চট্টগ্রামচট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

জোট বেঁধেও শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে গো-হারা হারলেন শিরীণপন্থিরা

চট্টগ্রাম : জোট বেঁধেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে গো-হারা হেরেছেন সদ্য সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতারের অনুসারীরা। ১১ পদের মধ্যে ‘শিরীণপন্থি’ হিসেবে পরিচিত শিক্ষকরা মাত্র তিনটি সদস্য পদে বিজয়ী হয়েছেন। অথচ নিজেদের জেতাতে একসময় ‘ক্ষমতার দ্বন্দ্বে’ দুই শিবিরে বিভক্ত শিরীণপন্থি শিক্ষকরা এক হয়েই নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চেয়েছিলেন।

কিন্তু গত ৩০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদসহ মোট ৮টি পদে বিজয়ী হয়েছে প্রফেসর ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ (হলুদ দল)।

ভোট গণনা শেষে রাত ১১টার পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মো. এমদাদুল হক, নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোহাম্মদ নেয়ামত উল্যাহ ভূঁইয়া ও মোহাম্মদ মামুন মোরশেদ ভূঁইয়া ফলাফল ঘোষণা করেন।

হলুদ দলের প্রার্থী উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান ৪৪৮ ভোট পেয়ে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের অধ্যাপক দানেশ মিয়া পেয়েছেন ২৮৯ ভোট। দানেশ মিয়া শিরীণ আখতারের প্রশাসনে শহীদ আব্দুর রব হলের প্রভোস্ট ছিলেন।

৩৯১ ভোট পেয়ে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন আইন বিভাগের অধ্যাপক এবিএম আবু নোমান। তিনি হলুদ দলের প্রার্থী। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ ওমর ফারুক রাসেল পান ৩৪০ ভোট৷ ওমর ফারুক রাসেল শিরীণ আখতার প্রশাসনের প্রক্টর রবিউল হোসেন ভূঁইয়ার ঘনিষ্ঠ হিসেবেই ক্যাম্পাসে পরিচিত।

এছাড়া হলুদ দলের প্রার্থী হিসেবে সর্বাধিক ভোট পেয়ে সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলা উদ্দিন, কোষাধ্যক্ষ হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিভাগের অধ্যাপক শাহনেওয়াজ মাহমুদ সোহেল, যুগ্ম সম্পাদক ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম।

সদস্য পদে নির্বাচিতরা হলেন, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মনজুরুল আলম, ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রাশেদ উদ নবী, ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. এএসএম বোরহান উদ্দিন।

সদস্য পদে নির্বাচিত শিরীণপন্থি হিসেবে পরিচিত ৩ প্রার্থী হলেন, সমাজতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এসএম মনিরুল হাসান, পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. একেএম রেজাউর রহমান ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এসএম সাদাত আল সজীব। এদের মধ্যে অধ্যাপক ড. এসএম মনিরুল হাসান শিরীণ আখতারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। তিনি শিরীণ আখতারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে দীর্ঘদিন রেজিস্ট্রার পদে দায়িত্ব পালন করেন।

অধ্যাপক ড. একেএম রেজাউর রহমান বিগত প্রশাসনের আমল থেকেই জননেত্রী শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এছাড়া নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এসএম সাদাত আল সজীব শিরীণ আখতারের প্রশাসনের চালিকাশক্তি নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. রহমান নাসির উদ্দিনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মো. এমদাদুল হক বলেন, অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্বচ্ছতার সাথে ভোট গণনা শেষে বিজয়ী প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক জানান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার উপাচার্য থাকাকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. আব্দুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে হলুদ দলের কিছু শিক্ষকের সমন্বয়ে গড়ে উঠে একটি হলুদ দল। যারা মূল হলুদ দলের বিদ্রোহী হিসেবে পরিচিত। এছাড়া শিরীণ আখতারের প্রশাসনের শুরু থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেলের (আইকিউএসি) পরিচালক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালনকারী অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. আবুল হোসাইনের নেতৃত্বাধীন গড়ে উঠে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত প্রগতিশীল সাধারণ শিক্ষক সমাজ। শিরীণ আখতার উপাচার্য থাকাকালীন প্রশাসনিক ক্ষমতার দ্বন্দ্ব থেকেই এই দুই বলয়ের সৃষ্টি হয়। শিরীণ আখতার অনেক চেষ্টা করেও তার অনুসারী এই দুই বলয়কে একীভূত করতে পারেননি। গত চার বছর ধরে এই দুটি অংশ বিভিন্ন পর্ষদের নির্বাচনে পৃথকভাবে অংশ নিলেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ২০২৪ কার্যকরী পরিষদ নির্বাচনে ‘নির্বাচনী জোট’ ঘোষণা দিয়ে যৌথ প্যানেল ঘোষণা করে।

কিন্তু নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন মূল হলুদ দলের কাছে হেরে যায় সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতারের অনুসারী হিসেবে পরিচিত এই নির্বাচনী জোট।

এবার শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে অংশ নেননি বিএনপি-জামায়াতপন্থী সাদা দলের প্রার্থীরা। সমিতির ৯২৯ ভোটারের মধ্যে ৭৮২ জন ভোটার এবার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *