চট্টগ্রাম

বইমেলা মাতালেন সাংবাদিক-পুলিশ কর্মকর্তা

চট্টগ্রামের সিআরবি’র শিরীষতলায় চলা অমর একুশে বইমেলার ষোলতম দিনে কথা বলে পাঠক-দর্শনার্থীদের মাতিয়ে গেলেন দেশের আলোচিত দুই সাংবাদিক ও এক পুলিশ কর্মকর্তা।

তাঁদের মধ্যে লেখক, সাংবাদিক আনিসুল হকের ‘কখনো আমার মাকে’ ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। আর রাজধানীর তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীনের ‘আত্মহত্যার আত্মকথা’ বইটিও বেশ বিক্রি হচ্ছে বইমেলায়। এ ছাড়া সাংবাদিক মোহসীন-উল হাকিমের ‘সুন্দরবনের জলদস্যুদের জীবনে ফেরার গল্প’ বইটিও ভালো সাড়া পেয়েছে।

শনিবার বই মেলার লেখক সম্মিলন অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে লেখক আনিসুল হক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু জেলে থেকেই বলেছেন আমাকে বই দিন। তিনি মানিক মিয়া ও বেগম মুজিবকে চিঠি লিখেও বারবার বই চেয়েছেন। বঙ্গবন্ধু জেলে থেকে টুথপেস্ট চায়নি, বই চেয়েছেন। এই জন্য শিশু আর তরুণেরা বই পড়বে আর বই পড়বে। আমরা দেশের তরুণকে বই পড়াতে পারলে ওরাই মানবিক মানুষ হবে। শিশুরা যেন কবিতা মুখস্থ করে।’

লেখক আনিসুল হক আরও বলেন, ‘চট্টগ্রামকে আমরা আলোকবর্তিকা হিসেবে জানি। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়েছে চট্টগ্রাম থেকে। চট্টগ্রাম থেকেই বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে স্বাধীনতার ঘোষণা এসেছে। সারা পৃথিবী জেনেছে এ ঘোষণা। গণতন্ত্র আন্দোলনসহ সবই চট্টগ্রাম থেকে হয়েছে।’

এদিকে শনিবার বিকাল চারটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ শিরীষতলার মেলাঙ্গনে লেখক সাংবাদিক মোহসীন-উল হাকিম পাঠকদের মাতিয়ে রাখেন গল্পে, আড্ডায় আর অটোগ্রাফ ভালোবাসা বিলিয়ে। এসময় এই লেখকের “রূপান্তরের গল্প” বইটি বিক্রিও ধুম পড়ে যায়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মেলার প্রবেশ মুখে ইউপিএল স্টলে দাঁড়িয়ে আছেন যমুনা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি সাংবাদিক ও লেখক মোহসীন উল হাকিম। তাঁকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন শিক্ষার্থী, চাকরীজীবী, সাংবাদিক, ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণির মানুষ। যারা স্টল থেকে মোহসীন উল হাকিমের রূপান্তরের গল্প বইটি কিনে নিয়ে তাঁর হাতে তুলে দিচ্ছেন। এরপর তাঁরই অটোগ্রাফ নিয়ে মুঠোফোনে মুহুর্তটি ধরে রাখছেন। কেউ কেউ এসেই তাঁর সাথে গল্পে মেতে উঠছেন। আবার কেউ কেউ মনে লুকিয়ে রাখা নানা প্রশ্ন তাঁকে ছুঁড়ে দিচ্ছেন। যেন এসব প্রশ্ন তাঁকে করতে তারা উদগ্রীব হয়ে ছিলেন বহুকাল।

মোহসীন-উল হাকিমও তাঁর সহজ ও প্রাঞ্জল ভাষায় পাঠকদের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে তাদের তুষ্ট করে চলেছেন। একবারে মিশে গিয়ে বলছেন সুন্দরবনের দস্যুদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার, দস্যু সর্দার বেলায়েত হোসেনের সেই গল্পগুলোও। সুন্দরবনের গহীনে তাদের সাথে কাটানো সেসব সময় কেমন ছিল সেসব অভিজ্ঞতা, তাঁরা এখন কোথায় আছেন, কেমন আছেন এসব ফেলে আসা দিনের গল্পও তিনি শেয়ার করেছেন পাঠক-ভক্ত, অনুসারীদের সঙ্গে।

মোহসীন উল হাকিম বলেন, কাজের মধ্যে দিয়েই মানুষের সাথে আমার পরিচয়। কারো সাথেই আমার কখনও পরিচয় ছিলো না। চট্টগ্রামের বইমেলায় এসে মানুষের অগাধ ভালোবাসা পেয়েছি। যা আমাকে মুগ্ধ করেছে। চট্টগ্রামের মানুষ আমাকে এতোটা আন্তরিকভাবে গ্রহণ করবে তা ভাবিনি। তাদের ভালোবাসা আমার মনে গেঁথে থাকবে।

রূপান্তরের গল্প প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সুন্দরবনকে নিয়ে করা কাজগুলো আমাকে বিশেষভাবে মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছে। সুন্দবনের দস্যুদের জীবনে ফেরার গল্প নিয়ে লেখা বইয়ে বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি। পাঠক ব্যাপকভাবে বইটি গ্রহণ করছে। আমি সুন্দরবনের দস্যুদের প্রয়োজন বুঝেছি। তারা যে জীবনে ফিরতে চায় সেটি অনুভব করেছি। এজন্য আমি তাদের সাথে যোগাযোগ করেছি। আবার তাদের হয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করেছি। এই যোগাযোগই আমাকে কাজটি করতে সহযোগিতা করেছে।

অন্যদিকে এবারের বইমেলায় পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসীনের ‘আত্মহত্যার আত্মকথা’–বইটি বিক্রি হচ্ছে বেশি। এটি এ পুলিশ কর্মকর্তার দ্বিতীয় বই।

পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসীন তাঁর বই সম্পর্কে বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১৪ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করেন। এসব আত্মহত্যার কারণ অনুসন্ধানের একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস ‘আত্মহত্যার আত্মকথা।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *