পানছড়িতে সর্বোচ্চ ৭৫% ভোট, সর্বনিম্ন বাগমারায় ১৮%
উপজেলা নির্বাচনে প্রথম ধাপের তুলনায় দ্বিতীয় ধাপে ভোট পড়েছে বেশি। প্রথম ধাপে ভোটের হার ছিল ৩৬ দশমিক ১৮ ও দ্বিতীয় ধাপে ভোট পড়েছে ৩৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
গত মঙ্গলবার দ্বিতীয় ধাপে ১৫৬টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ হয়। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ভোট পড়েছে খাগড়াছড়ির পানছড়িতে ৭৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ভোট পড়েছে রাজশাহীর বাগমারায় ১৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
গতকাল বুধবার নির্বাচন কমিশন থেকে সরবরাহ করা চূড়ান্ত ফলাফলের তালিকায় এমন চিত্র দেখা গেছে। নির্বাচনে দিনভর অনেক কেন্দ্র ছিল ভোটারশূন্য। অনেক ক্ষেত্রে প্রথম ধাপের তুলনায় কেন্দ্রগুলোতে নগণ্যসংখ্যক ভোটার উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। এবার ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে কম ভোটার উপস্থিতির রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে।
দ্বিতীয় ধাপে ১৫৬ উপজেলার মধ্যে ব্যালট পেপারে ভোট নেওয়া হয়েছে ১২৯টিতে। এগুলোতে ভোট পড়েছে ৩৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ। অন্যদিকে ২৩টি উপজেলায় ভোট হয়েছে ইভিএমে (ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন)। এগুলোতে ভোটের হার ৩২ দশমিক ১৭ শতাংশ। এ ছাড়া তিন উপজেলার (চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান) সব কয়টি পদে একক প্রার্থী থাকায় বিনা ভোটে জয়ের কারণে ভোট নেওয়ার প্রয়োজন হয়নি।
ইসি সচিবালয়ের তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহী জেলার তিন উপজেলায় দ্বিতীয় ধাপে ভোট নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পুঠিয়ায় ৩৪ দশমিক ৪৭ ও দুর্গাপুরে ৪৪ দশমিক ৪০ শতাংশ ভোট পড়লেও বাগমারায় ভোটার উপস্থিতি ছিল মাত্র ১৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ। এই তিন উপজেলায় ব্যালট পেপারে ভোট নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, তিন উপজেলাতেই বর্তমান ও সাবেক এমপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা ভোটের মাঠে সক্রিয় ছিলেন। তবে বাগমারায় বর্তমান এমপি সমর্থিত প্রার্থী মো. জাকিরুল ইসলামের প্রতিপক্ষ ছিল খুবই দুর্বল। এ উপজেলায় তিন লাখেরও বেশি ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন মাত্র ৫৫ হাজার ৯১৯ জন। এর মধ্যে ৪৮ হাজার ভোটই পেয়েছেন বিজয়ী প্রার্থী। তবে ভোটের দিন তিন উপজেলার কেন্দ্রগুলোতেই ভোটার উপস্থিতি প্রায় একই রকম, অর্থাৎ খুবই কম দেখা গেছে। কিন্তু রাতে ফল ঘোষণার পর দেখা যায়, বাগমারা উপজেলার তুলনায় পুঠিয়া ও দুর্গাপুরে ভোটার উপস্থিতি প্রায় দ্বিগুণ এবং তিন উপজেলাতেই বর্তমান এমপি সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন।
খাগড়াছড়ির পানছড়িতে ভোটের হার ৭৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ হলেও সদর উপজেলায় একই দিনে নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ৪৪ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। পাশের উপজেলা দীঘিনালায় ভোটার উপস্থিতি ৬৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ। স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, সদর উপজলার পৌরসভার মধ্যে কেন্দ্রগুলোতে ভোটারের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। তবে দীঘিনালা, পানছড়ি ও সদর উপজেলার গ্রামের কেন্দ্রগুলোতে দিনের কোনো সময়েই ভোটারের লাইন চোখে পড়েনি। ভোটের ফল ঘোষণার পর ভোটার উপস্থিতির এই হার দেখে বিস্মিত হয়েছেন সাধারণ মানুষ।
প্রথম ধাপের মতো দ্বিতীয় ধাপেও ভোটার উপস্থিতি কম হলেও ব্যাপক জাল ভোট, ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এমনকি ভোটকেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারে ছুরিকাঘাতে একজন নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। ভোট শেষে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল জানিয়েছিলেন, দ্বিতীয় ধাপে ৩০ শতাংশের বেশি ভোট পড়তে পারে। তবে ৩০ শতাংশ ভোটকে কখনোই উৎসাহব্যঞ্জক মনে করেন না তিনি।
ইসি সচিবালয়ের সরবরাহ করা তালিকায় দেখা গেছে, দিনাজপুরের বোচাগঞ্জে ৬৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ, কাহারোলে ৬২ দশমিক ২৪ শতাংশ, নওগাঁর পোরশায় ৬৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ, বাগেরহাটের ফকিরহাটে ৬২ দশমিক ৬০ শতাংশ, ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলে ৬১ দশমিক ৮১ শতাংশ ভোট পড়েছে। কম ভোট পড়া উপজেলাগুলোর মধ্যে পাবনার চাটমোহরে ১৮ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ, যশোরের শার্শায় ১৮ দশমিক ৬৩, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে ১৮ দশমিক ৪২, নোয়াখালীর সেনবাগে ১৯ দশমিক ৬০ ও রাজবাড়ী সদরে ২০ দশমিক ৬৪ শতাংশ ভোট পড়ে।
এবার চার ধাপে উপজেলার ভোট হচ্ছে। গত ৮ মে প্রথম ধাপে ১৩৯ উপজেলায় ভোট হয়েছে। তৃতীয় ধাপে ১১২ উপজেলায় ২৯ মে এবং চতুর্থ ধাপে ৫৫ উপজেলায় ভোট হবে ৫ জুন।