বাস্তবায়ন ছাড়া মাস্টারপ্ল্যান ‘অর্থহীন’
পরিকল্পিত শহর গড়তে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের পাশাপাশি এর বাস্তবায়ন জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন দি পূর্বকোণ লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও বৃহত্তর চট্টগ্রাম উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির স্থায়ী পরিষদের সভাপতি জসিম উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেছেন, একটি শহরের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের গাইডলাইন হচ্ছে মাস্টারপ্ল্যান। সেখানে যেভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়- সেভাবেই শহর গড়ে উঠে। তবে বাস্তবায়ন করতে না পারলে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন অর্থহীন।
প্রতিষ্ঠার ৩৯ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে দৈনিক পূর্বকোণের বিশেষ ক্রোড়পত্রের জন্য আয়োজিত ‘পরিকল্পিত চট্টগ্রাম নগরী: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় স্বাগত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনার প্রথম পর্বে চট্টগ্রাম নগরীর মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন-বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ ও করণীয় নিয়ে মতামত দেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিরা।
স্বাগত বক্তব্যে জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমার মনে হয় চট্টগ্রাম শহরের জন্য প্রণয়ন করা মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর আগ্রহ নেই। মাস্টারপ্ল্যান বাদ দিয়ে তারা নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা থেকে কোনো সমস্যার সাময়িক সমাধান করতে চায়। সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাবই মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন না হওয়ার বড় কারণ বলে আমি মনে করি।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সাদার্ন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর মোজাম্মেল হক বলেন, একটা প্ল্যান করলে সবার সেটা ওন করা উচিত। তাহলে সমন্বয়হীনতা আর থাকবে না। আমাদের রিসোর্স আছে। কোনো কিছুর অভাব নেই। অভাব শুধু সততার। আমরা জেনেশুনে অনিয়ম করছি। এজন্য আমাদের মাস্টারপ্ল্যান কিংবা প্রজেক্টগুলোর যথাযথ কার্যকারিতা পাওয়া যাচ্ছে না।
চুয়েটের অধ্যাপক স্বপন কুমার পালিত বলেন, মাস্টারপ্ল্যান ধাপে ধাপে বাস্তবায়নের সুযোগ থাকতে হবে। একসাথে সবকিছু শুরু করলে শেষ করা যায় না। যে কোনো সমস্যা নিরসনে প্রত্যেক অর্গানাইজেশনের কো-অর্ডিনেশন ও সদিচ্ছা খুবই জরুরি। ওয়ার্ড ভিত্তিক মনিটরিং সেলও চালু করা যায়। যেন কোনো সমস্যা হলে সাথে সাথে সেন্টারকে জানানো যায়।
চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রামে রমনা পার্কের মতো বড় কোনো পার্ক নেই। বড় বাস টার্মিনাল নেই। গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, এলাকায় পার্কিংয়ের জায়গা নেই। ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট নেই। একটি পরিকল্পিত নগরীর জন্য এসব প্রয়োজন। মাস্টারপ্ল্যানে রোড, ফুটপাত, আইল্যান্ড ইত্যাদির সেকশন আগে থেকে আলাদা আলাদা করে রাখলে বাস্তবায়ন সহজ হবে।
উপ-পুলিশ কমিশনার জয়নুল আবেদীন বলেন, বিদ্যমান ব্যবস্থায় একজন চালককে গাড়ি চালাতে এবং ট্রাফিক সিস্টেমকে এপ্লাই করতে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়। তাই আমাদের মাস্টারপ্ল্যানে প্রপার ট্রান্সপোর্টেশন প্ল্যান অন্তর্ভুক্ত থাকা উচিত। চট্টগ্রাম শহরে কমপক্ষে চারটি ডাম্পিং প্লেস থাকতে হবে। যেখানে আইন ভঙ্গকারী গাড়িকে আমরা আটক করে রাখতে পারবো।
ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাহাবুবুল আলম বলেন, সিডিএ’র মাস্টারপ্ল্যান আমরা অবশ্যই ফলো করবো। সিডিএ বলছে, তারা মাস্টারপ্ল্যানে ড্রেনেজ রেখেছেন। কিন্তু ওয়াটার সাপ্লাই ও স্যানিটেশন তারা এড্রেস করেছে কিনা- এটা ক্লিয়ার না। সিডিএ যে উপশহর গড়ে তুলবে- সেখানে পানি সরবরাহ এবং স্যানিটেশন কীভাবে হবে, এটা পরিকল্পনায় থাকবে হবে।
পিডিবির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শহীদুল ইসলাম মৃধা বলেন, সিডিএ দীর্ঘদিন ধরে মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে কাজ করছে। তবে সুফল এখনো পাওয়া যায়নি। আসলে সিডিএ আদৌ সমস্যা বুঝতে পেরেছে বা চিহ্নিত করতে পেরেছে বলে মনে হয় না। কেন সমস্যা চিহ্নিত করা যাচ্ছে না তা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। প্রয়োজনে তাদেরকে চিহ্নিত করতে সহায়তা করা হবে।
সিডিএ’র উপ-প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী আবু ঈসা আনছারী বলেন, চট্টগ্রাম নগরীতে একটিই মাস্টারপ্ল্যান থাকবে। কিন্তু অংশীদার হবে সব সংস্থা। প্রতিটি সংস্থার জন্য আলাদা প্রপোজাল, পলিসি থাকবে। আলাদা ফেজিং থাকবে। কোন সংস্থা কোন প্রকল্প কোন সময়ে বাস্তবায়ন করবে তা নির্ধারণ করে দেয়া হবে। কিন্তু আমরা শুধু প্ল্যানই করে যাচ্ছি। বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম নগরী শুধু সিডিএ’র সম্পত্তি নয়। অন্য সংস্থাগুলো কেন মাস্টারপ্ল্যানের সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রকল্প গ্রহণ করতে চায় না, সেটা দেখা উচিত। আমরা মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের সাথে তাদের সম্পৃক্ত করতে পারছি কিনা- সেটাও দেখা উচিত। তাই এবার আমরা সব সংস্থা কেনো মাস্টারপ্ল্যানের সাথে সমন্বয় করে প্রকল্প গ্রহণ করে না, তা চিহ্নিত করছি।
সিডিএ পরিচালনা পর্ষদের সদস্য স্থপতি আশিক ইমরানের সঞ্চালনায় গোলটেবিল আলোচনায় আরও মতামত দেন সিডিএ’র মাস্টারপ্ল্যান প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের টিম লিডার ড. আহসানুল কবীর ও ডেপুটি টিম লিডার ড. নুরুল হাসান।