৪৬ কোটি টাকার অনিয়ম অধিকতর তদন্তে দুদক
নগরের পোর্ট কানেকটিং রোডের উন্নয়ন কাজকে ঘিরে সংঘটিত ‘অনিয়ম’ এর অভিযোগটি অধিকতর তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ উন্নয়ন প্রকল্প ঘিরে জাল–জালিয়াতির মাধ্যমে ৪০ কোটি আত্মসাৎ এবং ৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগ রয়েছে প্রকল্পের ঠিকাদার, চসিকের তৎকালীন প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা ও একটি বেসরকারি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, উত্থাপিত অভিযোগ অধিকতর তদন্তে দুদক প্রধান কার্যালয়ের পরিচালক মো. বেনজীর আহম্মদকে কয়েকদিন আগে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। অভিযোগ তদন্তে আজ বুধবার তার চসিকের প্রধান কার্যালয়ে আসার কথা রয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবারও তিনি সেখানে অবস্থান করবেন। চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে তা অবগত করা হয়েছে।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, পোর্ট কানেকটিং রোডের উন্নয়ন কাজের জন্য চারটি প্যাকেজে নিয়োগ দেওয়া হয় ঠিকাদার। এর মধ্যে দুই নম্বর প্যাকেজে বড়পোল থেকে তাশফিয়া আনন্দিপুর গেট পর্যন্ত এক দশমিক ৬৭৫ কিলোমিটার সড়কের জন্য ৫০ কোটি ৫৮ লাখ ৬৩ হাজার ৩৩৯ টাকায় মেসার্স রানা বিল্ডার্সকে ২০১৭ সালের ৫ ডিসেম্বর কার্যাদেশ দেওয়া হয়। একইদিন তিন নম্বর প্যাকেজে নিমতলা বিমান চত্বর থেকে বড়পোল ব্রিজ পর্যন্ত এক দশমিক ৬৮২ কিলোমিটার সড়কের জন্য ৫০ কোটি ৮২ লাখ ৭০ হাজার ৩৩৮ টাকায় মেসার্স রানা বিল্ডার্স–সালেহ আহমদকে (জেভি) কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুটি কাজের বিপরীতে ঋণ নিয়েছে ইউসিবিএল কুমিল্লা শাখা থেকে। এক্ষেত্রে হওয়া লিয়েন অনুযায়ী, উন্নয়ন কাজের বিলের টাকা ব্যাংকের নির্ধারিত হিসাবে (ইউসিবিএল, কুমিল্লা শাখা) জমা করতে হবে চসিককে। তবে চসিক মেসার্স রানা বিল্ডার্সকে ২৮ কোটি ৬৯ লাখ ২০ হাজার ৩৬৫ টাকা এবং মেসার্স রানা বিল্ডার্স–সালেহ আহমদ (জেভি)-কে ৩১ কোটি ৪৩ লাখ ৮৩ হাজার ১৮৬ টাকা পৃথক ২০টি চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করে। এর মধ্যে ৬টি চেক ব্যাংকের নির্ধারিত হিসাবের নামে ইস্যু করা করা হয়। তার পরিমাণ ১৯ কোটি ৭২ লাখ ৭৭ হাজার ২১৮ টাকা। বাকি ১৪টি চেক সরাসরি ঠিকাদারের নামে ইস্যু করেন চসিকের তৎকালীন প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। যার পরিমাণ ২৪ কোটি ৯১ লাখ ৯৬ হাজার ৩০৭ টাকা। বিপুল অংকের এ টাকা পেয়ে মাঝপথে কাজ ফেলে পালিয়ে যায় দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। অবশ্য পরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়ার্ক অর্ডার বাতিল করে চসিক। কালো তালিকাভুক্তও করা হয়। নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে কাজ সম্পন্ন করা হয়।
তবে সৃষ্ট অনিয়ম তদন্ত শুরু করে দুদক। এর প্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ১০ মে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক ও ব্যাংক কর্মকর্তাসহ আটজনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করে দুদক। ওই মামলায় চসিকের সাবেক প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা সাইফুদ্দিনকে যুক্ত করে চার্জশিট দেওয়া হয় গত বছরের ১৪ আগস্ট। যদিও ২১ আগস্ট শুনানিতে চার্জশিট গ্রহণ না করে তা পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত। অবশ্য আর্থিক অনিয়ম প্রমাণিত হওয়ায় গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনকে অবসরে পাঠায় চসিক।
দুদকের মামলায় যাদের আসামি করা হয় তারা হচ্ছেন মেসার্স রানা বিল্ডার্স প্রাইভেট লিমিটেডের সাবকন্ট্রাকটর কুমিল্লার ঝাউতলা এলাকার মো. জাকির হোসেন, ওই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. আলম, ফেনী সদর এলাকার বাসিন্দা ছালেহ আহমদ, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের (ইউসিবিএল) এফভিপি মো. সরোয়ার আলম, এভিপি মো. আনিসুজ্জামান, এফএভিপি ছাইফুল আলম মজুমদার, সিনিয়র এঙিকিউটিভ অফিসার মকামে মাহমুদুল ইসলাম আরেফিন ও সিনিয়র এঙিকিউটিভ অফিসার দেবু বোস।
দুদকের মামলার এজাহার অনুযায়ী, কাজ অসমাপ্ত রাখায় সরকারি প্রায় ৭ কোটি টাকার ক্ষতিসাধন হয়েছে। এছাড়া পিসি রোডের দুই প্যাকেজের কাজ নিয়ে জাকির হোসেন ও ছালেহ আহমদকে আমমোক্তার বানিয়ে সাবকন্ট্রাক্টর নিয়োগ দেন। এই সুযোগে জাকির হোসেন রানা বিল্ডার্সের সঙ্গে নতুন একটি জয়েন্ট ভেঞ্চার প্রতিষ্ঠান খুলে নিজেকে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাজিয়ে ইউসিবিএল কুমিল্লা শাখায় আলাদা আলাদা ব্যাংক হিসাব খুলে দুই কাজের বিপরীতে ২০ কোটি টাকা করে ৪০ কোটি টাকা ঋণ নেন, যা সুদে–আসলে ৪৬ কোটি ৩২ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।