চট্টগ্রাম

দুর্নীতির আঁতুড়ঘর শাহ আমানত বিমানবন্দর

চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রতিটা শাখা অনিয়ম-দুর্নীতির আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে অ্যাভিয়েশন সিকিউরিটি শাখা, এস্টেট শাখা, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং শাখা ও বিমান সংস্থার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের ভয়ংকর চিত্র উঠে এসেছে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের এক প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনের বিষয়ে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক উইং কমান্ডার তাসলিম আহমেদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর দফতরের ওই প্রতিবেদন নজরে আসার পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে যে পাঁচ সুপারিশ করা হয়েছে তা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।’

জানা যায়, চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নানান অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে মাস কয়েক আগে একটি গোপন প্রতিবেদন দেন প্রধানমন্ত্রীর দফতরের পরিচালক-৮ মোহাম্মদ রফিকুল আলম। গোপন ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের ভৌত নিরাপত্তায় নিয়োজিত অ্যাভসেক শাখার নিজস্ব নিরাপত্তা সদস্যরা বিমানবন্দরের বিভিন্ন পয়েন্টে যাত্রীদের কাছ থেকে বকশিশের নামে চাঁদাবাজি করে। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে সোনা চোরাচালান, ইয়াবা পাচার এবং বৈদেশিক মুদ্রা পাচারে সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে। প্রতিবেদনে বিমানবন্দরের এস্টেট শাখার বিরুদ্ধে উঠে আসে গুরুতর অভিযোগ। এ শাখায় কর্মকর্তারা বিমানবন্দরের টার্মিনালের স্পেস ইজারা কিংবা নবায়নে উৎকোচ গ্রহণ, ইজারাদারদের কাছ থেকে মাসোহারা আদায়, টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যোগসাজশের মাধ্যমে আর্থিক সুবিধাগ্রহণসহ নানান অপরাধে যুক্ত। বেবিচক সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং শাখায় উন্নয়ন ও মেরামত কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী সরবরাহ, অদক্ষ প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতে সহায়তা এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে উৎকোচ গ্রহণ করে নিম্নমানের কাজের সহায়তার কথা উঠে এসেছে ওই প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিমানবন্দরে দায়িত্বরত ২০০ আনসার সদস্য যাত্রীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক টিপস আদায়, বিমানবন্দরের ড্রাইভওয়েতে প্রবেশের জন্য যাত্রীদের স্বজনদের কাছ থেকে জনপ্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকা আদায়, ড্রাইভওয়েতে অপেক্ষারত ড্রাইভারদের কাছ থেকে ২০০ টাকা করে আদায়সহ নানান অপরাধে যুক্ত। এবিবিএন সদস্যদের বিরুদ্ধে রয়েছে বিমানবন্দর ও সংলগ্ন এলাকায় ছিনতাই ও চাঁদাবাজির অভিযোগ। এ ছাড়া প্রবাসীদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে মূল্যমান মালামাল ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। বিমানবন্দর ফাঁড়ি পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তারা সোনা চোরাকারবারিদের সহায়তা, মাসোহারার বিনিময়ে চোরাকারবারিদের এজেন্ট ও মালামালের নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছেন। আর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও ফ্লাই দুবাই এয়ারলাইনসের বিরুদ্ধে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা সোনা চোরাচালানিদের সহায়তা, লো-প্রোফাইল যাত্রীদের ভিজিট ভিসার মাধ্যমে মানব পাচারসহ বেশ কিছু অভিযোগ। ওই প্রতিবেদনে পাঁচটি সুপারিশ করা হয়। যার মধ্যে রয়েছে- চিহ্নিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা। রানওয়ে, এপ্রোন ও সমগ্র বিমানবন্দরে যে কোনো গাড়ি বের হওয়ার সময় তল্লাশি করা এবং বিমানবন্দরের যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিয়োজিত জনবলকে নিয়মিত পরিবর্তন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *