রাজনীতি

চট্টগ্রামে বিএনপির ইফতারে বিশৃঙ্খলা

কারও পাতে সামান্য ভাত। কারও পাতে এক টুকরো মাংস, আবার কারও পাতে শুধুই চর্বির দলা। আর কারও খাবার প্লেটই জোটেনি। ছোট্ট পানির বোতলটি নিয়ে কয়েকজনের টানাটানি। খাবারের সন্ধানে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি। ইফতারের ঠিক আগ মুহূর্তে কেউ কেউ রাগে-ক্ষোভে ছুটে গেলেন পাশের রেস্তোরাঁয়।

শুক্রবার (২২ মার্চ) এমন অব্যবস্থাপনা বিশৃঙ্খল পরিবেশ দেখা যায় চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির ইফতার মাহফিল ও সদ্য কারামুক্ত নেতা-কর্মীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে। যেখানে শত শত নেতা-কর্মী ইফতার না করেই ফিরে যান। শুধু তাই নয়, অবস্থা দেখে ইফতারের মাত্র ৫ মিনিট আগে স্থান ত্যাগ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। জেলা ও মহানগর বিএনপির অনেক নেতাও ইফতার করতে পারেননি। কারণ একটাই খাবার সংকট। আর অতিরিক্ত নেতা-কর্মীর জমায়েত। সেইসঙ্গে খাবার বিতরণে অব্যবস্থাপনায় সৃষ্ট বিশৃঙ্খলা।

এ দিন বিকাল ৪টা থেকে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতুসংলগ্ন রাজবাড়ী কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয় চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির ইফতার মাহফিল ও কারামুক্ত নেতা-কর্মীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান।

সরেজমিনে ইফতার মাহফিলে গিয়ে দেখা যায়, শুরু থেকেই মঞ্চের পাশে বিশৃঙ্খলা করছিলেন নেতা-কর্মীদের একটি গ্রুপ। সিনিয়র নেতারা বেশ কয়েকবার করজোড়ে তাদের সরে যাওয়ার অনুরোধ করলেও তারা কথা কানে তোলেননি। শেষমেশ মঞ্চের সামনে তাদের জটলার মধ্যেই শেষ হয় অনুষ্ঠান। চেয়ারে বসা নিয়েও কনভেনশন সেন্টারের একাধিক স্থানে চলে তর্কাতর্কি। পরে মাগরিবের আজানের ৫ মিনিটে আগে চলে চরম বিশৃঙ্খলা। কেউ কেউ বিরানির প্যাকেট পেয়ে হল ত্যাগ করলেও কেউ গেছেন একেবারেই শূন্য হাতে। অতিথিদের জন্য ছিল মেজবানীর ব্যবস্থা। কিন্তু শেষমেশ সেখানেও টানাটানি। কেউ সাদা ভাত পেলেও মাংস বা তরকারি জোটেনি। আবার অনেকেই এক প্লেট ভাত খেয়েছেন ভাগ করে। পাশের জন থেকে একটু পানি চাইতেই শেষ বিন্দুটুকুও ফুরিয়ে যায়। হতাশ হয়ে ফিরে যান দূরদূরান্ত থেকে আসা শত শত নেতা-কর্মী। এ সময় অনেককেই পাশের একটি হোটেল ছুটে গিয়ে তাড়াহুড়া করে ইফতার করতে দেখা যায়।

বাঁশখালীর ইমরান হোসেন নামে এক বিএনপি কর্মী বলেন, অনেক দূর থেকে এসেছি ইফতার মাহফিলে। ইফতারি খাওয়া মুখ্য না হলেও এতদূর থেকে এসে রোজা রেখে খালি মুখে ফেরা কষ্টের। একই কথা বলেন, নাছির উদ্দিনও। তিনি বলেন, জেলা পর্যায়ের অনুষ্ঠানে এত বিশৃঙ্খলা হলে তা মানা যায় না। তাও আবার ইফতারের সময়। এই দুজন নেতা ছাড়াও অনেক কর্মীকেই রাগ করে স্থান ছাড়তে দেখা যায়।

ইফতার মাহফিলে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এতে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানের সভাপতিত্বে ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনামের পরিচালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার, কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দিন মজুমদার, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক প্রমুখ।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা ২ হাজার মানুষের আয়োজন করেছিলাম। সমাগম একটু বেশি হয়েছিল। আর মানুষ বেশি হলে খাবারের সংকট তো হবেই। এটা তেমন কিছু না। প্রোগ্রাম সফলভাবেই শেষ হয়েছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *