জাতীয়

সেই মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার

‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ। বুধবার (১ মে) রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে ডিবি পুলিশের একটি দল তাকে গ্রেপ্তার করে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিবি পুলিশের প্রধান হারুন অর রশীদ। তিনি জানান, মিল্টনকে সুর্নিদিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বর্তমানে আমাদের হেফাজতে আছেন। এ ব্যাপারে পরে বিস্তারিত জানানো হবে।

সম্প্রতি মিল্টন সমাদ্দারের বিভিন্ন অপকর্ম নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে নিয়ে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। মুখ খুলতে থাকেন ভুক্তভোগীরা।

প্রসঙ্গত, মিল্টন সমাদ্দার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ নামের বৃদ্ধাশ্রম গড়ে রাস্তা থেকে অসুস্থ কিংবা ভবঘুরেদের কুড়িয়ে সেখানে আশ্রয় দেন। সেসব নারী, পুরুষ ও শিশুকে নিয়ে ভিডিও তৈরি করে প্রায়ই তাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করতে দেখা যায়। তার পাঁচটি ফেসবুক পেজে ফলোয়ার প্রায় ২ কোটি। মানুষের অসহায়ত্ব তুলে ধরে তাদের জন্য বিত্তবানদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। তার আবেদনে সাড়া দিয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ১৬টির বেশি নম্বর এবং তিনটি ব্যাংক হিসাবে প্রতি মাসে প্রায় কোটি টাকা জমা হয়। এর বাইরে অনেকেই তার প্রতিষ্ঠানে সরাসরি অনুদান দিয়ে আসেন। মানবিক কাজের জন্য এখন পর্যন্ত তিনটি রাষ্ট্রীয় পুরস্কারও পেয়েছেন মিল্টন সমাদ্দার।

প্রকৃতপক্ষে তিনি যে কয়জনকে লালন-পালন করছেন, প্রচার করছেন তার চেয়ে কয়েক গুণ। লাশ দাফন করার যে হিসাব দিচ্ছেন, তাতেও আছে বিরাট গরমিল। সবচেয়ে ভয়ংকর, মিল্টনের বিরুদ্ধে রয়েছে অসহায় মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার নামে তাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রির অভিযোগ।

মিল্টন সমাদ্দারের ব্যক্তি জীবনেও নৈতিকতা বা মানবিকতার বালাই নেই। কিশোর বয়স থেকেই ছিলেন অর্থলোভী। প্রতিবেশী, চিকিৎসক কিংবা সাংবাদিকরা বিভিন্ন সময় তার কাছে শারীরিক লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন। এমনকি নিজের জন্মদাতা বাবাকেও বেধড়ক মারধরের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদনে মানবসেবার অন্তরালে যে নির্মম ও বর্বরোচিত চিত্র ফুটে উঠেছে তা অত্যন্ত ভয়াবহ। মানবসেবা পরম ধর্ম কিন্তু মানব সেবার নামে মুখোশের আড়ালে রাস্তা থেকে অসুস্থ, অসহায় ও নিরীহ মানুষকে তুলে এনে চিকিৎসার নামে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রির যে অভিযোগ মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে উঠেছে তা অত্যন্ত ভীতিকর, ন্যাক্কারজনক ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।

গুরুতর অসুস্থদের হাসপাতালে না নিয়ে নিজ প্রতিষ্ঠানে আটকে রাখা, ভুয়া ডাক্তার কর্তৃক মৃত্যুর সার্টিফিকেট তৈরি করা কিংবা মৃত লাশের শরীরে কাটাছেঁড়ার যে তথ্য প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

মিল্টনের হিসাবে, অসহায় মানুষদের জন্য বিত্তবানদের দেওয়া প্রতি মাসে সহায়তা হিসেবে জমা পড়ে গড়ে প্রায় ৫০ লাখ টাকা। এসব টাকায় রাজধানীর দক্ষিণ পাইকপাড়ায় গড়ে তুলেছেন ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’। বর্তমানে মিল্টন এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান। সেখানে ২০ জনের মতো বৃদ্ধ-বৃদ্ধা আশ্রিত রয়েছেন বলে জানান তিনি।

আর সাভারে কেনা জমিতে নির্মাণ করেছেন ছয়তলা ভবন। যেখানে নারী, শিশু ও বৃদ্ধ পুরুষদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে থাকছেন দুইশত পয়তাচল্লিশ জনের মতো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *