চট্টগ্রামধর্ম

চট্টগ্রামে হজযাত্রী কমেছে ২০%

গতবারের তুলনায় কিছুটা কমানো হয়েছিল হজের খরচ। কয়েক দফা বাড়ানো হয়েছে সময়ও। তবুও শতভাগ কোটা পূরণ হয়নি হজযাত্রীদের। হজ সেবা প্রদানকারী এজেন্সি ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর সৌদি সরকারের দেওয়া কোটার প্রায় ৩৫ শতাংশ রয়েছে ফাঁকা। মূলত অতীতের তুলনায় হজের খরচ নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় আগ্রহ কমেছে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের।

ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও সারাদেশের মতো হজে যাওয়ার আগ্রহ কমেছে চট্টগ্রামের হাজিদের মাঝেও। সংশ্লিষ্টদের থেকে পাওয়া তথ্যমতে, গতবছরের তুলনায় চলতি বছর চট্টগ্রাম থেকে হজে যাওয়া যাত্রীর সংখ্যা কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ। এজন্য গতবারের চেয়ে এ বছর চট্টগ্রামে বিমানের ফ্লাইটের সংখ্যাও কমানো হয়েছে ১৫ ভাগ। গতবছর চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি সৌদিতে বিমান বাংলাদেশের ২৬টি ডেডিকেটেড ফ্লাইট পরিচালিত হলেও এ বছর হাজিদের যাতায়াতে দেওয়া হয়েছে মাত্র ২২টি ফ্লাইট।

তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে সৌদি আরবে পবিত্র হজ পালন করতে যান ৯ হাজার ৭৩০ জন যাত্রী। এছাড়া ঢাকা হয়েও কিছু হজযাত্রী গিয়েছিলেন হজ পালনে। সবমিলিয়ে চট্টগ্রামের প্রায় ১০ হাজার হাজি ওই বছর হজ পালন করেন। কিন্তু চলতি বছরে এখন পর্যন্ত হজে যাওয়ার জন্য নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন প্রায় ৮ হাজার জন। সে হিসেবে গতবছরের তুলনায় এ বছর হজে যাওয়ার সংখ্যা কমেছে ২০ শতাংশ।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এ বছর সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের জন্য কোটা দেওয়া হয় এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের। কোটার বিপরীতে নিবন্ধন করেছেন ৮৩ হাজার ২০৯ জন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৪ হাজার ৩১৪ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৭৮ হাজার ৮৯৫ জন যাবেন হজে। কোটার তুলনায় নিবন্ধন মাত্র ৬৫ দশমিক ৪২ শতাংশ। অর্থাৎ, বাকি প্রায় ৩৫ শতাংশ কোটা ফাঁকা। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৬ জুন পালিত হতে পারে পবিত্র হজ।

আগ্রহ কমেছে কেন, করণীয় কী?

গতবছরের তুলনায় এ বছর হজের খরচ প্রায় লাখ টাকা কমানোর পরও ৩৫% কোটা পূরণ না হওয়ার কারণ হিসেবে সেবাপ্রদানকারী এজেন্সিগুলো বলছে, ব্যয় কিছুটা কমলেও করোনার আগের তুলনায় এখনও বেশি হজের খরচ। তার বিপরীতে ওমরা খরচ কয়েকগুণ কম। সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকায় এখন ওমরা সম্পন্ন করা যাচ্ছে। যার কারণে হজের আগ্রহ কমেছে মানুষের। ওমরায় আগ্রহ বেড়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, হজের ব্যয় এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় হজে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়েছেন হাজিরা। যেসব কারণে হজের খরচ বেড়েছে, তার মধ্যে বিমান ভাড়া, বাসা ভাড়া এবং সৌদি সরকারের শতকরা ১৫ ভাগ ভ্যাট আরোপ অন্যতম। এমতাবস্থায় সরকার কিছু বিষয় শিথিল করলে হজের খরচ আরও কমে আসতো বলে মত সংশ্লিষ্টদের।

হজ্জ এজেন্সীজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) চট্টগ্রাম জোনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, ক্রমাগতভাবে হজের ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকটাই আর্থিক চাপে পড়েছেন হজযাত্রীরা। অনেকেই খরচের কথা শুনে ফিরে যাচ্ছেন। সাধারণ সময়ের চেয়ে বিমান ভাড়াও বেশি। সবমিলিয়ে হাজযাত্রীদের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। করোনার আগের বছরের সাথে তুলনা করলে দেখা যাবে, এ বছরও হজের খরচ অনেক বেশি। তার বিপরীতে ওমরা খরচ অনেক কম। ফলে খরচ বাঁচাতে অনেকেই এখন ওমরার দিকে ঝুঁকছেন। তবে অন্যান্য রাষ্ট্রের মতো কিছুটা ভর্তুকি প্রদান করে হলেও বিষয়টি বিবেচনা করার প্রয়োজন।

হজযাত্রী কল্যাণ সংস্থা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এইচএম মুজিবুল হক শাকুর বলেন, হজের ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়া ও জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে মানুষ হিমশিম খাচ্ছে। যার কারণে হজে যাওয়ার আগ্রহ কমে গেছে মানুষের। হজ ধর্মীয় বিষয়। কিন্তু সাধারণ সময়ের চেয়ে হজে বিমান ভাড়া বেশি। তাই সরকারের প্রতি আবেদন থাকবে বিমান ভাড়া কমানোর পাশাপাশি আগামীতে সার্বিক বিষয় বিবেচনা করার। তাহলে সাধারণ মানুষের জন্য কিছুটা হলেও সহনীয় হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *