মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় পড়ার পরিস্থিতিতে নেই বাংলাদেশ
শ্রম ইস্যুতে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ার মতো নয় বলে মনে করেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ। তিনি বলেছেন, এ নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কোনো চাপও নেই তাদের ওপর। বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। এখানে সব কাজে স্বচ্ছ প্রক্রিয়া রয়েছে।
এদিকে আজ সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এক বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনকে নতুন শ্রমনীতির বিষয়ে অবহিত করেছেন ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস।
ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে দেওয়া চিঠির বিষয়ে সাংবাদিকদের বাণিজ্য সচিব বলেন, আমেরিকা থেকে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। এ চিঠিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কোনো চাপ অনুভব করছে না। তারা প্রতিনিয়ত এসব নিয়ে কাজ করছেন। তবে আগামীতে শ্রম অধিকার বিষয়ে আরও কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় সেদিকে জোর দেওয়া হচ্ছে।
বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সাধারণ মানুষের উদ্বেগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সচিব বলেন, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমেরিকা থেকে বাংলাদেশ বিশেষ কোনো সুবিধা পায় না। ১৫ শতাংশের বেশি শুল্ক দিয়ে আমেরিকায় পণ্য রপ্তানি করতে হয়। কাজেই বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। এ ছাড়া বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা-ডব্লিউটিওর সদস্যদের মধ্যে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সুযোগ নেই। বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশই ডব্লিউটিও সদস্য। সচিব বলেন, ওয়াশিংটন থেকে পাঠানো চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কিছু পর্যবেক্ষণের কথা রয়েছে । এ চিঠি নতুন কিছু নয়। আমেরিকার এ নীতি সব দেশের জন্যই। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে কিছু কথা বলেছে। সরকার সেগুলো উন্নত করার চেষ্টা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি তথ্য দিয়ে বাণিজ্য সচিব বলেন, দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ১৭ শতাংশ আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। ইইউর দেশগুলো থেকে আসে ৫৫ থেকে ৬০ ভাগ।
এদিকে সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠক করেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। বৈঠক শেষে কোনো পক্ষ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেনি। তবে বৈঠক সূত্র জানায়, নতুন শ্রমনীতির বিষয়টি বাংলাদেশকে অবগত করেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। গত ১৬ নভেম্বর ছুটিতে যান পিটার হাস। আর ১৭ নভেম্বর নতুন শ্রমনীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। এ কারণে বিষয়টি বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করার সুযোগ ছিল না তাঁর।
নাম না প্রকাশের শর্তে একটি কূটনৈতিক সূত্র জানায়, নতুন শ্রমনীতিকে খুবই গুরুত্ব সহকারে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র। শ্রম বিষয়টিকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। শ্রম অধিকার রক্ষায় যে কোনো দেশে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে যুক্তরাষ্ট্র। ওই সূত্র জানায়, বর্তমানে বাংলাদেশে শ্রম পরিস্থিতির যে অবস্থা চলছে, তা পর্যবেক্ষণ করে বলা যায় যে কোনো সময় শ্রমবিষয়ক অস্ত্রগুলো ব্যবহার করবে যুক্তরাষ্ট্র। একের পর এক শ্রম অধিকার লঙ্ঘন এবং সম্প্রতি শ্রমিকদের গুলি করে হত্যাকে ভালোভাবে নেয়নি ওয়াশিংটন। আগামী ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবসে হয়তো এর প্রতিফলন দেখা দিতে পারে। কারণ, বিশ্বব্যাপী শ্রম অধিকার রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা যুক্তরাষ্ট্রের আগামী নির্বাচনে বাইডেনের ক্ষমতার রক্ষাকবচ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ হতে পারে এর অন্যতম উদাহরণ।
গত ২০ নভেম্বর ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে বাণিজ্য সচিবের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়, শ্রমিক অধিকার প্রশ্নে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ঘোষিত স্মারকের লক্ষ্যবস্তু হতে পারে বাংলাদেশ। স্মারকের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের বিবেচনায় শঙ্কিত হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। এতে শ্রম অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যেসব উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে, তার পেছনে রাজনীতি রয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এর ব্যবহার করতে পারে।