ইসলামে হারাম উপার্জন পরিহারের নির্দেশ
ইসলামে সুস্পষ্টভাবে উপার্জন-নীতি সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। উপার্জন অবশ্যই হালাল ও পবিত্র বস্তু হতে হবে।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘হে মানুষ! তোমরা পৃথিবীতে হালাল ও পবিত্র বস্তু খাও। আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কোরো না, নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৬৮)
হারাম উপার্জন দুর্ভাগ্য ও বিপদ ডেকে আনে। হারাম উপার্জনের তোয়াক্কা না করার ফলে সমাজে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, সুদ, ঘুষ, জুয়া, প্রতারণা, মজুদদারি, অর্থ আত্মসাৎ, অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পদ গ্রাস করাসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ ছড়িয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে বিশ্বনবীর (সা.) ভবিষ্যদ্বাণী আছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মানুষের কাছে এমন এক সময় আসবে, যখন মানুষ উপার্জনের ক্ষেত্রে হারাম-হালাল বিবেচনা করবে না। ’ (বুখারি, হাদিস : ২০৫৯)
হারাম উপার্জনের কারণ
অন্তরে আল্লাহর ভয় না থাকা : হারাম উপার্জনে লিপ্ত হওয়ার অন্যতম কারণ হলো, অন্তর থেকে আল্লাহভীতি দূর হয়ে যাওয়া। আল্লাহভীতি মানবাত্মাকে হারামে পতিত হওয়া থেকে রক্ষা করে। আর আল্লাহকে লজ্জা করে অন্যায় কর্ম ত্যাগ করাই হলো প্রকৃত লজ্জা। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহকে যথাযথভাবে লজ্জা করা হলো তুমি তোমার মস্তিষ্ককে যাবতীয় অন্যায় চিন্তা-চেতনা থেকে রক্ষা করবে, পেটকে যাবতীয় হারাম খাদ্য থেকে বাঁচাবে, মৃত্যু ও তৎপরবর্তী বিপদসমূহ স্মরণ করবে। আর যে পারলৌকিক সফলতা কামনা করে, সে যেন পার্থিব চাকচিক্য পরিত্যাগ করে। আর যে ব্যক্তি এসব কর্মকাণ্ড সম্পাদন করবে সে-ই যথাযথভাবে আল্লাহকে লজ্জা করল। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৫৮)
দ্রুত বড়লোক হওয়ার বাসনা : কিছু মানুষ দ্রুততার সঙ্গে অর্থ উপার্জনের চেষ্টায় থাকে। যেকোনো উপায়ে তারা আয়ের ব্যবস্থা করতেও দ্বিধান্বিত হয় না। সুতরাং স্বল্প সময়ে বেশি উপার্জন করাই তাদের অভীষ্ট উদ্দেশ্য ও ঈপ্সিত লক্ষ্য হয়ে থাকে। যার ফলে তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে যে নির্ধারিত জীবিকা পেত, তার সীমা লঙ্ঘন করে দ্রুত উপার্জন করতে চেষ্টা করে। অথচ পার্থিব জীবন ক্ষণস্থায়ী এবং বান্দার রুজি-রোজগার ও আয়-ব্যয়ের হিসাব আল্লাহর কাছে অবশ্যই প্রদান করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন আদম সন্তানের পা তার প্রভুর সামনে থেকে নড়বে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তাকে পাঁচটি প্রশ্ন করা না হবে। (ক) তার জীবন কোথায় শেষ করেছে, (খ) যৌবন কোথায় জীর্ণ করেছে (গ) সম্পদ কোন উৎস থেকে উপার্জন করেছে, (ঘ) কোথায় তা ব্যয় করেছে এবং (ঙ) জ্ঞানানুযায়ী আমল করেছে কি না? (তিরমিজি, হাদিস : ২৪১৬)
অতিরিক্ত অর্থলিপ্সা : হারাম উপার্জনের আরেকটি কারণ হলো মাত্রাতিরিক্ত লোভ ও অল্পে তুষ্ট না হওয়া। আর অতিরিক্ত লোভের বশবর্তী হয়ে মানুষ চুরি-ডাকাতি করতেও দ্বিধা করে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ছাগলের পালে দুটি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘ ছেড়ে দিলে তা যতটুকু না ক্ষতি সাধন করে, কারো সম্পদ ও প্রতিপত্তির লোভ এর চেয়ে বেশি ক্ষতি সাধন করে তার দ্বীনের। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৭৬)
হারাম উপার্জন সম্পর্কে অবহেলা : বহু মানুষ হারাম উপার্জনের স্বরূপ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। তার বিধান কী, ব্যক্তি ও সমাজের ওপর এর কুপ্রভাব কী, এগুলো জানার ব্যাপারে আছে চরম অবহেলা।