ধর্ম

শবে বরাতে নবী করিম যেসব আমল করেছেন

আল্লাহতায়ালা যেমন বিশেষ কিছু ঋতুকে ফল-ফসলে সমৃদ্ধ করেছেন ঠিক তেমনি শেষ উম্মতকেও দিয়েছেন অল্পসময়ে বেশি লাভজনক আমল করে নেওয়ার সুযোগ। এতে করে মানবজীবনে স্বল্পদৈর্ঘ্যতার দুর্বলতা দূর হয়েছে। প্রযুক্তির উৎকর্ষের যুগে অনেক অবাক করা বিষয় আমরা লক্ষ্য করি। শবে বরাতে নবী করিম যেসব আমল করেছেন

আদিযুগে দীর্ঘ সময় ব্যয় করে সম্পাদন করা অনেক কাজই খুব স্বল্প সময়ে সম্পাদন করা যায়। ঠিক সেভাবে শেষ নবী হজরত মোহাম্মাদ (সা.)-এর উসিলায় আমরা পেয়েছি পরকালের প্রভূত কল্যাণ লাভের অনন্য সব মৌসুম। এগুলো অল্পসময়ে আমল করে অভাবনীয় পারলৌকিক কল্যাণ লাভ করা সম্ভব। এভাবে মহান আল্লাহ আমাদের ওপর দয়া করেছেন। এই সুযোগগুলোকে অস্বীকার করা বা এড়িয়ে যাওয়া চরম মূর্খতার পরিচায়ক।

হাদিসের ভাষ্যমতে এমনই একটি মূল্যবান মৌসুম হলো- শাবান মাসের মধ্য রজনী। এই মহিমান্বিত রজনীর ডাকনাম- ‘শবে বরাত। ’

শাবান হলো পবিত্র রমজানের পূর্ববর্তী মাস। গুরুত্বপূর্ণ যেকোনো কাজের আগে প্রস্তুতি গ্রহণ সংশ্লিষ্ট কাজটিকে সুন্দরভাবে পালনে সহায়তা করে। তাই পবিত্র সিয়াম সাধনা পালনের একমাস আগ থেকে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সওম পালনের অনুশীলন করতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘শাবান মাস ছাড়া অন্য কোনো মাসে নবীকে (সা.) এত বেশি নফল সওম আদায় করতে দেখিনি। ’ –সহিহ বোখারি ও মুসলিম

এক রাতে রাসূলুল্লাহ (সা.) নামাজ আরম্ভ করলেন এবং এত দীর্ঘ সেজদা করলেন, হজরত আয়েশার (রা.) আশঙ্কা হলো, তিনি হয়তো আর দুনিয়ায় নেই। তাই তিনি উঠে নবী করিম (সা.)-এর পায়ের আঙ্গুল নাড়া দিলেন। বুঝলেন, তিনি জীবিত আছেন। এতে তার সান্ত্বনা লাভ হলো। নামাজ শেষ করে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তুমি কি জানো এটি কোন রাত? হজরত আয়েশার উত্তর, আল্লাহ এবং তার রাসূলই (সা.) ভালো জানেন। এবার নবী (সা.) বললেন, এটি শাবানের পনেরোতম রজনী। এ রাতে মহান আল্লাহ নিজ বান্দার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দান করেন এবং ক্ষমা প্রার্থীকে ক্ষমা করেন। রহমতপ্রার্থীকে রহম করেন। আর বিদ্বেষীদের নিজ বিদ্বেষে ছেড়ে রাখেন। -শোয়াবুল ঈমান ও তারগিব-তারহিব

মহিমান্বিত এই রজনীর প্রভূত কল্যাণের কথা যেমন অস্বীকার করার উপায় নেই, ঠিক তেমনি সুযোগ নেই নবী (সা.)-এর আদর্শ পরিহারের।

এক শবে বরাতে হজরত আয়েশা (রা.) রাসূলুল্লাহকে (সা.) ঘরে না পেয়ে খুঁজতে খুঁজতে মদিনার ‘বাকিতে’ তাকে পেলেন। নবী (সা.) তাকে দেখে বললেন, শাবানের মধ্যরজনীতে আল্লাহ দুনিয়ার নিকটবর্তী আকাশের প্রতি মনোনিবেশ করেন এবং বনী কালব গোত্রের ছাগলের পালের পশমের সংখ্যার চেয়েও বেশি সংখ্যক মানুষকে ক্ষমা করে দেন। ’

উল্লেখ্য, তদানীন্তনকালে উল্লিখিত গোত্রে বিপুল পরিমাণ বকরি ছিল। নবী (সা.) নিজ কথায় মুক্তিপ্রাপ্ত মানুষের সংখ্যাধিক্য বুঝাতে চেয়েছেন।

রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রায় সব মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে নফল রোজা রাখতেন। বিশেষ করে শাবান মাসে ১ থেকে ২৭ তারিখে তারিখে তার রোজা রাখার বিশেষ আমল দেখা গিয়েছে। সে হিসেবে শাবানের ১৫ তারিখেও তিনি রোজা রেখেছেন। সুনানে ইবনে মাজাহ ও শোয়াবুল ঈমানে এই সংক্রান্ত হাদিস বিদ্যমান।

ইমাম শাফেয়ি (রহ.) বলেন, আমাদের কাছে রাসূলুল্লাহর (সা.) এই হাদিস পৌঁছেছে; তিনি ইরশাদ করেছেন, পাঁচটি রাতে দোয়া কবুল হয়। তন্মধ্যে শাবান মাসের ১৫ তারিখ অন্যতম।

ইমাম শাফেয়ি (রহ.) আরও বলেন, উল্লিখিত রাত সম্পর্কে আমি যা বলেছি সেগুলোকে আমি মোস্তাহাব মনে করি, ফরজ মনে করি না। -কিতাবুল উষ্ম ও সুনানে কুবরা

নিজের পরকালীন কল্যাণ লাভের নিমিত্তে রাসূলুল্লাহ (সা.) বরকতময় এই রাতে দীর্ঘ সময় একাকী নফল নামাজ আদায় করেছেন। এই নফল ইবাদত তিনি এতটাই নিঃশব্দ ও গোপনে করেছেন, পাশে শুয়ে থাকা প্রিয় মানুষটিও টের পেয়েছেন বেশ বিলম্বে। বিশাল হদিস ভাণ্ডারের গবেষণার আলোকে প্রতীয়মান হয়, জীবনে মাত্র একবার এই রাতে তিনি কবরস্থানে গিয়ে মৃতদের জন্য মাগফেরাত কামনা করেছেন নীরবে-নিভৃতে। পরের দিন সওম পালনের মতো কষ্টসাধ্য আমলও তিনি উম্মতের আদর্শ হিসেবে রেখে গিয়েছেন পারলৌকিক কল্যাণের স্বার্থে।

তাই আসুন, নিজের কৃতকর্মের প্রতি অনুতপ্ত হয়ে পাপরাশি মোচনের নিমত্তে মহান প্রভুর দরবারে হাত তুলি মহিমান্বিত এই রজনীতে মনের সবটুকু আবেগ উজাড় করে দিয়ে নীরবে নিভৃতে। অন্তর থেকে মুছে ফেলি সব হিংসা-বিদ্বেষ। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমা করবেন। তিনি পরম দয়ালু। আমাদের ধারনার চেয়েও বহুগুণে মহিমাময়, প্রেমময়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *