চট্টগ্রাম

বুয়েট ‘ওকে’ বললেই চলবে গাড়ি

জীর্ণশীর্ণ কালুরঘাট সেতুর বার্ধক্যের রোগ সেরেছে। প্রস্তুত গাড়ি চলাচলের জন্যও। এখন অপেক্ষা শুধু ‘রোগ’ সারানো বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞদের। তাঁরা ‘ওকে’ বললেই সেতুর এপার-ওপার ছুটবে যানবাহন। মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) তাঁদের আসার কথা রয়েছে।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, গাড়ি চলাচলের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত কালুরঘাট সেতু। বুয়েট বিশেষজ্ঞরা এলেই গাড়ি চলাচলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

গত ১ আগস্ট ৯০ বছরের পুরনো এ সেতুর সংস্কারকাজ শুরু হয়। প্রায় ১৪ মাস পর কাজ শেষ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সেতু প্রকৌশলী জিসান দত্ত সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘গাড়ি চলাচলের জন্য সেতু প্রস্তুত। কিছু কাজ আছে। তবে সেসব কাজের জন্য গাড়ি চলতে কোনো সমস্যা নেই।’

কবে নাগাদ যান চলাচল উন্মুক্ত হবে— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বুয়েটের টিম সেতু পরিদর্শন করতে আসার পর জানা যাবে। কারণ, ওনারা পরিদর্শন আসার পর ‘ওকে’ বললেই আমরা গাড়ি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করবো। তাই চালুর নির্দিষ্ট তারিখ তাঁদের ওপরই নির্ভর করছে। তবে আমাদের দিক থেকে সবকিছু রেডি।’

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. মেহেদী হাসান বলেন, ‘আমাদের অল্পকিছু কাজ বাকি আছে। তবে সেগুলো গাড়ি চলাচলে কোনো সমস্যা পোহাবে না। আগামী মঙ্গলবার বুয়েটের বিশেষজ্ঞ টিম পরিদর্শনে আসবেন। তারা দেখে যাওয়ার পর বুঝতে পারবো কখন গাড়ি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। এছাড়া, কোনো ধরনের সমস্যা আছে কিনাও সেটাও তারা জানাবেন পরিদর্শন শেষে।’

যানবাহন চলছে অবাধে, ঘটছে দুর্ঘটনা

চলাচলের জন্য সেতু এখনো উন্মুক্ত না হলেও দেদারসে চলছে যানবাহন। সিএনজি অটোরিকশা, টেম্পু, কার, মোটরসাইকেল— সবই চলছে। কখনো কখনো ঘটছে দুর্ঘটনাও।

সরেজমিনে গিয়ে বিভিন্ন সময় দেখা গেছে, কোনো কারণে ফেরি ছাড়তে দেরি হলেই যানবাহনগুলো সেতু দিয়েই পারাপার হচ্ছে। যদিও সেতুর পাটাতন বসার পর থেকেই মোটরসাইকেল আরোহীরা ‘অবাধে’ পারাপার হচ্ছিল। তাদের সঙ্গে এবার যোগ দিয়েছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, টেম্পু, কারও। এছাড়াও, সেতু দিয়ে পার হতে দেখা গেছে পুলিশ কর্মকর্তাদের গাড়িও।

জানা গেছে, গেটের দায়িত্বরতরা বারণ করলেও তাদের কথা শুনতে নারাজ চালকরা। উল্টো চালকরা দায়িত্বরতদের ধমক দিয়ে বসেন। পরে বাধ্য হয়েই গাড়ি উঠতে দেওয়া হয়। এমনকাণ্ডের কারণে সম্মুখীন হয়েছে বিভিন্ন দুর্ঘটনার। গত ২ সেপ্টেম্বর দুপুরে তেলবাহী একটি ওয়াগন শহরের দিকে যাচ্ছিল। এ সময় সিগন্যাল না মেনে সেতুতে ওঠে এলেই বেপরোয়া কয়েকটি মোটরসাইকেল ওয়াগনটির সামনে এসে পড়ে। তবে ট্রেনের গতি ধীর থাকায় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। অল্পের জন্য প্রাণে ফেরেন তারা।

এরপর গত ৭ সেপ্টেম্বর রাত ২টার দিকে অতিরিক্ত গতির ফলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেতুর রেলিং (নিরাপত্তা বেষ্টনী) ভেঙে একটি চাঁদের গাড়ি (জিপ) কর্ণফুলী নদীতে পড়ে যায়। এ সময় গাড়িতে থাকা দুজনকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. মেহেদী হাসান জানান, সেতুতে যাতে গাড়ি চলাচল করতে না পারে, সে জন্য নিরাপত্তারক্ষীরা কাজ করেন। এরপরও মানুষ জোর করে গাড়ি নিয়ে ওঠে যায়। সেই কারণে অনেকে দুর্ঘটনাও ঘটছে।

সময় লাগবে আরও এক মাস : রেল সচিব

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে ট্রেন চলাচল শুরুর আগে বড় মাথাব্যথার কারণ ছিল শতবর্ষী জরাজীর্ণ কালুরঘাট সেতু। ‘বার্ধক্যের রোগ’ সারাতে ২০২৩ সালের ১ আগস্ট থেকে সেতুর ওপর যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় রেলওয়ে। শুরুতে তিন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে যানচলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার কথা জানিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ট্রেন চলাচলের উপযোগী করে ৫ নভেম্বর কক্সবাজারের পথে ট্রেন চলাচল শুরু করে দেওয়া হয়। এরপর দফায় দফায় ঘোষণা দিয়েও সেতুটি যানচলাচলের উপযোগী করে তুলতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। এরপর গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর এটি নিয়ে খুব একটা ‘মাথাব্যথা’ দেখা যায়নি সংস্থাটির কর্তাব্যক্তিদের।

এদিকে, গত ২০ সেপ্টেম্বর বিকেলে কালুরঘাট রেল সেতু পরিদর্শনে আসেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল বাকী। এ সময় তিনি বলেছেন, ‘সংস্কার শেষ হলেই যান চলাচল স্বাভাবিক হবে। ধারণা করছি আগামী এক মাসের ভিতর যান চলাচল স্বাভাবিক হবে। এছাড়া, বুয়েট দ্বারা পরীক্ষা করেই সেতুটি সংস্কার করা হয়েছে। রেল চলাচলে সেতুতে কোন ঝুঁকি নেই। শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই সেতুটি রেলের উপযোগী করা হয়েছে।’

পরিদর্শন শেষে চলে যাওয়ার সময় কালুরঘাট সেতুর পশ্চিমাংশে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ছাত্রদের তোপের মুখে পড়েছিলেন রেল সচিব আবদুল বাকী। তিন মাসের কথা বলে সেতু সংস্কার করতে ১ বছর ২ মাস সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও কাজ কেন শেষ হচ্ছে না। কাজ শেষ না হওয়া এবং যান চলাচলের জন্য সেতু উন্মুক্ত না করার কারণ ছাত্ররা জানতে চাইলে ছাত্রদের ‘সন্তোষজনক’ কোন উত্তর দিতে পারেননি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল বাকী।

কালুরঘাট সেতুর প্রকল্প অনুমোদন অক্টোবরে

কোরিয়ার সঙ্গে কালুরঘাট রেল-কাম সড়ক সেতুর বিষয়ে নতুন চুক্তি হয়েছে বলে পরিদর্শনে এসে জানিয়েছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল বাকী। তিনি বলেছেন, ‘কোরিয়ার সঙ্গে আমাদের নতুন চুক্তি হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদনের চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসার পরে একটি একনেকে সভা হয়েছে। সেই সভাতে প্রকল্পটি অনুমোদন হয়নি। পরবর্তী যেকোনো একনেকে এটি অনুমোদন হবে।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব আরো বলেছেন, ‘অনুমোদন হলে এবং সেতুটি বাস্তবায়ন হয়ে গেলে বোয়ালখালীর পাশাপাশি পুরো দক্ষিণ চট্টগ্রামের দুঃখ অনেকটা কেটে যাবে। এটি শুধু বোয়ালখালীবাসীর নয়; এ সেতুর সুফল সারা বাংলাদেশ পাবে। এছাড়া কালুরঘাট রেল-কাম সড়ক সেতু হলে বোয়ালখালীসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আসবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *