সাতকানিয়ায় প্রতিপক্ষের হামলায় প্রাণ গেল বৃদ্ধার
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় প্রতিপক্ষের পিটুনিতে আহত রাজিয়া বেগম (৫৮) এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। সোমবার সকাল সাড়ে ৯ টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
গত ১৬ এপ্রিল (মঙ্গলবার) জায়গা জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার মাদার্শা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড শাহ নগর আগুবর বাড়ী এলাকায়। সোমবার তাঁর মৃত্যুর পর বিষয়টি জানাজানি হয়েছে।
রাজিয়া বেগম ওই এলাকার ফজল আহমদের স্ত্রী।
প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, রাজিয়া বেগমের সাথে পার্শ্ববর্তী এক প্রতিবেশীর চলাচলের ৪ ফুট রাস্তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। গত (১৬ এপ্রিল) মঙ্গলবার সন্ধ্যা আনুমানিক ৭ টার সময় প্রতিপক্ষের লোকজন বিরোধীয় ৪ ফুট জায়গার মধ্যে টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলার চেষ্টা করে। এ সময় নিহত রাজিয়া বেগমের ছেলে আলমগীর বিষয়টি স্থানীয় মেম্বার সহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদেরকে জানালে তারা ঘটনাস্থলে আসেন। তখন আলমগীর প্রতিপক্ষের লোকজনকে টিনের বেড়া দিতে নিষেধ করেন। প্রতিপক্ষের লোকজন নিষেধ না শুনলে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে মারামারিতে লিপ্ত হয়। ক্ষিপ্ত হয়ে তারা আলমগীরকে এলোপাতাড়িভাবে মারধর শুরু করেন। আলমগীরের মা রাজিয়া বেগম (৫৮) এসে ছেলেকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাদের হাতে থাকা লাঠি, লোহার পাইপ, শাবল, দা ও খন্তা দিয়ে রাজিয়া বেগমকে এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকেন। তার মাথার বাম পাশে জোরে আঘাত লেগে গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে লুটে পড়েন। এ সময় তারা আলমগীর (৩৮), জাহাঙ্গীর (৪০) ও মেয়ে নুর নাহারকে (২৮) বেধড়ক মারধর করেন। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন আহতদের সাতকানিয়া সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন। হাসপাতালের কতর্ব্যরত চিকিৎসক রাজিয়া বেগমের শারীরিক অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৬ দিন পর গত (২২ এপ্রিল) সোমবার সকালে রাজিয়া বেগম মারা যান।
নিহতের স্বজনেরা জানান, তাদের প্রতিবেশী সাহেব মিয়ার সাথে বাড়ির পাশের ৪ ফুট জায়গা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ দিলে তিনি সার্ভেয়ার দিয়ে পরিমাপ করে সমাধানের জন্য স্থানীয় ইউপি সদস্যকে দায়িত্ব দেন। মেম্বার ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সার্ভেয়ার নিয়ে পরিমাপ করে বিরোধীয় ৪ ফুট জায়গা রাজিয়া বেগমের পরিবারের। এরপরও উভয়ের শান্তির জন্য ৪ ফুট থেকে ২ ফুট ছেড়ে দিয়ে আপোষমতে বিষয়টি মীমাংসা করে দেন। এরপর প্রতিপক্ষ আপোষ না মেনে পুরো জায়গা টিনের বেড়া দিয়ে দখল করে ফেলে। বিষয়টি জানাতে গেলেই তারা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদেরকে বেধড়ক মারধর করে। স্থানীয় লোকজন আমাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য
এ ঘটনায় নিহত রাজিয়া বেগমের ছেলে বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের নুরুল ইসলামের ছেলে মো. ফারুক, মাদার্শা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের শাহ নগর আগুবর বাড়ির সাহাব মিয়ার ছেলে মো. শাহাদাত হোসেন, মঞ্জুর আলম, মৃত অলি বন্ধুর ছেলে সাহাব মিয়া, সাহাব মিয়ার মেয়ে শারমিন আক্তার, হ্যাপি আক্তার ও সাহাব মিয়ার স্ত্রী শাহীন আক্তারকে।
সাতকানিয়া থানার ওসি (তদন্ত) মো. আতাউল হক চৌধুরী বলেন, এ ঘটনায় নিহতের ছেলে বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা করেছেন। এখনো পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডে জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তবে অভিযান চলছে।