জাতীয়

৫ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীকে পেনশনের আওতায় আনার চিন্তা

বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের দীর্ঘদিনে দাবি অবশেষে পূরণ হতে চলেছে। সরকারি কর্মচারীদের মতো পেনশনের আওতায় আসতে যাচ্ছেন দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত ৫ লাখের বেশি শিক্ষক-কর্মচারী। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে শিক্ষকরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারলে বর্তমান সরকার ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকবে। শিক্ষকবান্ধন এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত থেকে যেন সরকার পিছপা না হয় সেজন্য শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।

জানা গেছে, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে বেসরকারি শিক্ষকদের কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর বোর্ডের আর্থিক সংক্রান্ত এক সভায় শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরীর উপস্থিতিতে এমন প্রস্তাব তুলা হয়েছে।

সভায় এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করলে সরকারের অতিরিক্ত কত টাকা খরচ হবে তার সাংসংক্ষেপ মন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করার জন্য একটি কমিটি করে দেওয়া হয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

শিক্ষামন্ত্রী ছাড়াও শিক্ষা প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা সভায় অংশ নেন। সভায় একজন শিক্ষক নেতা সরকারের সর্বজনীন পেনশনের মতোই এমপিওভুক্ত শিক্ষকদেরও পেনশন চালুর বিষয়ে সভায় প্রস্তাব করা পর শিক্ষামন্ত্রী তাতে সায় দেন।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরাও চাই বেসরকারি শিক্ষকরা সরকারি কর্মচারীর মত পেনশনসহ অন্যান্য সুবিধা পাবেন। কিন্তু সরকারের সেই সক্ষমতা আছে কি না তা যাচাই বাছাই করতে হবে। একজন কমিটি করে দিচ্ছি। সেই প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবো।

প্রাথমিকে প্রস্তাবে বলা হয়, অবসরের পর বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা এককালীন টাকার পাশাপাশি প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পাবেন। বেসরকারি শিক্ষকরা চাকরিজীবন শেষে অবসরের পুরো টাকা একসঙ্গে পাবেন না। অবসরের অর্ধেক টাকা এককালীন পরিশোধ করা হবে। বাকি অর্ধেক টাকা তাদের পেনশন আকারে দেওয়া হবে। পেনশনের টাকা শিক্ষকরা আজীবন পাবেন। কোনো শিক্ষক মারা গেলে তার মনোনীত ব্যক্তিকে (নমিনি) পেনশনের টাকা দেওয়া হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, পেনশন চালু হলে ‘বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী পেনশন বোর্ড’ গঠন করা হবে। আর ‘বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ড’ ও ‘বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট’ বিলুপ্ত হবে।

সভায় অংশ নেওয়া বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য সচিব ও স্বাধীনতা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলম সাজু বলেন, বেসরকারি শিক্ষকদের পেনশন চালু নিয়ে ওই সভায় আলোচনা হয়েছে। এটা বাস্তবায়ন করতে গেলে কত টাকা অতিরিক্ত লাগবে তা তথ্য চাওয়া হয়েছে। আমরা আশা করবো্, বর্তমান শিক্ষামন্ত্রীর হাত ধরেই এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হবে।

বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের সচিব অধ্যক্ষ শরীফ মোহাম্মদ সাদী বলেন, সরকারি কর্মচারীদের মত বেসরকারি শিক্ষকরাও পেনশন পাবেন এই স্বপ্ন দীর্ঘদিনের। সরকার সর্বজনীন পেনশন চালুর পর সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে। সম্প্রতি এক সভায় শিক্ষামন্ত্রীর আমাদের প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন।

তিনি জানান, সর্বজনীন পেনশনের আদলে বেসরকারি শিক্ষক ও কর্মচারীদেরও পেনশন চালু করা যায়। এটি বাস্তবায়ন করতে হলে অবসর বোর্ডের আইন পরিবর্তন করতে হবে। সেজন্য সভায় উচ্চ পর্যায়ের একটি কারিগরি কমিটি গঠনের প্রস্তাব উঠেছে।

এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা ১৯৯০ সাল থেকে কল্যাণ ট্রাস্টের সুবিধা পাচ্ছেন। ২০০৫ সালে শুরু হয়েছে অবসর সুবিধা দেওয়া। এ দুই সুবিধা বাবদ তারা এককালীন অর্থ পেয়ে থাকেন। এ জন্য শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনের এমপিও অংশ থেকে চাঁদা হিসেবে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ কেটে রাখা হয়।

তবে অর্থ সংকটের কারণে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ড ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট বর্তমানে ধুঁকছে। যে কারণে অবসরের পর টাকা পেতে দুই থেকে তিন বছর লেগে যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *