চট্টগ্রাম

সিডিএ-চসিক সমন্বয়হীনতা আর নয়

অন্ধের মতো যত্রতত্র উন্নয়নের মাধ্যমে নগরের ঐতিহ্য ধ্বংস করার চিন্তা নেই বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছ। তার মতে, এমন উন্নয়ন চট্টগ্রামকে সাধারণ মানুষের বসবাস অযোগ্য করে ফেলবে।

চটগ্রামকে ঘিরে প্রাথমিক ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে সোমবার (২৯ এপ্রিল) সন্ধ্যায় মুঠোফোনে সিভয়েস২৪-এর সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি এ কথা বলেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ বলেন, ‘চট্টগ্রাম পাহাড় ও সমুদ্রে ঘেরা প্রাচীন শহর। এই শহরের প্রতিটি অলিগলি, রাস্তাঘাট ঘুরে আমার বেড়ে ওঠা। নগর রাজনীতির সঙ্গে আমরা সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিল। তাই নগরের প্রতি আমার দায়িত্বের পাশাপাশি আবেগ সবসময় কাজ করে। সেজন্য অন্ধের মতো যত্রতত্র উন্নয়ন করে নগরের ঐতিহ্য নষ্ট করা এবং সাধারণ মানুষের জন্য বসবাস অযোগ্য করার ইচ্ছে আমার নেই।’

চট্টগ্রামকে ঘিরে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আগামী ৫০ বছরের কথা চিন্তা করেই সকল পরিকল্পনা সাজানো হবে। সেখানে অবশ্যই পরিবেশ ও জলবায়ু প্রাধান্য পাবে। পরিবেশকে নষ্ট করে নগর উন্নয়ন কখনো করা হবে না।’

সিডিএতে মোহাম্মদ ইউনুছের প্রথম দিন—

নানা ‘জলঘোলার’ পর বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান। গত ২৪ এপ্রিল আগামী তিন বছরের জন্য তাঁকে এ পদে নিয়োগ দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে যোগদানের পাঁচ দিন পর সোমবার নিজ কার্যালয়ে যান সিডিএর নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছ।

প্রথম দিনই ঘড়ির কাঁটায় ঠিক সকাল ৯টায় সিডিএ ভবনে প্রবেশ করেন তিনি। প্রথম দিনের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথমদিন কেটেছে সিডিএর প্রতিটি বিভাগীয় ও শাখা অফিস ঘুরে। এরপর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় হয়। পরে বোর্ড মেম্বারদের সাথে প্রাথমিক ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়।’

চট্টগ্রামের উন্নয়ন নিয়ে নিজস্ব পরিকল্পনার কথা জানিয়ে ইউনুছ বলেন, ‘চট্টগ্রামের উন্নয়ন ঘিরে আমার নিজস্ব কিছু পরিকল্পনা আছে। তবে এখনো পেশ করার সময় হয়নি। এর আগে, সিডিএর প্রতিটি চলমান প্রকল্প সম্পর্কে খুঁটিনাটি বিষয় জানতে হবে। তবে পরিকল্পনা পেশ করার আগে নগর পরিকল্পনাবিদ, বিশেষজ্ঞসহ সচেতন মহলের সাথে আলোচনা করে সবার মতামত নেওয়া হবে। এরপর আগামী ৫০ বছর পর চট্টগ্রাম শহর কেমন হতে পারে সেই লক্ষ্য নিয়ে পরিকল্পনা করবো।’

জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প সম্পর্কে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ বলেন, ‘বছরের পর বছর বর্ষার সময় জলাবদ্ধতা সমস্যায় ভোগেন নগরবাসী। নগরের নিচু এলাকার মানুষ সব থেকে বেশি ভোগান্তির স্বীকার হয়। তবে চলমান বিভিন্ন প্রকল্পের মধ্যে বিশেষভাবে প্রাধান্য দেওয়া হবে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প। চলমান প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করা হবে। এছাড়া প্রতিটা প্রকল্প সরেজমিনে নিজ পায়ে হেঁটে দেখবো।’

অতীতে বিভিন্ন সময় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সাথে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) কাজে সমন্বয়হীনতার অভিযোগের কথা তুলে ধরলে তিনি বলেন, ‘অতীতে যেমন হয়েছে এখন আর তা হবে না। চসিক মেয়র আমার পরম বন্ধু। আমরা দুই ভাই একসময় রাজপথে সংগ্রাম করেছি। স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছি। আমরা দুজন পাশাপাশি থেকে চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য কাজ করবো।’

প্ল্যান বহির্ভূত ভবন নিয়ে জিরো টলারেন্স দেখানো হবে জানিয়ে নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘যেখানে সেখানে প্ল্যান বহির্ভূত ভবন নির্মাণ করা হলে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আগামীতে এসব ক্ষেত্রে আমার অবস্থান হবে কঠোর। তাছাড়া এখন তাপপ্রবাহে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ। জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাই বৃক্ষরোপণের কোনো বিকল্প নেই। আগামী দিনের পরিকল্পনার মধ্যে চট্টগ্রামে একটি কৃত্রিম বনায়নকে প্রধান্য দেওয়া হবে। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের সাথে আলোচনা করে নতুন নতুন পন্থা বের করার চেষ্টা করা হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *