নাজিরহাটের ‘মরা খাল’ মরছে ভরছে
হালদার পাদদেশ থেকে নেমে আসা ফটিকছড়ির নাজিরহাটের খরস্রোতা ‘মরা খাল’ মরছে ভরছে। কেউ বাপ-দাদার সম্পত্তি, আর কেউ টাকায় কেনার দাবি নিয়ে দেদারসে ভরাট করছে খালটি। খালের বুক চিরে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ফেলছেন আবর্জনা। ফলে হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য, বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ।
স্থানীয়রা বলছেন, নাজিরহাট ঝংকার মোড়ে দাঁড়ালেই সড়কের পাশে চোখে পড়তো মরা খাল জলাশয়গুলো। এখন আর কিছুই চোখে পড়েনা। দেদারসে ভরাট হয়ে এখন মৃতপ্রায়। বর্ষার সময়ে চরম জলাবদ্ধতারও শঙ্কা করছেন তারা।
স্থানীয় প্রশাসন বলছে, খালটির প্রাণ ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ব্যবস্থা নেওয়া হবে দখলদারদের বিরুদ্ধেও।
জানা গেছে, নাজিরহাটের বুক চিরে বয়ে যাওয়া একসময়ের খরস্রোতা ‘মরা খাল’ চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির নাজিরহাটকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে। নাজিরহাট মাদ্রাসা, বিদ্যালয়, ঝংকার, ডাইনজুরী, পূর্ব-ফরহাদাবাদ ও দক্ষিণ ধুরুং মৌজা ঘেঁষে কয়েকটি গ্রাম ভেদ করে প্রবাহিত হয়েছে অন্তত তিন কিলোমিটার পর্যন্ত। পরে সেটি গিয়ে মিশেছে আরেকটি শাখা খালে।
একসময় মরা খাল ও চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কের পাশের জলাশয়গুলোর পানির উপর নির্ভর করে আশেপাশের জমিগুলোতে ব্যাপক চাষাবাদ হতো। অনেকে মাছ ধরেও জীবিকা নির্বাহ করেছে।
স্থানীয়রা বলেন, নাজিরহাট বাজার ও আশেপাশের এলাকার পানি নিস্কাশনের অন্যতম মাধ্যম ছিল মরা খাল ও চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কের পাশের জলাশয়গুলো। গত কয়েকবছর ধরে মরা খাল ও জলাশয়গুলো সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নাকের ডগায় ভরাট চলছে। মৌরশী সম্পত্তি, কেনা সম্পত্তি দাবি করে বিনাবাধায় ভরাট করছে একটি প্রভাবশালী মহল।
বিভিন্ন কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, আরএস, বিএস খতিয়ান ও সিট মূলে এটি রেকর্ডীয় খাল। ভূমির শ্রেণিও হয়েছে খাল হিসেবে। দৈর্ঘ্য প্রায় তিন কিলোমিটার। নাজিরহাট থেকে শুরু হয়ে খাল ফুরিয়েছে ডাইনজুরীর পূর্বপার্শ্বে একটি শাখা খালে গিয়ে। কিন্তু এ খাল ভরাট ও দখলে আজ বিলীন।
ফলে নাজিরহাট বাজার ও আশেপাশের এলাকায় অল্প বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের। বৃষ্টি না হলেও জমে থাকা পানি দেখে মনে হবে কেবলই বুঝি বৃষ্টি থামল। স্থানীয় লোকজন বলেন, এক দিন সামান্য বৃষ্টি হলে পরের কয়েক দিন বাড়ির সড়কগুলোতে পানি জমে থাকে। গত বর্ষার বেশির ভাগ সময় সড়কগুলোর চিত্র ছিল এমনই। পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় ঘরের উঠোনেও পানি জমে জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আইয়ুব বলেন, খাল ও জলাশয়গুলো উদ্ধার করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে না আনলে হাজার হাজার মানুষকে জলবদ্ধতায় ভুগতে হবে।
নাজিরহাট ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের কর্মকর্তা মো. জাকারিয়া বলেন, ‘খালটির কিছু অংশ ব্যক্তি মালিকানাধীন। বাকি পুরোটাই খাল। আমরা নিয়মিত অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করি। কিন্তু তাতেও তারা দমে না।’
নাজিরহাট আদর্শ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ জালাল বলেন, ‘এখানে আবর্জনা ফেলার কোনো জায়গা নেই। ফলে বাজারের কিছু ব্যবসায়ী খালটিতে ময়লা আবর্জনা ফেলে দূষণ করছেন। এটি কোন অবস্থাতেই কাম্য নয়।’
নাজিরহাট পৌরসভার মেয়র এ কে জাহেদ চৌধুরী বলেন, ‘বাজারের পানি নিস্কাশনের অন্যতম মাধ্যম এটি। একসময় খরস্রোতা ছিল। বর্তমানে এটিতে বিভিন্নভাবে আগ্রাসন চলছে। বাজারের পয়প্রণালি ও বর্জ্য এ খালে ফেলা হচ্ছে। এছাড়া খালটির বিভিন্ন অংশে ভরাট হওয়ায় পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। বিষাক্ত পানি বেড়েছে। তিনি আরো বলেন, যে যার মত করে দখলের ফলে খালটি নিজস্বতা হারিয়েছে। এটি বন্ধ হওয়া দরকার।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ‘উর্ধতনদের সাথে কথা বলে খালটি পূর্বের অবস্থায় ফেরাতে পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হবে। এছাড়া অবৈধ দখলদার ও দূষণের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিলনা। দখল, ভরাট ও বর্জ্য না ফেলার বিষয়ে মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা আছে। দ্রুত অভিযুক্তদের শাস্তির আওতায় এনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।