয় করেন ৭ লাখ ৯৬ হাজার ১০৮ টাকা। সঞ্চয়পত্র থেকে নির্ভরশীলদের আয় ৪ লাখ ৬০ হাজার ৮০০ টাকা। ব্যাংক আমানতের সুদ পায় ১৪ লাখ ৬৬ হাজার ৭১৮ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ৬১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। স্ত্রীর নামে জমা আছে ১০ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। কোম্পানিতে (বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জ তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয়) শেয়ার রয়েছে নিজ নামে ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকার। স্ত্রীর নামে রয়েছে ১২ লাখ টাকার। এফডিআর আছে নিজের নামে ২ কোটি ৩৫ লাখ টাকার। আছে ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র। স্ত্রীর নামে এফডিআর রয়েছে ২ কোটি ৩৩ লাখ ৭৪ হাজার ৪৯১ টাকার। আছে ৫০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকার ডিপিএস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *