সেন্টমার্টিনে যাননি কোন প্রার্থীই
প্রচারণা শেষ হলেও সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাননি কোন প্রার্থী। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ এলাকার ভোটাররা। তাছাড়া ভোট নিয়ে তেমন আগ্রহও নেই দ্বীপবাসীর। তবে প্রার্থীদের পোস্টার দেখা গেলেও টেকনাফের সেন্টমার্টিনে নেই নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা। দ্বীপবাসীর কাছে ভোট চাইতে আসেননি প্রতিদ্বন্দ্বী ৭ জনের কোনো প্রার্থী।
দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের লোকসংখ্যা ১১ হাজার ৩০০। ভোটার সংখ্যা ৩ হাজার ৬৭৪। পুরুষ ১৮৩৮ জন মহিলা ১৮৩৬ জন।
পুরো দ্বীপের ভোটারদের জন্য জিনজিরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি মাত্র কেন্দ্র। ভোটগ্রহণের সময় ঘনিয়ে এলেও টেকনাফ উপজেলার সেন্টমার্টিনে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সাতজন প্রার্থীর কারও পা পড়েনি।
২৯৭ কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাতজন প্রার্থী। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য শাহীন আক্তার (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী ও টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নুরুল বশর (ঈগল), জাতীয় পার্টির নুরুল আমিন (লাঙ্গল), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) ফরিদুল আলম (আম), তৃণমূল বিএনপির মুজিবুল হক (সোনালী আঁশ), ইসলামী ঐক্যজোটের মোহাম্মদ ওসমান গনি চৌধুরী (মিনার) এবং বাংলাদেশ কংগ্রেসের মোহাম্মদ ইসমাইল (ডাব)।
এবারের নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নৌকার সঙ্গে ঈগলের। দুই প্রতীকের পক্ষে প্রচারণা নিয়ে উখিয়া ও টেকনাফ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত। ভোটকেন্দ্রে না যেতে সেন্টমার্টিনেও ঘরে ঘরে গিয়ে নারী-পুরুষ ভোটারদের নিষেধ করছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। বিলি করছেন প্রচারপত্র। দ্বীপের অর্ধেকের বেশি ভোটার বিএনপি সমর্থক।
এ আসনে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ২৬ হাজার ৯৭১। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৬৭ হাজার ১৪১। নির্বাচন উপলক্ষ্যে ৬ থেকে ৮ জানুয়ারি টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে জাহাজ চলাচল বন্ধ রেখেছে জেলা প্রশাসন।
নৌকা প্রতীকের পক্ষে দ্বীপে প্রচারণা চালাচ্ছেন সেন্টমার্টিনদ্বীপের ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আলমের নেতৃত্বে দলের নেতা-কর্মীরা।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের কিছু নেতা-কর্মীসহ ইউনিয়ন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ঈগল প্রতীকের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডে ৯ জন ইউপি সদস্য ও সাবেক ইউপি সদস্যরা নৌকা ও ঈগল প্রতীকের পক্ষে দ্বিধাবিভক্ত।
ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, নৌকার সঙ্গে ঈগলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলেও এগিয়ে থাকবেন শাহীন আক্তার। কারণ তাঁর স্বামী ও সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির জনপ্রিয়তা বেশি এই দ্বীপে। প্রচারণার সময়কালে কোন প্রার্থী দ্বীপে না আসলেও তফসিল ঘোষণার পর আবদুর রহমান বদি একবার দ্বীপে এসেছিলেন।
সেন্টমাটিনদ্বীপ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নুরুল আলম বলেন, প্রহসনের এই নির্বাচনে বিএনপি সমর্থক কোনো ভোটার কেন্দ্রে যাবেন না। ইতোমধ্যে ভোটারদের ঘরে ঘরে প্রচারপত্র বিলি করা হয়েছে।
উত্তর পাড়ার জেলে রহিম উল্লাহ (৪৮) বলেন, নির্বাচনে কারা প্রার্থী হয়েছেন আমরা জানি না। তবে দ্বীপের বাজারে নৌকা ও ঈগল প্রতীকের পোস্টার দেখেছি।
জেলে সলিম উল্লাহ (৫০) বলেন, ভোট তো আগেও দিয়েছিলাম। গরিব মানুষের লাভ হয়নি। সাগরে দুই মাস ধরে মাছ ধরা পড়ছে না। দ্বীপেও কাজকর্ম নেই। অধিকাংশ মানুষের পেটে ভাত জুটছে না। এখন ভোট নিয়ে চিন্তা করার সময় কই।
মাঝরপাড়ার কৃষক আবদুল নবী বলেন, সেন্টমার্টিনের ৯০ শতাংশ মানুষ পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। চাল, তেল, মাছ, মাংস, মুরগি, তরিতরকারি-সবজির দাম অন্যান্য এলাকার তুলনায় অনেক বেশি। দ্বীপের কোথাও পোলট্রি ফার্ম নেই। চাষাবাদের জমিও কমে গেছে। রোজগারের বিকল্প ব্যবস্থাও নেই। জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতারা গরিবের খোঁজ নেন না।
সেন্টমার্টিন ট্রাভেলসের পরিচালক নুর মোহাম্মদ বলেন, ডিসেম্বর মাসে প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার পর্যটক দ্বীপ ভ্রমণে আসেন। তখন দ্বীপের কিছু মানুষের রোজগার হয়, দোকানপাটে বেচাবিক্রিও ভালো হয়। ৭ জানুয়ারির নির্বাচন উপলক্ষ্যে পর্যটকের আগমন কমে গেছে। গত বুধবার তিনটি জাহাজে এসেছেন প্রায় পাঁচ’শ জন, বৃহস্পতিবার তিন’শ জনের মতো এসেছেন। ৬ জানুয়ারি থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত তিন দিন জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকবে। তখন পুরো দ্বীপ পর্যটকশূন্য হয়ে পড়বে। মানুষের অভাব-অনটন আরও বাড়বে।
পশ্চিম পাড়ার ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন (৪৮) বলেন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা ঘরে ঘরে গিয়ে নৌকা ও ঈগল প্রতীকের জন্য ভোট চাইছেন। তারপরও দ্বীপের অর্ধেকের বেশি ভোটার কেন্দ্রে যান কি না সন্দেহ আছে। সেন্টমার্টিন বাজারে নৌকা ও ঈগল প্রতীকের পৃথক নির্বাচনী কার্যালয় রয়েছে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চেয়ার-টেবিল খালি পড়ে থাকে।