অন্যান্য

বাণিজ্যিক হচ্ছে রাঙ্গামাটির ডিসি পার্ক

কাপ্তাই হ্রদ আর পাহাড়ে ঘেরা পর্যটন শহর রাঙ্গামাটি। বিশালাকার জলাধারের কাপ্তাই হ্রদ একদিকে রাঙ্গামাটির যেমন অপরূপ সৌন্দর্য বাড়িয়েছে, আবার হ্রদই রাঙ্গামাটিতে দুর্গম করেছে। পার্বত্য শহর রাঙ্গামাটির পর্যটন শিল্পে আমূল পরিবর্তন না হলেও বিগত এক দশকে গড়ে ওঠেছে ছোট-বড় বাণিজ্যিক পার্ক ও বিনোদনকেন্দ্র। হ্রদ পাহাড়ের শহর রাঙ্গামাটির বাণিজ্যিক আয়োজনের বাহিরে এখনো পর্যন্ত একমাত্র উন্মুক্ত পার্ক রয়েছে শহরের ডিসি বাংলো পার্ক। এখন সেটিও বাণিজ্যিকভাবে চালুর দিকে হাঁটছে প্রশাসন। তবে পার্কটিকে বাণিজ্যিক করার ক্ষেত্রে আপত্তি আছে জেলাবাসীর।

স্থানীয়রা বলছেন, রাঙ্গামাটি জেলা শহরের শেষপ্রান্ত জিরো পয়েন্টে অবস্থিত জেলাপ্রশাসকের (ডিসি) বাংলোর সামনের অবস্থিত পার্কটি পুরো শহরের মানুষের চিত্ত বিনোদন ও কাপ্তাই হ্রদের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য উন্মুক্ত স্থান। আশপাশের বাসিন্দারাও পরিবার এবং শিশুদের নিয়ে বিকেলের অবসর সময় কাটাতে পার্কটিতে যান। একে-একে সব উন্মুক্ত স্থানে পার্ক ও বাণিজ্যিকভাবে বিনোদনকেন্দ্র গড়ে ওঠায় শহরের মানুষের যাওয়ার জায়গা নেই।

সম্প্রতি সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, ডিসি বাংলো পার্কের সামনে আগে যেখানে গাড়ি ও মোটরসাইকেল পার্কিং করা হতো সেখানে একটি প্রবেশ বুথ তৈরি করা হয়েছে। প্রবেশ বুথের দেওয়ালে একটা নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা আছে, ‘পার্কের উন্নয়ন কাজ চলমান থাকায় পর্যটকগণের জন্য যাতায়াত সাময়িকবন্ধ।’

তবে পার্কের ভেতরেও বেশকিছু পর্যটককে দেখা গেছে। এ সময় কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানালেন, আগামীতে পার্কে ঢুকতে টিকেট লাগবে, সেজন্য তারা আপাতত কিছুদিন টিকিট ফি ছাড়াই ঘুরার সুযোগ পাচ্ছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, রাঙ্গামাটি জেলা শহরে পর্যটন করপোরেশনের ঝুলন্ত সেতু পার্ক, জেলা পুলিশের পলওয়েল পার্ক, জেলা প্রশাসনের শিশু পার্ক, সেনাবাহিনীর আরণ্যক, ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বার্গী লেকভ্যালি, বরগাঙ, রাঙাদ্বীপ এবং কাপ্তাই উপজেলায় অবস্থিত বিজিবির ওয়াগ্গাছড়া রিভারভিউ পার্ক, সেনাবাহিনীর লেকশোর, নৌবাহিনীর লেকভিউ পিকনিট স্পষ্ট, বন বিভাগের প্রশান্তি পার্কসহ একাধিক পার্ক ও বিনোদনকেন্দ্র রয়েছে। এসব বিনোকেন্দ্রকেন্দ্র ও পার্কগুলো বাণিজ্যিকভাবে গড়ে ওঠায় পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয়দেরও প্রবেশ করতে হয় প্রবেশমূল্য দিয়ে।

কেবলমাত্র ডিসি বাংলো পার্কটিই আছে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। সম্প্রতি পার্কটির সংস্কার ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে ডিসি বাংলো পার্কের প্রধান তোরণ নির্মাণ, পার্কের নিচের অংশে দেওয়াল, বসার স্থান তৈরি, বিভিন্ন খেলনা ও ব্যাঙের ছাতাসহ অন্যান্য সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করা হচ্ছে।

শিশু-কিশোর সংগঠন খেলাঘর আসর ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সৈকত রঞ্জন চৌধুরী বলেন, ‘ডিসি বাংলো পার্কটি শুধু আজকে নয়, দীর্ঘদিন ধরেই শিশু-কিশোর ও বয়স্কদের জন্য গুরত্বপূর্ণ একটি জায়গা। টাকার বিনিময়ে সেটিতে প্রবেশ করানোর বিষয়টি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। সবাইকে ব্যবসা করতে হবে কেন? এমন একটি উন্মুক্ত স্থান ব্যবসায়িকভাবে আবদ্ধ বা পরিচালিত হওয়া রাঙ্গামাটিবাসীর জন্য দুঃখজনক। পার্কটি নিয়ে যদি কোনো সমস্যা থাকে তবে জেলা প্রশাসন ভিন্নভাবে সমাধান করতে পারে। টাকা ছাড়া স্থানীয়দের একটি নিঃশ্বাস নেওয়ার স্থান উন্মুক্ত থাকুক। ফি দিয়ে প্রবেশের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসুক জেলা প্রশাসন।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *