চট্টগ্রামপার্বত্য চট্টগ্রাম

৫৯ বন্দির মুক্তির বিনিময়ে অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার বন্ধে রাজি কেএনএফ

অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার বন্ধে রাজি হয়েছে বান্দরবানের সশস্ত্র সংগঠন কুচি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। তাদের সঙ্গে সরাসরি বৈঠকের দ্বিতীয় পর্বের আলোচনায় এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠকে ৫৯ জন বন্দির মুক্তি, কুচি চিন সম্প্রদায়ের ভাগ্যোন্নয়নে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং খাদ্যসহায়তা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন সংগঠনটি প্রতিনিধিরা। পাশাপাশি উদ্ভূত যেকোনো সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে উভয়পক্ষ সম্মত হয়েছে।

বন্দিমুক্তির বিষয়টি সরকারি পক্ষ ইতিবাচকভাবে নিয়েছে এবং তাদের প্রকৃত বন্দির সংখ্যা সুনির্দিষ্ট করে তালিকা দেওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছে সরকারপক্ষ। সুনির্র্দিষ্ট বন্দির তালিকা পাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে সরকার কাজ করবে বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে একজন বন্দি আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন এবং আরো একজনের আগামী সপ্তাহে জামিনে মুক্তির প্রক্রিয়া চলছে। গত ৫ মার্চ বান্দরবানের রুমা উপজেলার বেথেলপাড়া এলাকায় অনুষ্ঠিত শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি এবং কেএনএফের প্রত্যক্ষ সংলাপে সাতটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসব সিদ্ধান্তের বিষয়ে উভয়পক্ষ একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে।

সমঝোতা স্মারকের তথ্য অনুযায়ী, বৈঠকে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির আহ্বায়ক বান্দরবান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা এবং কেএনএফ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক লাল জংময় স্বাক্ষর করেন। স্মারকের প্রথম দফায় বলা হয়েছে, কেএনএফ কর্তৃক উত্থাপিত ছয় দফা দাবি এবং প্রণীত খসড়া চুক্তির বিষয়ে পরবর্তীতে আলোচনা সাপেক্ষে প্রদক্ষেপ নেওয়া হবে। কেএনএফের দাবি অনুযায়ী, সব সম্প্রদায়ের লোকজনকে পোর্টার নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। পোর্টার হচ্ছে সেনাক্যাম্পে বেসরকারি পর্যায়ে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজের সুযোগ।

বলা হয়েছে, সরকারের পক্ষ থেকে কুচি-চিন সম্প্রদায়ের ভাগ্যোন্নয়নে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও খাদ্যসহায়তা কার্যক্রম পূর্বের মতো অব্যাহত থাকবে এবং ভবিষ্যতে আরো তরান্বিত করা হবে। কুচি-চিন সম্প্রদায়ের লোকজন এলাকায় ফিরে আসার বিষয়ে আলোচনা হয়। এই পর্যায়ে কুচি-চিন সম্প্রদায় যাতে নিজ আবাসস্থলে ফিরতে পারে সেই লক্ষ্যে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।

অস্ত্র বিষয়ে উভয়পক্ষ সিদ্ধান্তে পৌঁছায় যে, শান্তি প্রতিষ্ঠা কার্যক্রম চলাকালে কেএনএফ কোনো প্রকার সশস্ত্র ও সন্ত্রাসী তৎপরতায় লিপ্ত হবে না। একই সঙ্গে আঞ্চলিক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। এছাড়া শান্তি-শৃঙ্খলায় স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে কেএনএফ কর্তৃক নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বজায় রাখা হবে।

আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন এমন ব্যক্তিদের একজন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানিয়েছেন, আলোচনার সময় কেএনএফ নিজদের অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার বন্ধের পাশাপাশি অন্য সশস্ত্র সংগঠনগুলোর অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার বন্ধের বিষয়টি উত্থাপন করেছে। জবাবে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অবৈধ অস্ত্র কেউই ব্যবহার করতে পারবেন না। এটা দণ্ডনীয়। আইন সবার জন্য সমান। শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির ওই ব্যক্তির বক্তব্য অনুযায়ী, ‘শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধের বিকল্প নেই। সেই পথেই সবাকে হাঁটতে হবে।’

শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সদস্য সাংবাদিক প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম মনু প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘কেএনএফের সঙ্গে সোহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। কেএনএফ সশস্ত্র কার্যক্রমে লিপ্ত হবে না এবং নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বজায় রাখবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘যেভাবে আলোচনা এগিয়ে চলছে, তাতে আশা করা যায় খুব শিগগিরই ইতিবাচক একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হবে এবং স্থায়ী শান্তি ফিরবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *