নাইজেরিয়ান চক্রের মাধ্যমে চট্টগ্রামে কোকেন পাচার
নাইজেরিয়ান চক্রের মাধ্যমে চট্টগ্রামে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৩ কেজি ৯০০ গ্রাম ওজনের কোকেন নিয়ে এসে ছিলেন বাহামার নাগরিক স্টাসিয়া শান্তে রোলি (৫৪)। চট্টগ্রামে হোটেলে অবস্থান করার জন্য অনলাইনে একটি এজেন্সির মাধ্যমে নাইজেরিয়ান চক্রটি একটি হোটেল বুকিং করে।
বুকিং দেওয়া হোটেলের গাড়ি গিয়ে স্টাসিয়া শান্তে রোলিকে বিমানবন্দর থেকে হোটেলে নিয়ে এসেছিল। কোকেন পাচারের বিষয়ে স্টাসিয়া শান্তে রোলি সঙ্গে যোগাযোগ করা ঢাকায় অবস্থান করা ২ জন নাইজেরিয়ান নাগরিককেও আটক করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সকালে চট্টগ্রাম মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক প্রেসব্রিফিং এসব তথ্য জানান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান।
আন্তর্জাতিক কোকেন চোরাচালানকারী আইনশৃঙ্খলা বহিনীকে এড়ানোর জন্য ঢাকার বিমানবন্দরের পরিবর্তে চট্টগ্রাম বিমানযন্দর বেছে নিয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে গত ১২ জুলাই থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে কোকেন বাহক স্টাসিয়া শান্তে রোলি জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। গত ১৩ জুলাই সকাল আটটায় কোকেন বাহককারী রোলি চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। কোনো ব্যাগেজ ছাড়া তিনি বিমানবন্দর ত্যাগ করে চট্টগ্রামের একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থান করেন। গত ১৫ জুলাই রোলি চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁর ব্যাগেজ ক্লেইম করার পরে রেইডিং টিমের সদস্যরা কাস্টামস হাউজের সহযোগিতায় ব্যাগটি প্রথমে স্ক্যান করে। পরে তার ব্যাগটি তল্লাশি করে একটি কার্টুনের ভিতর থেকে ৭টি আয়তকার পলি প্যাকেটের মধ্যে সাদা বর্ণের কোকেন সাদৃশ্য পদার্থ আটক করা হয়। প্রতিটি প্যাকেটে প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রামের ৭টি প্যাকেটে মোট ৩ কেজি ৯০০ গ্রাম উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে কোকেন পরীক্ষায় পজেটিভ ফলাফলের ভিত্তিতে রোলিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার পাসপোর্ট ও মোবাইল জব্দ করা হয়েছে। কোকেনের পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ২ জন নাইজেরিয়ান নাগরিককে ঢাকা থেকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের সঙ্গে রোলির হোয়াটঅ্যাপে যোগাযোগ হয়েছিল। মাদক বহনকারীদের দেশে প্রবেশের প্রয়োজনীয় ইনভাইটেশন, হোলেট বুকিং ও ভিসা পাওয়ার কার্যক্রমে একাধিক ব্যাক্তি রোলিকে সহযোগিতা করেছে। ঢাকায় আটকদের পতেঙ্গা থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে। রোলি আবিবাহিত, তার মা ও বাবা রয়েছে। তিনি পেশায় স্টোরের সেলসম্যান। রোলি বাংলাদেশে প্রথম এসেছে।
চট্টগ্রাম মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মেট্রো দক্ষিণের উপপরিচালক রাজিব মিনা বাংলানিউজকে বলেন, চট্টগ্রামে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৩ কেজি ৯০০ গ্রাম ওজনের কোকেন জব্দের ঘটনা চট্টগ্রামের সবচেয়ে বৃহৎ কোকেন জব্দের ঘটনা। গ্রেপ্তার স্টাসিয়া শান্তে রোলিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন করা হবে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে।
মামলার বাদী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সার্কেলের পরিদর্শক জিল্লুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, কোকেনের বাংলাদেশে বাজার নেই। বাংলাদেশকে কোকেন পাচারের রোড হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কোকেনের ইউরোপ ও আমেরিকায় বাজার রয়েছে। বড় বড় খেলোয়াড়রা কোকেন সেবন করে থাকে। গত ২৪ জানুয়ারি ঢাকায় গ্রেপ্তার হওয়া নাইজেরিয়ান চক্রটি চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে কোকেন পাচার করতে চেয়েছিল। এ চক্রের হোতা ডন ফ্রাঙ্কির মূল নাম জ্যাকব ফ্রাঙ্কি। তিনি ‘বিগ বস’ নামে নিজেদের কমিউনিটিতে পরিচিত এবং বাংলাদেশ নাইজেরিয়ান কমিউনিটির প্রেসিডেন্ট। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসার আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালানের নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন। গত নয় বছর ধরে বাংলাদেশে থাকলেও গত ১৫ মাস আগেই দেশ ছেড়েছেন। এখন নাইজেরিয়ায় বসেই বিভিন্ন দেশের মাদক বহনকারীদের সমন্বয় করছেন।
এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো. জাহিদ হোসেন মোল্লা, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মেট্রো উত্তরের উপপরিচালক খন্দকার হুনায়ুন কবির, এপিবিএন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম মিজানুর রহমান, এপিবিএন ঢাকা বিমানবন্দরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো.জিয়াউল হক ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মেট্রো উত্তরের সহকারী পরিচালক রামেশ্বর দাস।
প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের অপরাধ ও মাদক বিষয় কার্যালয়ের (ইউএনওডিসি) ‘গ্লোবাল কোকেন রিপোর্ট- ২০২৩’ এ বলা হচ্ছে, পশ্চিম ও উত্তর আফ্রিকা জুড়ে মাদক পাচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে নাইজেরিয়ার কিছু চক্র। বৈশ্বিকভাবেও নাইজেরিয়ান বংশোদ্ভূত লোকদের মাধ্যমে তারা মাদক পাচার চক্রের বিস্তার ঘটিয়েছে। ওই রিপোর্টে বলা হয়, ২০১৮ সাল থেকে ব্রাজিলের বিমানবন্দরগুলোতে যাত্রীদের ব্যাগে মাদক নিয়ে গ্রেপ্তার বিদেশিদের মধ্যে নাইজেরিয়ানদের সংখ্যা বেশি।