নির্বাচনে মাইকিং দিন দিন ফিকে হয়ে আসছে
নব্বই দশকজুড়ে নির্বাচন মানেই ছিল জম্পেশ মাইকিং। মাইকম্যান ভাড়া করে গানের সুরে সুরে চলত প্রার্থীর প্রচারণা। ফলে নির্বাচনের সময়টা বেশ রমরমা কাটত মাইক ব্যবসায়ীদের। নির্বাচন দোরগোড়ায়। কিন্তু সেই সুরেলা মাইকিংয়ের প্রচার যেন আর নেই। মাইকিং এখন সাদাকালো স্মৃতির মতই ধূসর। তবে পরিবেশবাদিরা ব্যাপারটাকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন। তারা বলছেন, নির্বাচনে মাইকের ব্যবহারে শব্দদূষণ বাড়ে।
ঠিক চার দিন পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ সময় ব্যস্ত কাটার কথা মাইক ব্যবসায়ী ও মাইকম্যানদের। কিন্তু সময় এখন সোশ্যাল মিডিয়ার। চলছে লাইক, ফলো, শেয়ারের প্রতিযোগিতা। কায়দা করে লিখে, নানা আঙ্গিকে ভিডিও করে সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে প্রার্থীদের প্রচারণা। তাই মাইকে কণ্ঠে নানা জনপ্রিয় গানের সুর তুলে প্রার্থীদের প্রশংসা করে ভোট চাওয়ার ওই প্রথাটা ফিকে হয়ে আসছে দিন দিন।
সোমবার চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালী থানা এলাকার আইস ফ্যাক্টরি রোডের অন্তত ৫০টি মাইকের দোকান ঘুরে দেখা যায়, দোকানিরা অলস সময় কাটাচ্ছেন। নির্বাচন উপলক্ষে তেমন ব্যস্ততাও নেই। বেশিরভাগ দোকানি জানালেন, আগের মত মাইকের বিক্রি নেই। কারণ মানুষ এখন হ্যান্ডমাইকের দিকে ঝুঁকছে। এখন মূলত মাইকের ব্যবহার হচ্ছে মসজিদ, মন্দির ও বিভিন্ন ধর্মীয় জমায়েতে। কেউ কেউ বলেছেন, মাইকের সরঞ্জাম ও দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে মাইকের বিক্রি কমেছে।
দুপুরে প্রতিবেদকের সাথে কথা বলতে গিয়ে স্মৃতিভারাক্রান্ত হয়ে পড়েন ঢাকা ইলেকট্রনিক্স সেন্টারের স্বত্বাধিকারী বাচ্চু মিয়া। নির্বাচনের নানা স্মৃতি তুলে ধরে আবেগপ্রবণ হয়ে প্রবীণ এ ব্যবসায়ী বলেন, ‘আগের সেই নির্বাচনী আমেজ এখন নেই। সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে বেশির ভাগ প্রচারণা মোবাইল স্ক্রিনে দেখে মানুষ। মাইকের কথা আর কে শোনে।’
‘মাইক নিয়ে সুন্দর স্মৃতির গণ্ডি পেরিয়ে গেছে, মাইকের জায়গা দখল করে নিয়েছে হ্যান্ডমাইক’—বলছেন নিউ মার্কেটের সাউন্ড ব্যবসায়ী শিমুল কবির। তিনি বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে তুলনামূলকভাবে মাইকের আওয়াজ কম শোনা যাচ্ছে। এক যুগ আগেও মানুষের মুখে মুখে শোনা যেত নির্বাচনী গান ও স্লোগান। এক সপ্তাহ আগে ৩০টি হ্যান্ড মাইক বিক্রি হয়েছিল। তবে ড্রাইভার ইউনিট, অ্যামপ্লিফায়ার, মাইক্রোফোন পর্যাপ্ত মজুত করা হলেও বিক্রির পরিমাণ অনেকাংশে কম।’
তবে মাইকের ব্যবহার কমে যাওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন নগরবাসীরা। তাদের মতে, ‘মাইকের ব্যবহার অত্যাচারের মত।’ পথে কথা হয় চট্টগ্রাম কলেজের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্রী হুমায়রা আকতার হিমুর সাথে। তার মতে, মাইকের ব্যবহার কমেইনি। আগের মত আছে। এ বিষয়ে ক্ষোভ ঝেড়ে তিনি বলেন, ‘কোথায় কমেছে? মোটেও কমেনি মাইকের ব্যবহার। শুধু নির্বাচন কেন ফুটপাত থেকে কমিউনিটি সেন্টার ভবনের ছাদে মাইকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার। কানে শুনতে অসুবিধে হয়। মনোযোগ ছুটে যায়।’