চট্টগ্রাম

সরকারি ৬ হ্যাচারি, জনবল নেই একজনও

প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীর দুই পাড়ে সরকারি হ্যাচারি রয়েছে ৬টি, কিন্তু জনবল নেই একজনও। হালদা থেকে রুই জাতীয় (রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ) মাছের ডিম সংগ্রহের পর এসব হ্যাচারিতে রেণু ফোটানো হয়। কিন্তু যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ, তদারকি ও দেখভালের অভাবে হ্যাচারিগুলো অল্পসময়ের মধ্যে অকেজো হয়ে পড়ছে। তাতে ডিম সংগ্রহকারীদের কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন করতে পারছে না হ্যাচারিগুলো।

বংশ পরম্পরায় হালদা নদীর রুই জাতীয় মাছের ডিম থেকে রেণু ফোটানো হতো মাটির কুয়াতে। সংগ্রহকারীরা নদী থেকে ডিম সংগ্রহ করে নিজেদের মাটির কুয়াতে রেণু ফোটাতেন। ওইসময়ে হালদাপাড়ে সরকারিভাবে কোন হ্যাচারি ছিল না। নব্বই দশকের শেষের দিকে হাটহাজারীর মদুনাঘাট বড়ুয়া পাড়া এলাকায় রেণু ফোটানোর জন্য প্রথম সরকারিভাবে একটি হ্যাচারি নির্মাণ করে মৎস্য অধিদপ্তর।

এরপর ২০০২ সাল থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে ‘হালদা নদীর প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র পুনরুদ্ধার’ প্রকল্পের আওতায় একই উপজেলার মাদারিপুল এলাকায় শাহ মাদারি হ্যাচারি, মাদার্শা মাছুয়াঘোনা হ্যাচারি, রাউজানের কাগতিয়া হ্যাচারি, পশ্চিম গহিরা হ্যাচারি ও মোবারকখীল হ্যাচারি নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের পর এসব হ্যাচারিতে রেণু ফোটাতেন ডিম সংগ্রহকারীরা। পুরো বছরের মধ্যে হ্যাচারিগুলো ব্যবহার করা হয় মাত্র পাঁচ থেকে সাতদিন। এরপর এগুলো সারাবছরই অব্যবহৃত থাকে।

বছর শেষে আবারও ডিম ধরা মওসুম আসলে হ্যাচারিগুলো একটু সংস্কার কাজ করে ডিম সংগ্রহকারীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় মৎস্য অধিদপ্তর। কিন্তু দেখভাল করার জন্য সরকারিভাবে কোন জনবল না থাকায় হ্যাচারিগুলো ব্যবহার হচ্ছে অনেকটা জোড়াতালি দিয়ে। এমনকি অপরিকল্পিত স্থান নির্বাচন ও ত্রুটিপূর্ণ নির্মাণের কারণে এক বছরের মধ্যে পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে রাউজানের কাগতিয়া হ্যাচারি। অনেকটা জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে রাউজানের পশ্চিম গহিরা হ্যাচারি।

বর্তমানে পুরোপুরি সচল আছে মদুনাঘাট বড়ুয়া পাড়া হ্যাচারি, শাহ মাদারি হ্যাচারি, মাদার্শা মাছুয়াঘোনা হ্যাচারি ও রাউজানের মোবারকখীল হ্যাচারি। কিন্তু এসব হ্যাচারি দেখভাল করার জন্য নেই সরকারি কোন জনবল। তাই নির্মাণের দেড় যুগের মধ্যে হ্যাচারিগুলো ডিম সংগ্রহকারীদের কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন করতে পারছে না।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নদী বিশেষজ্ঞ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক প্রফেসর ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, অপরিকল্পিত স্থান নির্বাচন, ত্রুটিপূর্ণ নির্মাণ ও দেখভাল করার জন্য সরকারি লোকবল না থাকায় হ্যাচারিগুলো থেকে প্রকৃত সুফল পাচ্ছে না ডিম সংগ্রহকারীরা। এসব সমস্যা সমাধানে মৎস্য বিভাগকে এগিয়ে আসতে হবে।

জানতে চাইলে হালদা প্রকল্প পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, হ্যাচারিগুলো দেখভাল করার জন্য জনবল চাওয়া হয়েছে। জনবলপ্রাপ্তি সাপেক্ষে সেখানে জনবল দেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *