পার্বত্য চট্টগ্রাম

প্রচন্ড শীতে খাগড়াছড়িতে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগ

পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে জেঁকে বসেছে শীত। ঘন কুয়াশা কাটছেনা দিনে দুপুরেও। সূর্যের দেখা না মেলায় দিনের দিনের উত্তাপ কমছে। শহর ছাড়িয়ে প্রত্যন্ত এলাকা যেন জবুথবু অবস্থা। শীতের তীব্রতার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শীতজনিত রোগ। জ্বর, সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কিউলাইটিস, চর্মরোগ, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়াসহ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু থেকে বয়স্ক সব বয়সের মানুষ। চাপ বেড়েছে হাসপাতালে।

জেলা সদর হাসপাতালে অন্যান্য রোগের পাশাপাশি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুর ভর্তির সংখ্যা বেশি বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রোববার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে আধুনিক জেলা সদর হাসাপাতালে গিয়ে দেখা যায়, শহর, শহরতলী ও আশপাশের এলাকা ছাড়াও প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আক্রান্ত শিশুদের হাসপাতালে নিয়ে আসা হচ্ছে। বহির্বিভাগে রোগীর ভিড় থাকায় ব্যস্ত সময় পারছেন করছেন হাসপাতালের চিকিৎসক ও সহকারীরা। জ্বর, সর্দি-কাশির পাশাপাশি স্কেবিস নামের চর্মরোগে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে আসছেন অভিভাবকরা।

হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, জেলা সদরের পূর্ব গামারি ঢালা, কৃষিগবেষণা ছাড়াও দীঘিনালা ও পানছড়ি এলাকার ৭ মাস থেকে ২ বছরের বেশ কয়েকজন শিশু চিকিৎসাধীন রয়েছে। এদের সবাই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত।তাদের কেউ ৫-৬ দিন আবার কেউ এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিনেরও বেশি সময় ধরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

হাসপাতালের দৈনিক রোগীর প্রতিবেদন বোর্ডে দেখা যায়, ১০০ শয্যার হাসপাতালে ১৫৪ জন রোগী ভর্তি আছেন। এর মধ্যে শিশু ওয়ার্ডের বরাদ্দকৃত ১৫ বেডের বিপরীতে ৩০ জন এবং ১০ বেডের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ১৩ জন রোগী ভর্তি আছে। তবে শিশু ওয়ার্ডের বেশিরভাগ রোগীই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত।

হাসপাতালের শিশু চিকিৎসক জুনিয়র কনসালটন্টে ওমর ফারুক বলেন, শীতের প্রকোপ বাড়ার কারণে জেলায় শীতজনিত রোগ বেড়েই চলেছে। জ্বর, সর্দি-কাশি, স্কেবিস, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসছে। ফলে হাসপাতালের আউটডোর ও ইনডোরে রোগীর বাড়তি চাপ সামলাতে হচ্ছে। শীতের সময় শিশুদের বাড়তি যত্নের পরামর্শ দেন এ চিকিৎসক।এ সময় কুসংস্কার সম্পর্কে সচেত্ন হওয়ার কথাও বলেন তিনি। ঠান্ডা মৌসুমে শিশুদের গলায় তাবিজ ব্যবহার না করার পরামর্শ দেন চিকিৎসক ওমর ফারুক।

আধুনিক জেলা সদর হাসাপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ও শিশু রোগ চিকিৎসক রিপল বাপ্পী চাকমা জানান, শীতজনিত অন্যান্য রোগের পাশাপাশি নিউমোনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ও ভর্তিকৃত রোগীদের বেশিরভাগই প্রত্যন্ত এলাকার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শিশু। অসচেতনতার কারণে তাদের শিশুরা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। এতে ঝুঁকিও বাড়ছে। নিউমোনিয়া আক্রান্ত অনেককেই দেরি করে হাসপাতালে আনা হচ্ছে। শিশুদের জ্বর সর্দি কাশি দেখা দিলেই নিকটস্থ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

এদিকে, বয়স্ক ও শিশুদের শীতে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়াসহ পর্যাপ্ত শীতের পোশাক পরিধান করানোর প্রতি জোর দেন ডাক্তাররা। সামান্য অবহেলার কারণে শিশুদের মারাত্মক সাস্থ্যঝুকি দেখা দিতে পারে বলেও আশঙ্কা করেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *