চট্টগ্রাম

ওয়াসার পানিতে লবণাক্ততা ও রমজানের প্রস্তুতি জানতে এমডি’র দপ্তরে সুজন

ওয়াসার পানিতে লবণাক্ততা ও আসন্ন রমজানের প্রস্তুতি জানতে সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ’র দপ্তরে ছুটে যান চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক এবং চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন।

রবিবার (৩ মার্চ ২০২৪ইং) সকালে ওয়াসা এমডি’র সাথে তার দপ্তরে মতবিনিময় করেন সুজন। এসময় সুজন তার ফেসবুকে প্রাপ্ত বিভিন্ন অভিযোগ ওয়াসার এমডি’র নিকট হস্তান্তর করেন।

এ সময় চসিক সাবেক প্রশাসক সুজন বলেন, চট্টগ্রাম বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় আসার পর থেকে চট্টগ্রাম শহরের প্রায় ১ কোটি জনগণের পানির চাহিদার কথা মাথায় রেখে ওয়াসাকে বিশাল আকারের বরাদ্দ প্রদান করেন। ওয়াসাও নতুন নতুন প্রকল্পের মধ্য দিয়ে নগরবাসীর কাছে পানি পৌঁছে দিতে যথাসাধ্য চেষ্টা করেন, সেজন্য ওয়াসাকে ধন্যবাদ জানান তিনি। তবে বেশ কিছুদিন ধরে ওয়াসা নগরবাসীর কাছে লবনাক্ত পানি সরবরাহ করছে যেটা অত্যন্ত দুঃখজনক। নগরবাসী এমনিতে বিভিন্ন রোগে শোকে কষ্ট পাচ্ছে। তার উপর খাবার পানিতে লবণাক্ততার কারণে শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই শুধুমাত্র বৃষ্টির উপর ভরসা না করে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে ওয়াসার পানির লবণাক্ততা কমানোর উপায় খুঁজে বের করার অনুরোধ জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন নগরীর সিমেন্ট ক্রসিং থেকে পতেঙ্গা, দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর, উত্তর কাট্টলী, দক্ষিণ কাট্টলী, উত্তর আগ্রাবাদ, সরাইপাড়া, বাকলিয়া, শেরশাহ, বায়েজিদ, মাদারবাড়ি এসব এলাকায় ওয়াসার পানি সরবরাহ মারাত্নকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। অনেক সময় দিনের পর দিন এসব এলাকায় সুপেয় পানি না থাকলেও প্রতি মাসে গ্রাহককে বিল গুনতে হচ্ছে। এর ফলে ওয়াসার প্রতি গ্রাহকের নেতিবাচক ধারণা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এসব এলাকার পানি সরবরাহ স্বাভাবিক করার জন্য এমডি’র হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সুজন আরো বলেন, সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র রমজান আসন্ন। ধর্মপ্রাণ নগরবাসীর ইবাদত বন্দেগীতে এসময় অতিরিক্ত পানির প্রয়োজন হয়। তাই নামাজ, ইফতার, তারাবী ও সেহেরীর সময় মুসলমানগণ যাতে নিরচ্ছিন্নভাবে পানি সরবরাহ পেতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখা এবং বিভিন্ন ত্রুটির জন্য যেসব এলাকায় স্বাভাবিক পানি সরবরাহ বিঘ্নিত হবে সেসব এলাকায় ভাউচারের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করার অনুরোধ জানান তিনি।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ওয়াসার পানি সরবরাহ ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে বর্তমানে বিভিন্ন এলাকায় ছোট ছোট ট্যাংকে ভরে পানি বিক্রি করছে একটি চক্র। এসব অবৈধ কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে ওয়াসার নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট দিয়ে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করার আহবান জানান খোরশেদ আলম সুজন। ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ নগরবাসীর বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে সুজনকে মতবিনিময় করতে আসায় ধন্যবাদ জানান। তিনি নগরবাসীর কাছে লবনাক্ত পানি সরবরাহ করায় দুঃখ প্রকাশ করেন। উজান থেকে কাপ্তাই লেকের পানি আসতে না পারার কারণে ওয়াসার পানি সংগ্রহ স্থানে জোয়ারের পানি প্রবেশ করছে, যার কারণে পানিতে লবণাক্ততা বেড়েছে। বৃষ্টি হলেই পানির লবণাক্ততা কমে আসবে বলে মত প্রকাশ করেন তিনি। এছাড়া নগরীর যেসব এলাকায় ওয়াসার পানি সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে কিংবা সঞ্চালন লাইনে সমস্যা রয়েছে সেগুলোর কাজ চলমান রয়েছে বলে নেতৃবৃন্দকে অবহিত করেন ওয়াসা এমডি। এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে পানি সরবরাহজনিত সমস্যাও কেটে যাবে বলে জানান তিনি।

আরো বলেন, বর্তমানে নগরীতে ওয়াসার পানির সংকট নেই। তাছাড়া পবিত্র রমজান মাসে প্রতিবছরই ওয়াসার বাড়তি প্রস্তুতি থাকে। গ্রাহকরা যাতে পানি নিয়ে কষ্টে না পড়েন সেজন্য ইতোমধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বিশেষ করে কন্ট্রোল রুম খোলা, গেট বাল্ব পুনর্বিন্যাস করা, পানি সরবরাহ ব্যবস্থা তদারকি করা, ভিজিলেন্স টিম গঠন এবং সার্বক্ষণিক পানির ভাউচার প্রস্তুত রাখা হয়েছে রমজানের জন্য। তারপরও কোন ত্রুটির জন্য পানি সরবরাহ বিঘ্নিত হলে সংশ্লিষ্ট এলাকার নির্বাহী প্রকৌশলী এবং কন্ট্রোল রুমের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানান ওয়াসা এমডি প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ।

এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অর্থ) মো. লাল হোসেন, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (প্রকৌশল) প্রকৌশলী বিষ্ণু কুমার সরকার, সচিব শাহিদা ফাতেমা চৌধুরী, প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম, নাগরিক উদ্যোগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হাজী মো. ইলিয়াছ, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম, আব্দুর রহমান মিয়া, মো. সেলিম, ওয়াসা শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন সভাপতি মীর লোকমান, সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম, কার্যকরী সভাপতি খোরশেদ আলম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *