চট্টগ্রাম

সৌন্দর্যবর্ধনের নামে বাণিজ্যিক স্থাপনা, গণপূর্তের আপত্তি

নগরের চকবাজার–মুরাদপুর সড়কের কাতালগঞ্জে রাস্তার পাশে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণে আপত্তি আছে গণপূর্ত বিভাগের। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে (চসিক) একটি চিঠিও দিয়েছে সংস্থাটি। অবশ্য জায়গাটিতে সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে কয়েকটি অবকাঠামো নির্মাণ করেছে মিরাক্যাল মাইলস ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। যেখানে শামিয়ানা টাঙ্গিয়ে গত কয়েকদিন ধরে মেলা বসিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এতে মৃৎশিল্প, মাটির তৈজসপত্র, কসমেটিস ও স্টেশনারিসহ প্রায় ৩০টি স্টল রয়েছে। এর আগে জাতীয় নির্বাচনের দুই দিন আগেও এখানে আরেকটি মেলা শেষ হয়। গতকাল কয়েকটি স্টল মালিকের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, প্রতি স্টল এক সপ্তাহের জন্য তারা ১২ হাজার টাকায় ভাড়া নিয়েছেন। বিক্রি কম হওয়ায় আয়োজকরা সময় বৃদ্ধি করতে পারে বলেও জানায় তারা।

মেলার বাইরে কয়েকটি ব্যানার দেখা গেছে। এতে লেখা ছিল, ‘সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ চলছে। বাস্তবায়নে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। সার্বিক সহযোগিতায় গণপূর্ত অধিদপ্তর।’

জানা গেছে, গত ১৬ ডিসেম্বর সেখানের একাংশে নির্মিত কিডস জোন ও জিম সেন্টারের উদ্বোধন করেন কাউন্সিলর নূর মোস্তফা টিনু। মিরাক্যাল মাইলস ইন্টারন্যাশনাল এর কর্মকর্তাদের দাবি তারা চসিক থেকে সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের অনুমতি নিয়েছেন। তবে চসিকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে কোনো চুক্তি হয়নি।

গণপূর্তের আপত্তি : চট্টগ্রাম গণপূর্ত বিভাগ–১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহ স্বাক্ষরিত পত্রটি কয়েকদিন আগে চসিকে পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পাঁচলাইশ আবাসিক জোন গড়ে তোলার জন্য তৎকালীন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মাধ্যমে ৬৯ দশমিক ৩৫৭ একর জমি তৎকালীন ইমারত পরিদপ্তর বা বর্তমানে গণপূর্ত অধিদপ্তরের নামে অধিগ্রহণ করে বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট প্লট আকারে বরাদ্দ প্রদান করা হয়। আবাসিক এলাকার রাস্তাসমূহ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ১৯৮৮ সালে সিটি কর্পোরেশনকে হস্তান্তর করা হয়। যার প্রেক্ষিতে রাস্তা সম্প্রসারণ, মেরামত, ফুটপাত সংস্কারসহ আনুষাঙ্গিক কাজসমূহ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক অদ্যাবধি রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে।

পত্রে বলা হয়, সম্প্রতি কাতালগঞ্জস্থ নবপন্ডিত বৌদ্ধ বিহারের পর হতে বিদ্যমান রাস্তার পার্শ্ববর্তী খালি জায়গাসমূহ যা অবৈধ দখলদার কর্তৃক এতদিন দখলে ছিল তা উচ্ছেদ করে ফুটপাত সম্প্রসারণ, বাগান নির্মাণ ও ল্যান্ডস্কেপিং, রাস্তায় যত্রতত্র ময়লা ফেলায় তার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য এসটিএস নির্মাণ, বীরশ্রেষ্ঠ ম্যুরাল স্থাপন, মুক্তিযুদ্ধের স্মারক, বসার সিটিং, যাত্রী ছাউনি নির্মাণসহ আরো বেশ কিছু নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির জন্য সিটি কর্পোরেশন উদ্যোগ নেয়। কিন্তু সম্প্রতি জানা যায়, উক্ত সৌন্দর্যবর্ধন কাজের সাথে কিছু বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। পত্রে সৌন্দর্যবর্ধন কাজের অধীনে নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধি ব্যতীত কোনো বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ না করার জন্য অনুরোধ করা হয়।

চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম গণপূর্ত বিভাগ থেকে চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। মেলা বসানোর বিষয়ে তিনিও অবগত নন বলে জানান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জায়গাটিতে সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প বাস্তবায়নে কারো সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়নি।

মিরাক্যাল মাইলস ইন্টারন্যাশনালের কর্মকর্তা ওমর ফারুক বলেন, যেখানে মেলা চলছে সেখানে কিডস জোন সেন্টার করা হবে। ইতোমধ্যে একটি কিডস জোন করেছি। সেখানে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুরা বিনামূল্যে বিভিন্ন রাইড উপভোগ করছেন। নতুন কিডস জোনে ১২ থেকে ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। নতুন নির্মাণ করা কিডস জোনে ফি নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

পুরো প্রকল্পের কাজ কতটুকু শেষ হয়েছে জানতে চাইলে বলেন, প্রায় অর্ধেক শেষ হয়েছে। সিটি কর্পোরেশন থেকে যেভাবে নির্দেশনা দেয়া হবে সেভাবে করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *