চট্টগ্রাম

দরজাই খোলেনি ট্রমা সেন্টারের!

সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের জরুরি চিকিৎসা দিতে চট্টগ্রামের হাটহাজারী পৌরসভার কাচারি সড়কের পাশে নির্মাণ করা হয় ‘হাটহাজারী ট্রমা সেন্টার’। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর ট্রমা সেন্টারটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় ২০২১ সালে। এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ১২ কোটি টাকা।

জাঁকজমকভাবে উদ্বোধন হলেও সেন্টারটির সেবার দরজা খোলেনি আজও। যে কারণে পঙ্গুদের চিকিৎসার পরিবর্তে বছরের পর বছর ধরে সেন্টারটি এখন নিজেই পড়ে আছে মুখথুবড়ে।

সেন্টারটি কোন কাজেই আসছে না সাধারণ মানুষের। এতে করে হাটহাজারী ও পাশের দুই পার্বত্য জেলার মহাসড়কে দুর্ঘটনায় আহতরাও বঞ্চিত হচ্ছেন ত্বরিৎ চিকিৎসা সেবা প্রাপ্তি থেকে।

অন্যদিকে, আলোচ্য সড়কে দুর্ঘটনায় আহতদের এখনও অগত্যা ভরসা রাখতে হচ্ছে সেন্টারটি থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরের চমেক হাসপাতালের ওপর। যানজটের কারণে এত পথ পাড়ি দিতে গিয়ে অনেক সময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার একাধিক নজির রয়েছে। পঙ্গুত্ব বরণ করছেন অনেকেই। কিন্তু কর্তৃপক্ষের অনাগ্রহে এই সেন্টারের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে আছে বহু বছর ধরে।

অথচ চিকিৎসকরা বলছেন- দুর্ঘটনার এক ঘণ্টার মধ্যে সঠিক চিকিৎসা পেলে পঙ্গুত্ব থেকে বাঁচা সম্ভব। তাই সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুর্ঘটনাজনিত কারণে আহতদের চিকিৎসার স্বার্থে পূর্ণাঙ্গ ট্রমা সেন্টার চালু করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

খবর নিয়ে জানা যায়, মহাসড়কে দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসায় ২০১০ সালে সারা দেশের বিভিন্ন জেলায় ১৬টি ট্রমা সেন্টার নির্মাণের উদ্যোগ নেয় স্বাস্থ্য বিভাগ। এরমধ্যে একটি ছিল হাটহাজারী উপজেলায় নির্মিত ট্রমা সেন্টারটি। যা আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল উদ্বোধন করেন স্থানীয় সাংসদ ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি। তবে উদ্বোধনের পর থেকে এখন পর্যন্ত চালুই হয়নি সেন্টারটি। ব্যবহার না থাকায় ট্রমা সেন্টারের অবকাঠামো নষ্ট হচ্ছে।

উদ্বোধনের পরও ট্রমা সেন্টারের কার্যক্রম চালু না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে হাটহাজারী উপজেলার পূর্ব মেখল এলাকার বাসিন্দা মহিউদ্দিন বলেন, গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় আঘাত পেয়ে আমার বাম হাত ভেঙে যায়। শহরে গিয়ে চিকিৎসা করালেও এখন পর্যন্ত পুরোপুরি ভালো হয়নি। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন- সময়মতো যদি আশপাশের হাসপাতালে সঠিক চিকিৎসা নেয়া যেত, তাহলে এ জটিলতা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হতো। অথচ বহুদিন ধরে হাটহাজারীর ট্রমা সেন্টারটি চালু হচ্ছে না।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সেন্টার নির্মাণ করা হলেও এখন পর্যন্ত কোন জনবল নিয়োগ হয়নি। স্থাপন হয়নি কোন যন্ত্রপাতিও। আসবাবপত্রও সংযোজন হয়নি ট্রমা সেন্টারটিতে। নানান সংকটের কারণে চালু করা যাচ্ছেনা ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ট্রমা সেন্টারটি। অথচ হাটহাজারীর ওপর দিয়েই প্রতিদিন দুই পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিসহ আশপাশে এলাকাগুলোতে যাতায়াত করে থাকেন প্রচুর পর্যটকসহ জনসধারণ মানুষ। দুই মহাসড়কেই প্রায় সময় দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়।

হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রশ্মি চাকমা বলেন, মহাসড়কে দুর্ঘটনায় আহতদের উন্নত চিকিৎসায় ট্রমা সেন্টারটি নির্মাণ করা হয়েছিল। তবে নির্ধারিত জনবল ও যন্ত্রপাতি না থাকায় হাসপাতালটির কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না। সম্প্রতি ট্রমা সেন্টারটি চালু করতে প্রয়োজনীয় জনবল, যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্রসহ সবকিছু চেয়ে মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট শাখায় চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে।

দ্বিগুণ চাপ চমেক হাসপাতালে : ছোট বড় সড়ক দুর্ঘটনায় চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ জন রোগী ভিড় করেন। কোন সময় এ সংখ্যা অর্ধশত ছাড়িয়ে যায়। সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা হয় হাসপাতালটির অর্থোপেডিক বিভাগে। কিন্তু প্রতিদিন যে পরিমাণ রোগী আসে, তাতে সেবা দিতে গিয়ে অনেকটাই হিমশিম খেতে হয় চিকিৎসকদের।

খবর নিয়ে জানা গেছে- অর্থপেডিক বিভাগে ১৭৩টি শয্যা থাকলেও প্রতিদিন প্রায় গড়ে রোগী ভর্তি থাকেন তিন থেকে সাড়ে তিনশ জন। শয্যার তুলনায় দ্বিগুণ রোগীর চাপ চিকিৎসা সেবাদানেও ‘চাপ’ তৈরি হয়। আবার এসব রোগীর অনেকেই সঠিক সময়ে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে পঙ্গু হয়ে পড়েন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *