সম্মেলন করে নগর আ. লীগের কমিটি গঠনের তাগিদ
সম্মেলনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনের তাগিদ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গতকাল রোববার তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে চট্টগ্রাম বিভাগের দলীয় নেতা, দলের সংসদ সদস্য এবং স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এই তাগিদ দেন।
তিনি বলেন, সম্মেলন করে সেখানে কমিটি গঠন করা হবে। ঢাকা থেকে প্রেস রিলিজ দিয়ে কেন কমিটি গঠন করতে হবে? এ সময় তিনি সংগঠনের তৎপরতা জোরদার করা এবং নিজেদের মধ্যে দূরত্ব নিরসনেরও নির্দেশ দেন।
সকাল ১১টা থেকে শুরু হয়ে সভা চলে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত। সভায় চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলাসহ বিভাগের ১৪ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং এই বিভাগের সকল দলীয় ও স্বতন্ত্র এমপিদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করার বিষয়ে সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনে প্রশাসন কোনো হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। আমরা এমপি–মন্ত্রী সাহেবরা যদি হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকি তাহলে বিনা প্রতীকে নির্বাচন করার যে উদ্দেশ্য নেত্রী স্থির করেছেন তা সার্থক হবে। দলের এমপি–মন্ত্রী এবং সিনিয়র নেতা কেউ ক্ষমতার দাপট ও ক্ষমতার অপব্যবহার করবেন না। যার নির্বাচন করার ইচ্ছা আছে করবেন। সেই স্বাধীনতা আছে। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। জনগণ যাকে ইচ্ছা নির্বাচিত করবে। নির্বাচন কমিশন স্বাধীন। যদি কোনো অনিয়ম মনে করে তারা ব্যবস্থা নেবে।
তিনি বলেন, চার ধাপে অনুষ্ঠিত হবে উপজেলা নির্বাচন। কাজেই আমাদের দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। ভালোভাবেই চলছে সবকিছু। এর মধ্যে দায়িত্বশীলদের এমন কিছু কথাবার্তা দলকে সংকটে ফেলে। ফ্রি স্টাইলে যা কিছু বলবেন, এটা তো আওয়ামী লীগ নয়। দলের গঠনতন্ত্র, নিয়ম কানুন আছে। এগুলোর অ্যাকশন আমরা নেব। ইতোমধ্যে কিছু অ্যাকশন নেওয়াও হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেনের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন দলের সভাপতিণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা. দীপু মনি, অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ও অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান, চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক সেলিম মাহমুদ, উপদপ্তর সায়েম খান প্রমুখ।
সভায় চট্টগ্রাম থেকে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী এমপি, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মাহফুজুর রহমান এমপি, আবদুচ ছালাম এমপি, মুজিবুর রহমান এমপি, এম এ মোতালেব এমপি, মাহবুব উর রহমান রুহেল এমপি, খাদিজাতুল আনোয়ার সনি এমপি, শামীমা হারুণ লুবনা এমপি ও দিলোয়ারা ইউসুফ এমপি।
দলীয় কাজে ব্যস্ত থাকা এবং অনেকে দেশের বাইরে থাকায় সভায় উপস্থিত থাকতে পারেননি। সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি, রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি, এম এ লতিফ এমপি, মহিউদ্দিন বাচ্চু এমপি ও এস এম আল মামুন এমপি উপস্থিত ছিলেন না।
সভায় উপস্থিত দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান আজাদীকে বলেন, মতবিনিময় সভায় চট্টগ্রাম মহানগর এবং চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তাগাদা দেওয়া হয়। উপজেলা নির্বাচনের পর চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন কাদের ভাই। উপজেলা নির্বাচনে দলের এমপি–মন্ত্রী এবং দলের সিনিয়র নেতাদের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ না করার জন্য বলেছেন। দলের সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়ানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। নিজেদের মধ্যে কোনো দূরত্ব থাকলে তা নিরসনের নির্দেশ দিয়েছেন। সভায় চট্টগ্রাম থেকে এম এ সালাম, মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দীন বক্তব্য রেখেছেন বলে জানান তিনি।
সভায় উপস্থিত উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান আজাদীকে বলেন, সভায় কাদের ভাই মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন করার বিষয়ে বলেছেন। এ সময় নাছির ভাই (আ জ ম নাছির উদ্দীন) বলেছেন, আমরা সম্মেলনের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত আছি। কেন্দ্র চাইলে যেকোনো সময় সম্মেলনের জন্য তারিখ দিতে পারব। কেন্দ্র থেকে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার জন্য তাগিদ দেন তিনি।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, সভায় নবনির্বাচিত এমপিদের স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সমন্বয় করে কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য বলা হয়েছে। অনেক এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করেন না। তাই এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।