চট্টগ্রামরাঙ্গুনিয়া

চা বিক্রেতা থেকে কলেজছাত্র, ওসিকে ফুল দিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ

রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) : মো. মিজানুর রহমান। বাড়ি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার শিলক ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডে। বাবা আব্দুল ওয়াহাব চা দোকানি। মিজানুর রহমান পরিবারের চার বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সবার বড়। বাড়ি শিলক হলেও ছোটবেলায় ২০১৩ সালের দিকে উপজেলার ইছাখালী এলাকার শিক্ষা অফিসের পাশে বড়ুয়া বাবু নামক এক ব্যক্তির চায়ের দোকানে কাজ করতেন মিজানুর রহমান। আর সন্ধ্যার পর পার্শ্ববর্তী ব্যাডমিন্টন খেলার মাঠ পরিস্কার করতেন। আর সেই মাঠে বিভিন্ন সরকারি অফিসের কর্মকর্তারা সন্ধ্যার পর খেলতেন।

একদিন তৎসময়ের রাঙ্গুনিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুল ইসলাম মজুমদার এবং তৎসময়ের রাঙ্গুনিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) বর্তমান রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চন্দন কুমার চক্রবর্তীর সাথে তার দেখা হয়। তখন ইউএনও এবং চন্দন কুমার চক্রবর্তী তার কাছে জানতে চান, সে পড়ালেখা করতে আগ্রহী কিনা এবং তার পড়ালেখায় আগ্রহ আছে শুনে দুইজনই তাকে স্কুলে ভর্তি হতে বলে এবং দুইজনই তাকে কিছু আর্থিক সহায়তা দেন।

পরে উপজেলার ঘাটচেক স্কুলে ভর্তি হতে গেলে কর্তৃপক্ষ তাকে ভর্তি নেয়নি নির্ধারিত অংকের টাকার জন্য। আর তখন মিজানুর রহমান থানায় গিয়ে চন্দন কুমার চক্রবর্তীকে বিষয়টি জানলে তিনি তাকে অফিসে বসিয়ে সেই স্কুলের সাথে যোগাযোগ করেন এবং বলে তুমি এবার যাও তোমার ভর্তি নিয়ে নিবে। ঠিক তা-ই হলো। অন্যদিকে বিভিন্ন শিক্ষা সামগ্রী কিনতে তাকে বিভিন্ন সময় আর্থিক সহায়তাও দেন। আর সেও চায়ের দোকানে কাজের পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে যায়। তবে কিছুদিন পর যখন চন্দন কুমার চক্রবর্তী রাঙ্গুনিয়া থেকে বদলি হয়ে যান তখন থেকে তার সাথে শিশু মিজানুর রহমানের আর যোগাযোগ হয়নি।

অন্যদিকে একই স্কুল থেকে জিপিএ ৩.০০ পেয়ে এসএসসি পাস করেন মিজানুর রহমান। আর পদায়ন হয়ে বদলি হন তৎসময়ের ইউএনও সাইফুল ইসলাম মজুমদারও। পরে ইউএনও হিসেবে আসেন কামাল হোসেন। আর অতীতের এসব বিষয় জেনে কামাল হোসেন পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে উপজেলার দক্ষিণ শিলক এম শাহ আলম চৌধুরী ডিগ্রি কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি করিয়ে দেয় মিজানুর রহমানকে।

জানতে চাইলে রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, সে ছোট একটা বাচ্চা শিশু ছিল, তার পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ ছিল। তাই নিজের দায়িত্ববোধ ও মানবতাবোধ থেকে তাকে সহযোগিতা করেছি। আর সে স্কুলে ভর্তি হয়েছিল, এখনো পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। তখনকার যে মানবিকতা, মূল্যবোধ সেটাতো আর নষ্ট হয়ে যায় নাই এখনো নিশ্চয়ই জাগ্রত আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *