রাজনীতি

পিরোজপুরে প্রজন্ম লীগের সভাপতিকে কুপিয়ে জখম, প্রতিবাদ মিছিল

পিরোজপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের সভাপতি ফয়সাল আকনকে (৩২) কুপিয়ে গুরুতর করা হয়েছে। এ ঘটনায় শহরে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে ফয়সালকে কুপিয়ে জখমের প্রতিবাদে শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে শহরে প্রতিবাদ মিছিল হয়। স্থানীয় ৫০-৬০ জনের একটি গ্রুপ ওই মিছিলে হামলার জন্য চেষ্টা করলে শহরে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এর আগে গত শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে পৌরসভার নামাজপুর এলাকায় একদল সন্ত্রাসী হামলা করে কুপিয়ে জখম করে ফয়সালকে।

আহত ফয়সাল আকন মধ্য শহরের নামাজপুর এলাকার মো. মোফাজ্জেল আকনের ছেলে।

আহত ফয়সালের পারিবারিক ও স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, হামলায় আহত ফয়সাল আকন পিরোজপুর-১ আসনের এমপি ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের কর্মী ছিলেন। হামলার সঙ্গে জড়িতরা ওই একই আসনের স্বতন্ত্র ও ঈগল প্রতীকের প্রার্থী একেএম আউয়ালের সমর্থক বলে আহতের স্বজনদের দাবি।

এ ঘটনার বিচারের দাবিতে ওই রাতেই শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ।

পিরোজপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি,তদন্ত) মোহাম্মদ জুলফিকার বলেন, শহরে ছাত্রলীগসহ নৌকার সমর্থকরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মিছিল করেছে। ওই মিছিলের পর প্রতিপক্ষ উত্তেজনা সৃষ্টি করতে চাইলেও তা পারেনি। হামলায় জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য আমাদের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। আসামি গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

হামলায় আহত ফয়সালের বাবা জানান, ওই রাতে ফয়সাল বাড়ি থেকে শহরের উদ্দেশে বের হওয়া মাত্র ওৎ পেতে থাকা ঈগল প্রতীকের সমর্থক সাইদুল ফকির, মিজান সিকদার, সাইদুল ফরাজী ও ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী জামালসহ আরও ১০/১২ জনের একদল সন্ত্রাসী ধারালো দাও, চাইনিজ কুড়াল, জিআই পাইপ ও লোহার রড নিয়ে ফয়সালকে হত্যার উদ্দেশ্যে স্থানীয় ইমরুল কায়েসের দোকানের সামনে গিয়ে উপুর্যপরি কোপাতে থাকে। এতে তার মাথা, গাল, পিঠের নিচের অংশ ও হাতের আঙুলে যখম হয় এবং পেটের ভুরি বের হয়ে যায়। এসময় ফয়সাল মাটিতে লুটিয়ে পড়লে সন্ত্রাসীরা তাকে মৃত ভেবে ফেলে রেখে চলে যায়। ঘটনার পর এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে পিরোজপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় দায়িত্বরত ডাক্তার প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফয়সালকে খুলনা পাঠিয়ে দেন।

জেলা হাসপাতালের ডাক্তার আরিফ হাসান জানান, রোগীর অবস্থা যথেষ্টশংকটাপন্ন। তার মাথা, গাল, পিঠের নিচে থেকে পাকস্থলির কিছু অংশ বের হয়ে আসছে। ডান হাতের পেশী পুরাপুরি কেটে গেছে। বাম হাতের তর্জনীর মাঝখানের অংশটা পুরোপুরি পড়ে গেছে। এতে প্রচুর পরিমাণে রক্তক্ষরণ হয়েছে। আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তাকে খুলনা পাঠানো হয়েছে।

ওই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে পিরোজপুর-১ আসনের এমপি ও সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম তার নিজ ফেসবুকে লিখেছেন, অবিলম্বে অপরাধীদের এবং তাদের গডফাদারদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হয়ে ফয়সালকে নির্বাচনে এজেন্ট করিয়েছিলাম। ফয়সাল নৌকার পক্ষে থাকায় আজ তাকে এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে। এই নিষ্পাপ, উচ্চ শিক্ষিত ফয়সালকে আমি সেদিন অনুরোধ করেছিলাম নৌকার এজেন্ট হতে। বঙ্গবন্ধু কন্যার প্রার্থীর পক্ষে, বঙ্গবন্ধুর নৌকার পক্ষে এজেন্ট হওয়ায় ফয়সালের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *