মিয়ানমারে গোলাগুলির শব্দ, বিকল্প রুটেও সেন্টমার্টিন যাচ্ছে না ট্রলার
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাতের জেরে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তবর্তী মংডু শহরে তুমুল লড়াই চলছে। সেখান থেকে রাতভর বিস্ফোরণের বিকট শব্দ ভেসে আসছে।
সোমবার (৮ জুলাই) বিকেল পর্যন্ত থেমে থেমে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। মর্টার শেল হামলা ও গোলাগুলির শব্দে ঘুম নেই টেকনাফের বাসিন্দাদের। এর ফলে স্থানীয়দের মধ্যে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক।
টেকনাফ সদর ইউনিয়নের মৌলভীপাড়ার বাসিন্দা নুরুল আমিন বলেন, রাতভর গোলাগুলির বিকট শব্দ ভেসে এসেছে। এখনও থেমে থেমে শোনা যাচ্ছে বিস্ফোরণের শব্দ। এ সংঘাত কবে শেষ হবে জানি না।
তিনি আরও বলেন, গত রাতে নাফ নদের ওপারের দেশ মিয়ানমারে বিস্ফোরণের শব্দে বাড়ি-ঘরে কম্পন সৃষ্টি হয়েছে। রাতে ঘুম নেই, মনে হয়েছে বাড়ির ওপরে পড়ছে এসব গুলি।
টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আদনান চৌধুরী বলেন, নাফ নদীর ওই পাশ থেকে গোলাগুলির শব্দ ভেসে আসছে। আমাদের সীমান্তে বিজিবি ও কোস্টগার্ড সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। এছাড়া কোনো রোহিঙ্গা যেন অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সে বিষয়ে সীমান্তরক্ষী বাহিনীগুলো সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
এদিকে কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন রুটে দীর্ঘ ৩৩ দিন পর বিকল্প নৌরুট চালু হলেও একদিন পরই নৌযান চলাচল ফের ব্যাহত হয়েছে।
সোমবার (৮ জুলাই) সকাল থেকে একটা নৌযানও ছেড়ে যেতে পারেনি টেকনাফ থেকে। মিয়ানমারের সংঘর্ষের জেরে ভয়ে ট্রলার ছাড়েননি মালিকরা।
এই রুটের ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রশিদ বলেন, টেকনাফসংলগ্ন মিয়ানমারে সংঘর্ষের কারণে টেকনাফের গোলারচর বিকল্প রুটের কোনো ট্রলার শাহপরীর দ্বীপ জেটি থেকে সোমবার (৮ জুলাই) সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে ছেড়ে যায়নি। সেন্টমার্টিন থেকে একটি ট্রলার দুপুরে নিরাপদে টেকনাফে পৌঁছেছে।
পরিস্থিতি শান্ত হলে মঙ্গলবার (৯ জুলাই) এ রুটে ট্রলার ও স্পিডবোট চলাচল করবে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, গোলারচর হয়ে এই রুটটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হলেও বর্তমানে নাইক্ষ্যংদিয়া হয়ে আগের রুটটি ফিরিয়ে আনার কোনো উপায় জানা নেই। গত ৬ জুন থেকে নাফ নদের মোহনায় নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে বাংলাদেশী ট্রলার ও স্পিডবোট লক্ষ্য করে মিয়ানমার থেকে গুলি করায় কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন দ্বীপ ও টেকনাফ উপজেলার মধ্যে নৌ যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
এদিকে, ১৪ জুন ঈদুল আজহার আগে কক্সবাজার থেকে একটি পর্যটকবাহী জাহাজ খাদ্য ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও যাত্রী নিয়ে সেন্টমার্টিন গিয়েছিল। পরদিন জাহাজটি ফিরে আসে। অন্যান্য কিছু ট্রলারও পণ্য ও যাত্রী পরিবহনের জন্য বিকল্প রুটে গেছে। তবে ৬ জুন থেকে দ্বীপ ও মূল ভূখণ্ড টেকনাফের মধ্যে নিয়মিত চলাচল বন্ধ রয়েছে।
সর্বশেষ গত রোববার টেকনাফের কায়ুকখালী খাল থেকে তিনটি সার্ভিস ট্রলার শতাধিক যাত্রী, কয়েক বস্তা চাল-ডাল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে সেন্টমার্টিন যায়। একইভাবে সেন্টমার্টিন থেকে তিনটি সার্ভিস ট্রলার ও তিনটি স্পিডবোট প্রায় ২০০ যাত্রী নিয়ে টেকনাফ এসেছেন বলে জানিয়েছেন সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারমম্যান মুজিবুর রহমান।
নৌ-পরিবহনের নিয়মিত চলাচল স্থগিত করার ফলে সেন্টমার্টিনে খাদ্যদ্রব্য ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া সীমান্তের ওপারে বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে উঠছে টেকনাফ পৌরসভা ও এর আশপাশের এলাকা। নাফ নদের ওপারে রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার জান্তা বাহিনী ও বিদ্রোহী আরাকান আর্মির মধ্যে গত কয়েক মাস ধরে ভয়াবহ সংঘর্ষের জেরে এসব ঘটনা ঘটছে।