চট্টগ্রামশিক্ষা

‘মহিউদ্দিন চৌধুরী স্যারের জন্যই আইনজীবী হতে পেরেছি’

নগরের কোতোয়ালী থানার বান্ডেল কলোনির কৃষ্ণ দাশ। বাংলাদেশের হরিজন সম্প্রদায়ের প্রথম আইনজীবী (অ্যাডভোকেট)।

আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সহযোগিতায় প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগে ভর্তি হন। সেখানে পড়ালেখার পাশাপাশি একটি প্রতিষ্ঠানে কাজও করতেন।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করে চট্টগ্রাম জজকোর্টে জেলার পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরীর চেম্বারে শিক্ষানবীশ আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন। এর আগে ২০১৮ সালে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি থেকে এলএলবি পাস করেন তিনি। পরে ২০২৪ সালের ৯ মার্চ অফিসিয়ালি আইনজীবী (অ্যাডভোকেট) হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।

ব্যক্তি জীবনে ২০১৬ সালের একই সম্প্রদায়ের দিপীকা দাশকে বিয়ে করেন। এখন তিনি দুই সন্তানের জনক। বড় ছেলের নাম প্রসেঞ্জিৎ (৬) ও বাবার মতো দেখতে সেইজন্য ছোট ছেলের নাম রেখেছেন বাবার নামের সঙ্গে মিলিয়ে চিরঞ্জীব লাল (৬ মাস)।

স্বপ্ন পূরণের পর এখন নিজ সম্প্রদায়ের অসহায় মানুষকে আইনি সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি মানুষের জন্য কাজ করতে চান, সেইসঙ্গে আইন পেশায় অবদান রাখতে চান উদীয়মান এই আইনজীবী। তাঁর জীবনে এমনি নানা অজানা বিষয় তুলে ধরেন চট্টলার বার্তার কাছে-

আপনার জন্ম-পারিবার সম্পর্কে বলুন-

কৃষ্ণ দাশ: আমার জন্ম ১৯৯৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর নগরের কোতোয়ালী থানার বান্ডেল কলোনীতে। বাবার নাম প্রয়াত চিরঞ্জীব দাশ প্রকাশ চিরঞ্জীব লাল। তিনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) সেবক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মায়ের নাম ছায়া দাশ, তিনিও বর্তমানে চসিকের সেবক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তিন ভাই-এক বোনের মধ্যে আমি দ্বিতীয়। আমার বড় বোন, তিনি সপ্তাম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। একভাই দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। ছোটভাই এই বার এসএসসি দিচ্ছেন। স্ত্রী দিপীকা দাশ ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। পারিবারিকভাবে আমাদের বিয়ে হয়েছে। শিক্ষাজীবনের শুরুতে নগরের বান্ডেল এস কলোনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম পর্যন্ত পড়াশুনা করি। এর মিউনিসিপ্যাল মডেল হাই স্কুল থেকে ২০০৯ সালে এসএসসি ও ২০১২ সালে ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করি। ২০১৮ সালে আইনে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করি।

কেন আইনে স্নাতক পড়লেন?

কৃষণ দাশ: আমার ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন ছিল আইনে ভর্তি হওয়ার। প্রয়াত মেয়র চট্টলবীর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী স্যারের অনুপ্রেরণায় প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটিতে এলএলবিতে ভর্তি হয়। প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরী স্যার আমার পড়ালেখার সব খরচ ফ্রি করে দিয়েছিলেন। যার কারণে আমি আইনজীবী হতে পেরেছি।

আপনি কি হরিজন সম্প্রদায় থেকে প্রথম আইনজীবী?

কৃষ্ণ দাশ: বাংলাদেশে হরিজন সম্প্রদায়ের ১৫ লাখ মানুষ বসবাস করেন। আমি হরিজন সম্প্রদায়ের প্রথম আইনজীবী (অ্যাডভোকেট)।

হরিজন সম্প্রদায়ের প্রথম আইনজীবী হিসেবে অনুভূতি-

কৃষ্ণ দাশ: আসলে অনুভূতি বলে প্রকাশ করা যাবে না। এই স্বপ্ন আমাকে দেখিয়েছিলেন প্রয়াত চট্টলবীর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী স্যার। আমি সেই স্বপ্ন আমি পূরণ করতে পেরেছি। এইটা আমার সম্প্রদায়ের জন্য অত্যন্ত আনন্দের ও গৌরবের যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।

অবহেলা বা কষ্টের অনুভূতি-

কৃষণ দাশ: ইউনিভার্সিটিতে পড়ালেখা করার সময়ে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতাম। এছাড়াও আমার কলোনিতে কোচিং সেন্টার পরিচালনা করতাম। ইউনিভার্সিটিতে বন্ধুদের সহযোগিতা পেয়েছি সবসময়। এখনো পর্যন্ত কোনো ধরনের অবহেলার শিকার হয়নি। আদালতে সকলে আমাকে সহযোগিতা করেন।

হরিজন সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি বা উৎসব সম্পর্কে বলুন-

কৃষ্ণ দাশ: আমরা মূলত হিন্দু ধর্মাবলম্বী। আমাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান হচ্ছে দুর্গাপূজা। আমরা সবচেয়ে যেটা বেশি পালন করি সেটা হচ্ছে শ্যামাপূজা। এছাড়াও একাধিক উৎসব পালন করি।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা-

কৃষ্ণ দাশ: চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের একজন অ্যাডভোকেট হওয়া অনেক গৌরবের বিষয়। আমি আমার সম্প্রদায়ের রিপ্রেজেন্ট করতে পারছি। আমি এমন এক জায়গায় আছি যেটার মাধ্যমে আমার সম্প্রদায় এবং অন্যান্য সম্প্রদায়কে আইনি সহায়তা দিতে পারবো। সেই কাজটা আমি করতে চাই। ভবিষ্যতে সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী হওয়া জন্য চেষ্ঠা করবো।

অ্যাডভোকেট কৃষ্ণ দাশের বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলার পিপি অ্যাডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশের হরিজন সম্প্রদায়ের সন্তান কৃষ্ণ দাশ বাংলাদেশে প্রথম আইনজীবী হিসেবে বার কাউন্সিল কতৃক অনুমোদিত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (আগামীকাল) বিকেলে তিনটায় চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ ড. আজিজ আহমেদ ভূঁঞা কৃষ্ণ দাশকে আদালতে গাউন পরিয়ে আইনজীবী হিসেবে গ্রহণ করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *