চট্টগ্রাম

দাঁতের অসুখে ভুগছে ৮৩% শিশু

শুধুমাত্র অভিভাবকদের অসচেতনতার কারণে চট্টগ্রামে ছয় বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে ৮৩ দশমিক ৩০ শতাংশই বিভিন্ন দন্তক্ষয় রোগে আক্রান্ত। আবার দীর্ঘ সময় ধরে শিশুকে ফিডার খাওয়ানোর কারণে যে দন্তক্ষয় রোগ হতে পারে, সে তথ্য জানেন না ৫০ দশমিক ৬০ শতাংশ অভিভাবক। দাঁতের চিকিৎসায় বড় ভূমিকা রাখছে, চট্টগ্রাম নগরীর এমন দুটি হাসপাতালে গত প্রায় এক বছরের মধ্যে আসা ৬ বছরের কম বয়সী ২৩৩ জন শিশু ও তাদের অভিভাবকের ওপর জরিপ চালিয়ে এমন তথ্য মিলেছে।

ভয়ানক এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে দাঁতের যতেœ অভিভাবকদের সঠিক ধারণা ও এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শ চিকিৎসকদের।

গবেষণায় দেখা যায়, শতকরা ৭৫ ভাগ ৬ বছরের কম বয়সী শিশু নিজেরা ব্রাশ করে। যে কারণে তারা সঠিকভাবে মুখ ও দাঁত পরিষ্কার করতে পারে না। যা দন্তক্ষয় বাড়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এবং প্রায় ৪৮ ভাগ ক্ষেত্রে মা-বাবাদের তদারকি বা তত্ত্বাবধান থাকে না। আর যে সকল শিশু ব্রাশ করতে অনীহা প্রকাশ করে তাদের মধ্যে ৮০ ভাগ অভিভাবক তাদের শিশুদের মুখ ও দাঁত অনিয়মিতভাবে পরিষ্কার করেন।

গবেষণা অনুযায়ী প্রায় ৭০ ভাগ শিশু খাওয়ার আগে ব্রাশ করে। অথচ ব্রাশ করার সঠিক পদ্ধতি হল খাওয়ার পর ব্রাশ করা এবং প্রায় ৩০ শতাংশ শিশু তাদেরকে মুখ ও দাঁত পরিষ্কারের সময় প্রচন্ড অসহিষ্ণু আচরণ করে থাকে।

শিশুদের দন্তক্ষয় নিয়ে তাদের পিতা-মাতার ধারণা ও প্রাত্যহিক জীবনে তার প্রয়োগ নিয়ে যৌথভাবে গবেষণাটি পরিচালনা করেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল ইউনিট এবং চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল ডেন্টাল কলেজের এক দল চিকিৎসক। যৌথভাবে পরিচালিত গবেষণায় শিশু দন্ত বিভাগে আসা ৬ বছরের কম বয়সী ২৩৩ জন শিশু ও তাদের অভিভাবকের ওপর এই জরিপ পরিচালনা করা হয়।

চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল ডেন্টাল কলেজের ডেন্টাল পাবলিক হেলথ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডা. তৌহিদা আহসানের নেতৃত্বে এ গবেষণাটি পরিচালিত হয়। এতে যুক্ত ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) ডেন্টাল ইউনিটের লেকচারার ডা. মো. সেলিম উদ্দীন, চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আফরোজা হক, চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল ডেন্টাল কলেজের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. জসীম উদ্দীন।

প্রধান গবেষক ডা. তৌহিদা আহসান বলেন, নানাবিধ কারণে শিশু দন্ত রোগ দিন দিন মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সমস্যায় পরিণত হচ্ছে। যার ফলে ভবিষ্যতে দাঁত ও মাড়ির নানাবিধ দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা তৈরি হচ্ছে যা তাদের স্কুল পারফরমেন্সের উপর ও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি অব্যাহত রাখার মাধ্যমে শিশুদের মুখ ও দন্তস্বাস্থ্যের জন্য কাজ করা একান্ত দরকার।

গবেষকরা জানান, বেশির ভাগ মা-বাবা শিশুর দাঁত ও মাড়ি পরিষ্কার করা শুরু করেন আড়াই বছর বা তার পর থেকে। যেখানে জন্মের পর থেকেই বাচ্চার জিহবা ও মাড়ি পরিষ্কার করা এবং একটি দাঁত উঠলেই ফিংগার ব্রাশ বা কাপড় বা গজ দিয়ে মুখ ও দাঁত পরিষ্কার করা উচিত।

চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ও শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ মুসলিম উদ্দিন সবুজ বলেন, শিশুদের দন্তক্ষয় সারা বিশ্বে একটি মারাত্মক জনস্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যা। শিশুর দাঁতের সুষ্ঠু গঠনের ক্ষেত্রে ক্ষয়রোগ খুব ক্ষতিকর। এই বিষয় নিয়ে অভিভাবকদের সঠিক ধারণা ও সচেতনতা খুব জরুরি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *