মানুষের উপকার করার পার্থিব প্রতিদান
মানবিকতা ও ঈমানের মধ্যে বন্ধুত্ব আছে। পবিত্র কোরআনের এক আয়াতে বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। মানুষের উপকার করার পার্থিব প্রতিদান
মহান আল্লাহ বলেন, ‘তুমি কি জানো, বন্ধুর গিরিপথ কী? এটা হচ্ছে দাসমুক্তি অথবা দুর্ভিক্ষের দিনে আহার দেওয়া এতিম আত্মীয়কে বা দারিদ্র্য-নিষ্পেষিত নিঃস্বকে। এর পরই সে হবে ঈমানদারের অন্তর্ভুক্ত…। (সুরা : বালাদ, আয়াত : ১২-১৭)
পরোপকারের পার্থিব প্রতিদানস্বরূপ সৌভাগ্যময় মৃত্যু হয় এবং মন্দ মৃত্যু থেকে সুরক্ষা মেলে। উম্মে সালামা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, সৎ কাজ করার ফলে মন্দ মৃত্যু থেকে সুরক্ষা মেলে; গোপনে কৃত দান রবের ক্রোধ নিভিয়ে দেয় এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষায় আয়ু বৃদ্ধি পায়। (সহিহুত তারগিব, হাদিস : ৮৯০)
মহান আল্লাহ তাঁর কোনো বান্দাকে সুযোগ-সুবিধা এবং অভাব পূরণের ক্ষমতার মতো নিয়ামত দান করেন। অতঃপর যখন সে ওই নিয়ামত প্রাপ্ত হয়ে স্বীয় দায়িত্ব পালন না করে, তখন আল্লাহ তাআলা তার থেকে সেসব নিয়ামত উঠিয়ে নেন।
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর জন্য নিবেদিত এমন অনেক বান্দা আছে যাদেরকে আল্লাহ তাআলা মানুষের উপকার করার জন্য বিশেষ নিয়ামত দান করেন। যতক্ষণ তারা সেগুলো মানবকল্যাণে ব্যয় করে ততক্ষণ তিনি তাদের সেসব নিয়ামতের মধ্যে বিদ্যমান রাখেন। কিন্তু যখন তারা সে উপকার করা বন্ধ করে দেয়, তখন তিনি তাদের থেকে নিয়ামত ছিনিয়ে নিয়ে অন্যদের দিয়ে দেন। (সহিহুত তারগিব, হাদিস : ২৬১৭)
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এক মুসলিম অন্য মুসলিমের ভাই, সে তার ওপর জুলুম করবে না এবং তাকে অসহায় অবস্থায় ছেড়ে যাবে না।
যে ব্যক্তি তার কোনো মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ করবে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করে দেবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের কষ্ট দূর করবে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিনে তার কষ্টগুলো থেকে একটি কষ্ট দূর করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষ ঢেকে রাখবে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার দোষ ঢেকে রাখবেন। (বুখারি, হাদিস : ২৪৪২)
আল্লাহ তাআলা মানুষের সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা যার হাতে দিয়েছেন অথবা যার নেতৃত্বে কিংবা যার পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজন পূরণ হতে পারে, সে যদি তাদের জন্য কোনো ব্যবস্থা না নেয় তাহলে তাকে শাস্তি ভোগ করতে হবে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা তার যে বান্দাকে কোনো নিয়ামত পরিপূর্ণরূপে দান করেন এবং তারপর লোকদের প্রয়োজন তার দিকে যোগ করে দেন, কিন্তু সে তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার এমন আচরণের ফলে সে ওই নিয়ামত হাতছাড়ার ব্যবস্থা করে।
(তাবারানি, আওসাত, হাদিস : ৭৫২৯; সহিহুত তারগিব, হাদিস : ২৬১৮)
মহান আল্লাহ আমাদের মানবতার কল্যাণে কাজ করার তাওফিক দান করুন। আমাদের জীবিকা আমাদের প্রয়োজনের জন্য যথেষ্ট করে দিন।