চট্টগ্রামপার্বত্য চট্টগ্রাম

খাগড়াছড়িতে অবরোধের আগুনে পুড়ল পরিবারের সুখ-স্বপ্ন

খাগড়াছড়ি: মাত্র ১০ মাসের অবুঝ শিশু সন্তান আরিফ মায়ের কোলে কাঁদছে। আকাশের দিকে নির্বাক তাকিয়ে বড় ছেলে মানসিক প্রতিবন্ধী ফারুক। পুরো পরিবারেই শোকের মাতম। একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটিকে হারিয়ে অসহায় পুরো পরিবার।

রোববার দুপুরে অবরোধ চলাকালে অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার হয়ে মারা যাওয়া পরিবহন শ্রমিক বেলাল হোসেনের (৪২) বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে এমন করুণ চিত্র।

২৭ নভেম্বর রাতে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কের গুইমারা উপজেলার হাফছড়িতে সরকারি চালবাহী ট্রাক থামিয়ে পেট্রোল বোমা ছোড়ে অবরোধকারীরা। ওই ঘটনায় ট্রাক চালকের সহকারী বেলাল হোসেনের শরীরের প্রায় পুরো অংশ পুড়ে যায়। চালক এছহাক মিয়াও আহত হন। ঘটনার ছয় দিন পর শনিবার বিকেলে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেলাল হোসেন মারা যান।

সেই গাড়ির চালক এছহাক মিয়া জানান, হামলাকারীদের কাছে প্রাণ ভিক্ষা চেয়েও পাইনি। দুর্বৃত্তরা ট্রাকে আটকে রেখেই দুজনকে জীবন্ত হত্যা করতে চেয়েছিল। এ কেমন রাজনীতি; প্রশ্ন তোলেন ট্রাক চালক।

বেলালের স্ত্রী ফাতেমা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া শিশুসন্তান মারুফের জন্য শীতের জ্যাকেট আর কেনা হবে না। কাজ থেকে ফিরে ছেলের জন্য শীতবস্ত্র নিয়ে আসবে বলে কথা দিয়েছিল তার বাবা।

স্বামীকে পুড়িয়ে হত্যার বিচার চান বেলালের স্ত্রী ফাতেমা। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, অত্যন্ত ভদ্র স্বভাবের ছিলেন বেলাল হোসেন। ট্রাকে হেলপারের পাশাপাশি শ্রমিকের কাজ করতেন তিনি। তার বড় ভাই আকস্মিক মারা গেলে মানবিকতার পরিচয় দিয়ে ভাবিকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন বেলাল। আগের সংসারেও চার ছেলে-মেয়ে ছিল। সবার বড় মেয়েকে বিয়ে দিলেও আরো ছয় সন্তানকে নিয়ে অভাবের মধ্যেও সুখেই কাটছিল তার জীবন। অভাবের কারণে সন্তানদের বেশিদূর পড়াতে পারেননি। বর্তমানে ছোট দুই ছেলে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছে। নিজের জীর্ণ-শীর্ণ ঘরে কষ্ট করে থাকতেন তারা।

এদিকে পরিবারের সদস্য ও গ্রামের প্রতিবেশীরা বেলাল হোসেনের মৃত্যুর জন্য অদূরদর্শী রাজনৈতিক কর্মসূচিকে দায়ী করেছেন। তারা জড়িতদের খুঁজে বের করে কঠিন শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। অবরোধ-হরতালের নামে মানুষ পুড়িয়ে হত্যার তীব্র নিন্দা জানান এবং অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়াতে সরকারের সহায়তা কামনা করেন তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *