মেঘনায় বড় প্রকল্প ওয়াসার
হালদা, কর্ণফুলীর পর এবার মেঘনা নদীতে হাত বাড়িয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। মেঘনা নদী থেকে পানি এনে প্রথমে মিরসরাই ইকোনমিক জোন, পরে সীতাকুণ্ড এলাকায়, পরবর্তীতে চট্টগ্রাম শহরে পানি সরবরাহ করবে সরকারি সেবা সংস্থাটি। এজন্য এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় প্রকল্পটি গ্রহণ করেছে ওয়াসা। প্রকল্পটি এখন ইতালিভিত্তিক কনসালটেন্সি ফার্ম টানজেকশন এডভাইজার হিসেবে কাজ করছে। তাদের রিপোর্ট পাওয়ার পর সরকারের কেবিনেট কমিটি ফর ইকোনমিক এফেয়ার্স (সিসিইএ)-তে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। সেখান থেকে অনুমোদনের পর বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে।
প্রকল্প সূত্র জানায়, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি)-জিটুজি প্রক্রিয়ায় মেঘনা নদী হতে পানি পরিশোধনপূর্বক পানি সরবরাহ’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ২০২৭ সাল নাগাদ পানি উৎপাদন হবে দৈনিক ২৫ কোটি লিটার। এরপর দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০৩১ সাল নাগাদ উৎপাদন হবে দৈনিক আরো ২৫ কোটি লিটার, ২০৪১ সালে হবে দৈনিক আরো ৫০ কোটি লিটার। সবমিলে প্রকল্পে মোট উৎপাদন ক্ষমতা ধরা হয়েছে ১০০ কোটি লিটার। বৃহৎ এ প্রকল্পের জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে চার হাজার ৮০৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা। প্রকল্পের মাধ্যমে নির্মাণ করা হবে একটি ইনটেক স্টেশন, ২টি পাম্প স্টেশন, একটি করে রিজার্ভার ও পানি শোধনাগার। প্রকল্পের জন্য মোট ভূমির প্রয়োজন হবে ২২১ দশমিক ৬৯ একর। এরমধ্যে রেলওয়ের ১৪২ দশমিক ২ একর, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ৬ দশমিক ৪৭ একর, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১৪ দশমিক ৫৫ একর, জেলা পরিষদের তিন দশমিক ২ একর, জেলা প্রশাসনের ৯ দশমিক ৯ একর, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ৩১ দশমিক ৮৭ একর এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন ১৪ দশমিক ৬৭ একর। মূলত প্রকল্পের বেশিরভাগ পাইপলাইন রেললাইনের পাশ দিয়ে বসানো হবে। এ কারণে রেলের জায়গা পড়েছে সবচেয়ে বেশি।
ওয়াসা সূত্র জানায়, ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম ওয়াসার বর্তমানে পানি উৎপাদন ক্ষমতা দৈনিক ৫০ কোটি লিটার। ওয়াসার বর্তমানে সবচেয়ে বড় দুইটি প্রকল্প হচ্ছে শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-১ ও ২। এ দুইটি প্রকল্পের পানি উৎপাদন ক্ষমতা দৈনিক ২৮ কোটি লিটার। কিন্তু এবার সবকিছু ছাপিয়ে ওয়াসা সর্ববৃহৎ এই প্রকল্পটি গ্রহণ করছে। প্রকল্পের মাধ্যমে চাঁদপুর সদরের পুরাতন বড় স্টেশন এলাকায় পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মোহনাকে পানি উত্তোলনের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখান থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে চাঁদপুর, কুমিল্লার লাকসাম, চৌদ্দগ্রাম, ফেনী ও মিরসরাই ইকোনমিক জোন পর্যন্ত পানি আসবে। ওখান থেকে পরবর্তীতে সীতাকু- হয়ে চট্টগ্রাম শহর পর্যন্ত পাইপলাইন নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে ওয়াসার। চাঁদপুর থেকে মিরসরাই পর্যন্ত পাইপলাইন বসবে ১৫০ দশমিক ৭৪ কিলোমিটার।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, ‘পানি উৎপাদনের সর্ববৃহৎ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন নিয়ে এগুচ্ছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এটিই হবে ওয়াসার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রকল্প। এটির কয়েক ধাপে উৎপাদন ধরা হয়েছে দৈনিক ১০০ কোটি লিটার। প্রকল্পটির মাধ্যমে মেঘনা নদী থেকে পানি উত্তোলন করে প্রথম পর্যায়ে মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরীতে ও সীতাকু- এলাকায় এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে চট্টগ্রাম শহরে পানি সরবরাহ দেওয়া হবে।’
ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক নুরুল আমিন বলেন, ‘চট্টগ্রাম ওয়াসা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সামনে রেখে কাজ করছে। বর্তমানে হালদা ও কর্ণফুলী নদী থেকে পানি উত্তোলন করে চট্টগ্রাম শহরে সরবরাহ করা হচ্ছে। আগামীতে কোন কারণে এ দুইটি নদীতে সমস্যা দেখা দিলে শহরে পানি সরবরাহে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটতে পারে। তাছাড়া মিরসরাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরীকে ঘিরে শহরের পরিধি ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। সীতাকুণ্ড ও মিরসরাইতে প্রচুর বসতি ও শিল্প কারখানা হবে। তাই এসব এলাকায় প্রচুর পানির চাহিদা হবে। তাই বিষয়টি মাথায় রেখে ওয়াসা মেঘনা নদী থেকে পানি আনতে এ প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, ‘ওয়াসার ইতিহাসে সর্ববৃহৎ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য খুব দ্রুততার সাথে কাজ করছে ওয়াসা। প্রকল্পের মাধ্যমে প্রথম পর্যায়ে মিরসরাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরী ও সীতাকুণ্ড এলাকায় পানি সরবরাহ করা হবে। এরপর দ্বিতীয় পর্যায়ে চট্টগ্রাম শহরেও পানি নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে।’