চট্টগ্রামবোয়ালখালীরাজনীতি

‘নৌকা’ না থাকায় প্রার্থীর ছড়াছড়ি

ফেরি বা নৌকায় কর্ণফুলী নদী পেরিয়ে বোয়ালখালীর কালুরঘাটে পা রাখতেই চোখ আটকে যায়। ফেরিঘাটজুড়ে শোভা পাচ্ছে বিশাল বিশাল ব্যানার। কোনটা অভিনন্দন-শুভেচ্ছা জানানো। কোনটা আবার উপজেলা পরিষদের প্রার্থিতা জানান দেওয়ার।

কালুরঘাট ফেরিঘাট থেকে উপজেলা সদরে ঢুকতেই চোখে পড়ে এই ধরনের অসংখ্য পোস্টার-ব্যানার। এসব পোস্টার-ব্যানারে প্রার্থিতা জানান দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। উপজেলার আনাচে-কানাচে শোভা পাচ্ছে এই ধরনের পোস্টার-ব্যানার ও বিলবোর্ড। দলের ত্যাগী-পরীক্ষিত প্রার্থী ছাড়াও আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী ও সুবিধাভোগীরাও প্রার্থিতার জানান দিচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, বোয়ালখালীর দুই বর্ষীয়ান নেতা প্রয়াত সংসদ সদস্য মইনউদ্দিন খান বাদল ও মোছলেম উদ্দিন আহমদের মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগ অনেকটা অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। এক বছর পেরিয়ে গেলেও উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেনি। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুই জন দিয়ে চলছে দলের কার্যক্রম। একই অবস্থা পৌর আওয়ামী লীগেরও।

গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৮ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ছিল না। তবে আওয়ামী লীগের দুই স্বতন্ত্র ও জাপা প্রার্থীকে ঘিরে তিন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে কাজ করেছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনেও ডজনখানেক প্রার্থী নিজেদের প্রার্থিতার জানান দিচ্ছেন। তবে ঘরোয়া রাজনীতিতে মুরুব্বি বা যোগ্য অভিভাবক না থাকায় সিদ্ধান্তহীনতায় সাংগঠনিক ঐক্য ভেঙে পড়েছে।

সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ :

আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের ডজনখানেক নেতা বিভিন্নভাবে নিজেদের প্রার্থিতার জানান দিচ্ছেন। এরমধ্যে ১০ জনের দৌড়ঝাঁপ বেশি চোখে পড়ে। দৌড়ঝাঁপে যারা এগিয়ে রয়েছেন, তারা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. নুরুল আমিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম রাজা, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএম সেলিম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. রেজাউল করিম বাবুল, জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আবদুল কাদের সুজন, সারোয়াতলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান মো. বেলাল হোসেন, পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. শফিউল আলম শফি, আওয়ামী লীগ নেতা এমএ ঈছা, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল বশর কমান্ডার, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি আব্দুল মান্নান রানা, শাহজাদা এসএম মিজানুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি মনছুর আলম বাপ্পি, ব্যবসায়ী মো. জাহেদুল হক, সাংবাদিক কাজী আয়েশা ফারজানা।

উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. নুরুল আমিন চৌধুরী বলেন, আমার শ্রদ্ধেয় বড় ভাই প্রয়াত উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আলম চৌধুরী এলাকাবাসীর সুখে দুঃখে নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে এলাকার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। তার বিবেচনার ভার এলাকাবাসীর।

উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএম সেলিম বলেন, ন্যায্য কথা বলতে কোনোদিন আপস করিনি। এলাকাবাসীর পক্ষেই সমর্থন দিয়ে এসেছি আজীবন। দলমত-নির্বিশেষে সকলেই সমর্থন দিচ্ছেন নির্বাচন করার জন্য।

চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন বলেন, আমি বোয়ালখালী আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকের ছেলে। আমার বাবা ও আমি ৩২ বছর ধরে চেয়ারম্যান হিসেবে মানুষের সেবা করে আসছি। আরও বড় পরিসরে মানুষের সেবা করতে চাই।

সাবেক ছাত্রনেতা রেজাউল করিম বাবুল বলেন, স্কুল জীবন থেকে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তৃণমূল থেকে লড়াই-সংগ্রাম করে বেড়ে উঠেছি। জীবন-যৌবন সবই রাজনীতিতে বিলিয়ে দিয়েছি। চাওয়া-পাওয়ার আর কিছুই নেই। আশা করছি, এবার জনগণ আর নিরাশ করবেন না।

২০১৯ সালের ২৪ মার্চ এখানে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নৌকা প্রতীকে বিজয়ী হয়েছিলেন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মো. নুরুল আলম। ২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। গত বছরের ১৬ মার্চ উপ-নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে বিজয়ী হন উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল করিম রাজা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *