জাতীয়

ক্যাপাসিটি চার্জ ছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্র হয় একটা দেশ দেখান: প্রধানমন্ত্রী

বিদ্যুৎ না কিনলেও যে কেন্দ্র ভাড়া বা ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হয়, তার সমালোচনার জবাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রশ্ন রেখেছেন বিশ্বের এমন কোন দেশ আছে যেখানে এমন বিধান ছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্র হয়? গতকাল বৃহস্পতিবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি এই প্রসঙ্গে কথা বলেন।

এর আগে বিরোধীদলীয় নেতা জি এম কাদের বলেন, ক্যাপাসিটি চার্জের কারণেই বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। আর সেই ভর্তুকি সামাল দিতেই বার বার দাম বাড়াতে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী তার জবাবে বলেন, পৃথিবীর কোন দেশ আছে যেখানে ক্যাপাসিটি চার্জ ছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষর হয়? একটা দেশ দেখান। এখন ক্যাপাসিটি চার্জ বলে চিৎকার। খবর বিডিনিউজের।

রেন্টাল–কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ আইনের সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, তারা প্রশ্ন উঠান, বিশেষ আইন কেন করলাম? বিশেষ আইন এ জন্য করেছি, আমি তো ব্যক্তিখাতে সব উন্মুক্ত করে দিয়েছি। ব্যক্তিখাতে উন্মুক্ত করে দিতে হলে আইন করেই করতে হবে। দ্রুত বিদ্যুৎ উৎপাদন করা শুধু সরকার দিয়ে হবে না, ব্যক্তিখাত দিয়েই করতে হবে। ব্যক্তিখাত না দিলে কর্মসংস্থানও বাড়ে না।

বিশেষ আইনে কাউকে দায়মুক্তি দেওয়া হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, বরং বেসরকারি খাতে প্রথম বিদ্যুৎকেন্দ্র করেছিল সামিট। খুলনায় তারা এ কেন্দ্র নির্মাণ করতে দেরি করেছিল। যে কয়দিন দেরি করেছিল প্রতিদিন ১০ হাজার ডলার করে জরিমানা দিতে হয়েছিল। সেই জরিমানা আমি আদায় করেছিলাম। ছাড় আমি দেই না, সেটা মাথায় রাখতে হবে। এখানে দায়মুক্তির কিছুই নেই মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন যাতে বন্ধ না হয় এ জন্য বিশেষ আইনটি করা হয়েছে। উন্নয়ন করতে হলে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন যোগাযোগ ব্যবস্থা ও বিদ্যুৎ দেওয়া। বিদ্যুৎ দিতে পারলে কর্মসংস্থান এমনিই তৈরি হয়।

সরকার বিদ্যুৎ কেন্দ্র বহুমুখী করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা সোলার প্যানেল শুরু করেছি। বায়ুভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র শুরু করেছি, কয়লাভিত্তিক করছি, তেলভিত্তিক–গ্যাসভিত্তিক সবই করছি। মানুষকে বিদ্যুৎ দিতে চাই। হ্যাঁ যে প্রচণ্ড গরম, সেখানে লোড শেডিং হয়েছে, আমরা সেটা স্বীকার করি। কিন্তু কৃষক যেন সেচ পায়– সেখানে কিন্তু ভর্তুকি দেয়া হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী অভিজাত এলাকাতেও বিদ্যুতের লোডশেডিং দেওয়ার কথা বলেন। এ বিষয়ে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীকে নির্দেশনা দিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন।

বিএনপির শাসনামলের সঙ্গে তার আমলের বিদ্যুৎ পরিস্থিতির তুলনাও করেন প্রধানমন্ত্রী। এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালে বিএনপি আমলে বিদ্যুৎ উৎপাদন মাত্র ১৬ শ মেগাওয়াট ছিল– এই কথাটিও জি এম কাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন যে হয়, এটা প্রথম উপলব্ধি করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে।

শেখ হাসিনা কেবল বিদ্যুৎ খাত নয়, তার সরকারের আমলে উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে উঠা নানা সমালোচনারই জবাব দেন। কথা বলেন সড়ক অবকাঠামো খাতে উচ্চ নির্মাণ ব্যয় নিয়েও। তিনি বলেন, কেউ কেউ বলে বাংলাদেশে রাস্তা বানাতে এত খরচ কেন? এদের দেশের মাটি সম্পর্কে মোটেও ধারণা নেই। মাটির সঙ্গে এদের কোনো সম্পর্কই নেই। আমাদের মাটি এটা একটা বদ্বীপ। এ মাটি দোআঁশলা, এ মাটি নরম। এখানে কোনো কিছু করতে গেলে… ওই যেনতেন করতে করতে গেলে দু–চারদিনের বেশি থাকে না।

মাটি তুলে আধুনিক প্রযুক্তিতে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, রাস্তা যখন চড়েন দেখেন না? তো খরচ তো লাগবে। সেখানে শক্ত মাটি সেখানে অত খরচ হয় না। নরম মাটি বলেই খরচ বেশি। এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কিছু নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *